বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ভোটের পর থেকেই ক্রমাগত হারে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম। সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা পর্যন্ত। বেড়েছে সব ধরনের ডাল, মসলা, আটা-ময়দা, ডিম, চিনিসহ বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যের দাম। মাছ-গোশতের বাজারে যেন আগুন। ছোট তরকারির চিংড়িও (লইল্লা) প্রতি কেজি আট শ’ টাকার উপরে। অস্বাভাবিক দামে পরিবারের সদস্যদের খাবার জোগাতে অধিকাংশ মানুষের হিমশিম অবস্থা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের পর হতেই বেড়ে চলেছে সব ধরনের চালের দাম। সিদ্ধ চাল সর্বনি¤œ মানের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৫ শ’ টাকা এবং মাঝারি মানের সিদ্ধ চাল বস্তাপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ শ’ টাকা। মাঝারি মানের হাফ সিদ্ধ ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩৯ শ’ টাকা। মাঝারি মানের কাটারিভোগ আতপ চালের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩৭ শ’ ৫০ টাকা থেকে ৪২ শ’ টাকা পর্যন্ত। সর্বনিম্ন মানের ৫০ কেজির আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ২৫ শ’ টাকা বস্তা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভোটের পর হতে গত ১০ দিনে সব ধরনের ডালের দাম বেড়েছে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে মুগডালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২৫ টাকা পর্যন্ত। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায় যা ভোটের আগে ছিল ১৪৫ টাকা। গতকাল খেসারি ডাল ১০৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় যা ভোটের আগে ছিল ৯০ টাকা। প্রতি কেজি ছোলার ডাল ১০০ টাকা, মটর ডাল ৭৪ টাকা এবং মসুর ডালের মধ্যে মোটা জাতের ১১০ টাকা এবং সরু জাতের দেশীয় মসুর ডাল ১৪৪ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে সব ধরনের মসলার দাম। গতকাল প্রতি কেজি এলাচ মানভেদে ২৭ শ’-৩২ শ’ টাকা, দারুচিনি-৪৮০ টাকা, গোলমরিচ আট শ’ টাকা, লবঙ্গ ১৭ শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়।
বেড়েছে রসুনের দামও। গতকাল প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছিল ২৪০ টাকা দরে। কয়েক দিনের ব্যবধানেই পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ টাকা। ভরা মৌসুমেও কমছে না সবজির দাম। গতকালও প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৫২ টাকায়।
সামান্য বেড়েছে চিনির দামও। ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ছয় হাজার ৭৫০ টাকায় এবং খুচরায় কেজি প্রতি ১৩৭ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা ভোটের আগে ছিল কেজিপ্রতি ১৩৫ টাকা।
মাছ-গোশতের দিকে সাধারণ মানুষ তাকাতেও যেন হিমশিম খাচ্ছে। গতকাল চট্টগ্রামের বাজারে গরুর গোশত কেজিপ্রতি ৯ শ’ টাকা এবং হাড়সহ ৭৫০ টাকা দরে, খাসি-১২ শ’ টাকা দরে, প্রতি জোড়া কবুতর সাইজভেদে তিন শ’-চার শ’ টাকা, দেশীয় জাতের মুরগি কেজিপ্রতি ৫৬০ টাকা, প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
মাছের মধ্যে সামুদ্রিক মাছ সাধারণের একেবারেই নাগালের বাইরে। হাতেগোনা অপ্রচলিত ও নিম্নমানের ছাড়া সব ধরনের সামুদ্রিক মাছের দাম কেজিপ্রতি ছয় শ’ টাকার উপরে। লইট্টা মাছও কেজিপ্রতি আড়াই শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। দেশীয় খাল-বিলের মাছের মধ্যে প্রতি কেজি শোল- ৮শ’, শিং-৬শ’, মাগুর-৭শ’, কই- দেশীয় ৮শ’ ফার্মের ৩শ’, তেলাপিয়া ছোট-আড়াই শ’, আইড়-৮শ’, বাটা-৭শ’, কোরাল- ছোট সাইজের ৭শ’, কাতলা- ৩৫০-৪শ’, রুই- সাড়ে ৩শ’ হতে সাড়ে ৪শ’, কালিবাউস-৪শ’, বাগদা-৬শ’-৮শ’, লইল্লা-৮শ’-৮৮০ টাকা, কার্প ৩শ’, মৃগেল ২৮০-৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
এছাড়া ডিমের দামেও স্বস্তি নেই। গতকাল প্রতি ডজন ফার্মের লাল ডিম ১৫০ টাকা, সাদা ডিম-১৪০ টাকা এবং হাঁসের ডিম ২২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। ফলে সাধারণ মানুষের বাজারের হিসাব মিলাতে নাভিশ্বাস উঠছে।
বেসরকারি এক পদস্থ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্য নিয়ে মানুষ যে কত কষ্টে আছে তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ যেন বুঝার নেই। সব মানুষ এখন পুরনো সঞ্চয় ভেঙেই সংসার টানছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।