আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে পারে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মতো উন্মুক্ত রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। নৌকা প্রতীকে প্রার্থী দিলেও নেতাকর্মীরা যেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন, এ বিষয়ে দলের ভেতরে আলাপ-আলোচনা চলছে বলে একাধিক সূত্র ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে।’
দলীয় সূত্র মতে, সদ্য অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তবে দলের নেতাকর্মীরাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে অংশ নিয়েছেন। তবে বিএনপিসহ অনেকে ভোটে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে ৬২টি আসনে ভরাডুবি হয়েছে নৌকার মাঝিদের। দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় অনেক স্থানেই উৎসব ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নির্বাচনটি উন্মুক্ত রাখা হলে কী কী উপকার হবে সেটিও ঘরোয়াভাবে আলোচনা হয়েছে। আমাদের নেত্রী এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। এখন যেসব আলোচনা হচ্ছে দলের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা বলা যায়।
ঢাকা পোস্টকে বলেন, আ.লীগ নেতা
এদিকে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন করতে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের পাশাপাশি অন্যান্যদের জন্যও উন্মুক্ত রাখার চিন্তা করছে আওয়ামী লীগ।
জানা গেছে, বিগত বছর-গুলোয় দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ালে তাকে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হতো এবং তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হতো। এমনকি দল থেকে বহিষ্কারেরও নজির রয়েছে।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের আলাপ-আলোচনা হয়। এদিন সন্ধ্যায় তার কক্ষে অবস্থান করেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কার্যনির্বাহী সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনিসুর রহমানসহ অনেক। সেখানেও আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের পাশাপাশি প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
নির্বাচন যোগ্য ৪৮৫টি তালিকা পেয়েছি। সেই অনুযায়ী কমিশন প্রস্তুত আছে। সিদ্ধান্ত এলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। ইসি সচিবালয় প্রস্তুত আছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ
সেখানে উপস্থিত এক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রতীক না দেওয়ার ব্যাপারে দলের সাধারণ সম্পাদককে বলা হয়েছে। নির্বাচনটি উন্মুক্ত রাখা হলে কী কী উপকার হবে সেটিও ঘরোয়াভাবে আলোচনা হয়েছে। আমাদের নেত্রী এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। এখন যেসব আলোচনা হচ্ছে দলের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা বলা যায়।
উপজেলা নির্বাচনটি জাতীয় নির্বাচনের মতো উন্মুক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, “উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। হলে জানানো হবে। আলোচনা হবে হবে করছে।”
স্থানীয় সরকার (উপজেলা) (সংশোধন) বিল-২০১৫ এ বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুটি ভাইস চেয়ারম্যান (সাধারণ ও সংরক্ষিত) পদের নির্বাচনের জন্য প্রার্থীকে রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনীত অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হবে। আইনটি পাস হওয়ার পর ২০১৭ সালের মার্চে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট হয় উপজেলায়। তারপর থেকে সকল স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দলীয় প্রতীকেই হচ্ছে। তবে ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেই সময়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোনো দলীয় প্রার্থী রাখা হয়নি। তবে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকেই নির্বাচন করেছিল।
এদিকে আজ মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বিকালে আগারগাঁওয়ে ইসি ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছেন, আগামী ১০ মার্চ পবিত্র মাহে রমজান শুরু হবে। কমিশনের অনুমোদন ক্রমে রোজা শুরুর আগেই উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের ভোট হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন যোগ্য হয়েছে ৪৮৫টি উপজেলা পরিষদ। এর তালিকাও পেয়েছি। সেই অনুযায়ী কমিশন প্রস্তুত আছে। কমিশন সিদ্ধান্ত নিলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন তফসিল ঘোষণা হতে পারে। ইসি সচিবালয় প্রস্তুত আছে।