পোস্টার বিতর্কের পর কিশোরগঞ্জে জাতীয় পার্টির মহাসচিবের আসনে শুরু হয়েছে পাল্টাপাল্টি ‘গরম’ বক্তব্য। আওয়ামী লীগ কর্মীদের ‘মূর্খ’ বলার প্রতিক্রিয়ায় এবার জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে ‘রাতের ভোটের রেফারি’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার গোলাম কবির ভূঁইয়া বললেন, ‘আসুন খেলা হবে। শেখ হাসিনা এবার বলে দিয়েছেন, একটা ব্যালটে যদি কেউ টাচ করে, একটা বুলেট ব্যবহার করা হবে।’ তিনি তার এই বক্তব্য ফেসবুকে লাইভও করেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় চুন্নু বলেন ‘গোলাম কবির সুস্থ থাকলে এটা তিনি কোনোভাবেই বলতেন না। সারাদেশে রাতের ভোট কে করেছিল এটা তার জানা উচিত ছিল।’
রোববার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে করিমগঞ্জ উপজেলার ঝাউতলা বাজারে নির্বাচনী পথসভা করছিলেন গোলাম কবির ভূঁইয়া।
ওই সভায় বক্তৃতায় চুন্নুকে উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘ও ভাই এবারো খালি মাঠে খেলতে চান? ২০১৮ সালের মতো রাতের রেফারি হতে চান? পুলিশ আর দফাদারকে দিয়ে রেফারিগিরি করতে চান? এবার কিন্তু রেফারি তাড়াইল করিমগঞ্জের জনগণ। বাঁশিও তাদের হাতে, কার্ডও তাদের হাতে। তারা এবার কার্ড দেখাইয়া দিবে। সময় আসতেছে ৭ তারিখ। দাবি একটাই আপনার কাছে, ভেলকি তো অনেক দেখাইলেন, ৭ তারিখের আগে আর কোনো ভেলকি দেখাইয়েন না। মাঠে থাইকেন, দেখতাম চাই, পায়ের জোর কতটুকু আছে, আর খেলার জোর কতটুকু আছে।’
পথসভায় গোলাম কবির বলেন, ‘তাড়াইল করিমগঞ্জের মানুষের ওপর চুন্নুর বিশ্বাস নাই। তার বিশ্বাস রাতের ভোটের ওপর।’
এ আসনে চুন্নুর জনমত নেই উল্লেখ করে ব্যারিস্টার কবির বলেন, ‘তিনি জাতীয় পার্টির কয়েকটা মানুষ নিয়ে ঘুরতেছেন, কালকে একটা মিটিং হইছে, চেয়ার দিছে ৬০০, মানুষ হইছে ২০০। গাড়ি একটা লইয়া বাইর হইছে, হোন্ডা হইছে ২০টা। এই মানুষগুলো লইয়া এইনো হেইনো যাইতাছে। কোন দিন যে তিনি কি কথা কইবো তার নেতা এরশাদ সাব চলে যায় সিএমএইচ হাসপাতালে, জিএম কাদের চলে যায় ঘরের ভিত্রে, ঘরের ভিতরে গিয়েও খুঁইজ্জা পাওয়া যায় না। আপনারা যে কোন খানে যাইবেন, এই রাস্তাও আপনাদের খোলা নাই। এবার খেলা হবে।’
কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে গোলাম কবির ভূঁইয়া স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে মাঠে আছেন। নির্বাচন কমিশন থেকে তিনি কেটলি প্রতীক পেয়েছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমবিষয়ক সম্পাদক গোলাম কবির শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে একাধিকবার তিনি বিদেশেও সফর করেছেন।
সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে তিনি জাতিসঙ্ঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনে তিনি চুন্নুর অন্যতম শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী।
এ আসনে আওয়ামী লীগের আরো দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। তারা হলেন নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: মাহফুজুল হক (ঈগল) ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এডিসি মেজর (অব.) মো: নাসিমুল হক (কাঁচি)।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপার সাথে সমঝোতার কারণে এ আসনে নৌকার প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয় আওয়ামী লীগ। মুজিবুল হক চুন্নু এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করছেন।
রোববার রাতে চুন্নু জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের নিয়ে করিমগঞ্জ উপজেলা সদরের মোরগ মহল এলাকায় নির্বাচনী পথসভা করেন।
গোলাম কবির ভূঁইয়ার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে, মুজিবুল হক চুন্নু নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘তিনি (গোলাম কবির) সুস্থ থাকলে এরকম বক্তব্য দিতেন না। তিনি কী বলতে চেয়েছেন, এটা কি বুঝে বলেছেন? সারাদেশে কে রাতে ভোট করেছিল, এটা তার জানা উচিত ছিল। এর বাইরে আমি আর কিছু বলতে চাই না।’