টঙ্গী ; রাজধানী ঢাকা ও শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুর জেলার সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত টঙ্গীর ১৯ বস্তির লক্ষাধিক গরীব ও ছিন্নমূল মানুষ শীতে কাঁপছে। ভোট আসলে এই ভোট ব্যাংকে প্রার্থীরা এসে লোভনীয় বাক্য দিয়ে ম্যানেজ করে ভোট নিয়ে যায়। ভোটের পরে আর কেউ তাদের খোঁজ নেয় না।
জানা যায়, সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা বস্তিবাসীদের ভোট নিতে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চেয়েছে। ভোট চাইতে গিয়ে প্রার্থীরা বস্তিবাসীদের আত্মীয়ও দাবী করেছেন। অনেকে বস্তিবাসীদের ভোট নিতে বস্তিবাসীদের স্থায়ী পুনর্বাসনের অঙ্গীকার করে সুখ দুঃখে সব সময় পাশে থাকার ওয়াদাও করেছেন। কিন্তু সারাদেশে চলমান প্রচন্ড শীতে বস্তিবাসীদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। বরং সোমবার হাজীর মাজার বস্তির দুই শতাধিক ঘর উচ্ছেদ করে সহস্রাধিক গরীব মানুষদের শিশু সন্তান সহ খোলা আকাশের নীচে নামিয়ে দিয়েছে। নির্বাচনের সময় পুনর্বাসন না করে কোন উচ্ছেদ নয় বলে কথা দিলেও প্রচন্ড শীতের মধ্যে মাথাগুজার ঠাঁই না করে সহস্রাধিক বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে উচ্ছেদ হওয়া গরীব অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষ টঙ্গীর অলিগলি ও নদীর পাড়ে বা ফুটপাতে খালি গায়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। শীতের কারণে খড়কুটো ও পরিত্যক্ত কাগজ জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে হচ্ছে তাদের।
সরেজমিন জানা যায়, টঙ্গীতে ১৯টি বস্তি রয়েছে। এই সকল বস্তিতে লক্ষাধিক ভোটার আছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রায় চার লক্ষাধিক বস্তিবাসী টঙ্গীতে বসবাস করেন। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই অসচ্ছল, অসহায় ও সমাজের নিম্নস্তরের মানুষ। তারা খেয়ে না খেয়ে কোন মতে জীবন যাপন করে। অর্থকষ্টে পড়ে এরা অপরাধ কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ে। বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে তাদের কর্মক্ষম করে গড়ে তোলতে শুধু প্রতিশ্রুতিই আসছে দীর্ঘ সময় ধরে। বিশেষ করে নির্বাচন আসলে ডাকঢোল পিটিয়ে প্রতিশ্রুতি আসে। ভোট গেলে আর কেউ খবর নেয় না।
টঙ্গীর ১৯ বস্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য বস্তিগুলো হচ্ছে টঙ্গী বাজার এলাকার গোহাটা বস্তি, হাজী মাজার বস্তি, হোসেন মার্কেট, কফিল উদ্দিন রোড, এরশাদ নগর বাস্তুহারা বস্তি, নতুন বাজার এলাকার ব্যাংকের মাঠ বস্তি, আমতলি এলাকার কেরানীরটেক বস্তি, রেলওয়ে বস্তি, মাছিমপুর এলাকার জিন্নাতের পেছনের বস্তি, নিশাতনগর এলাকার পেছনের বস্তি, চুড়ি ফ্যাক্টরির বস্তি, তেতুলতলা বস্তি, সিপাই পাড়া বস্তি, নামা বাজার বস্তি, কলাবাগান বস্তি, বেক্সিমকোর পেছনের বস্তি, টঙ্গী মেডিকেলের পেছনের বস্তি, পরানমন্ডলের টেক কাঠালদিয়া বস্তি, আউচপাড়া এলাকার মোল্লা বাজার বালুর মাঠ বস্তি, নোয়াগাও এলাকার বাহার আলীর টেক বস্তি, নেকারবাড়ী বস্তি, বেলতলা বস্তি, সান্ডারপাড়া বস্তি, সাতইশ এলাকার নাজিম ফ্যাশনের পেছনের বস্তি, গুটিয়া বস্তি, ইন্টান্যাশনাল মেডিকেলের পেছনের বস্তি, খৈরতুলের ব্যাংকপাড়া বস্তি অন্যতম।
টঙ্গী হাজী মাজার বস্তির বাসিন্দা ইসমাইল জানান, ভোট আসলে আমরা আত্মীয় হয়ে যাই। ভোট গেলে কোন খবর নেই। শীতে কাঁপছি আমরা কেউ দেখে না।
এরশাদ নগর বস্তির বাসিন্দা কুলসুম বেগম বলেন, ভোট আসলে আমাদের খবর হয়। ভোট গেলে কেউ আসে না।
কেরানীর টেক বস্তির বৃদ্ধ আমির আলী বলেন, শীতে কাঁপলেই কি! ভোটও নেই, ওরাও নেই। তাই আমাদের দেখার কেউ নেই।