জাপা মহাসচিবের নির্বাচনী পোস্টারে ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত’ লেখায় এলাকায় ক্ষোভ

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ- তাড়াইল) আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনয়নে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তবে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য টানানো পোস্টারে মুজিবুল হক নিজেকে ‘জাতীয় পার্টি মনোনীত’ প্রার্থীর পাশাপাশি ‘আওয়ামী লীগ সমর্থিত’ প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এ নিয়ে তার নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র এক প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগও দিয়েছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদ। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে প্রার্থী হন। পরে নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় পার্টির (জাপা) সাথে আওয়ামী লীগের সমঝোতা হয়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপার সাথে সমঝোতার কারণে আসনটিতে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয়ায় এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্রদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মুজিবুল হক চুন্নু।

সে লক্ষ্যে ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়। এরপর থেকে এলাকায় মুজিবুল হকের পোস্টার টানানো হয়। তার পোস্টারের লেখা হয় ‘জাতীয় পার্টির মনোনীত ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংসদ সদস্য প্রার্থী’। শুধু পোস্টার নয় নির্বাচনী লিফলেটেও মুজিবুল হক চুন্নু ব্যবহার করেছেন একই কথা।

বিষয়টি চোখে পড়ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের। এ নিয়ে তারা ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে আসনটিতে আওয়ামী লীগের চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। তারা এ নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন —নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: মাহফুজুল হক (ঈগল), শেখ হাসিনার সাবেক এডিসি মেজর (অব.) মো: নাসিমুল হক (কাঁচি), কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার গোলাম কবীর ভূঁইয়া (কেটলি) ও মো: রুবেল মিয়া (ট্রাক) প্রতীক।

মাহফুজুল হক বলেন, ‘মুজিবুল হক চুন্নু সবসময় বলে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টি বিরোধী দল। তাহলে বিরোধী দল কিভাবে সরকারি দলের সমর্থিত হয়?’

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ–বিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো: এরশাদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘চুন্নু সাহেব আর কত ছ্যাঁচড়ামি করবেন। তাকে কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগ ছাড় দিয়েছে। কিন্তু তাকে নির্বাচনে ভোট দিতে তো আর বলে দেয়া হয়নি। তাহলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তিনি কোন সাহসে লেখেন।’

জাপা প্রার্থীর পোস্টারের বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম কবীর ভূঁইয়া জানান, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মুজিবুল হক আওয়ামী লীগ–সমর্থিত কথাটি পোস্টারে লিখে বিভ্রান্তি তৈরি করছেন। জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে একক নির্বাচন করছে, তাদের প্রার্থীর সংখ্যা আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি। এত বড় বড় কথা বলেন, আবার পোস্টারে কিভাবে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত লেখেন। সে জন্য বিষয়টি নিয়ে তিনি গত বুধবার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, সরকার সমঝোতা করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেও দলের ভোটাররা এটা মেনে নিতে পারছেন না। কারণ, গত ১৫ বছর নৌকার সমর্থন নিয়ে লাঙ্গল বিজয়ী হলেও সংসদ সদস্য মুজিবুল হক নিজের ও জাতীয় পার্টির কিছু নেতাকর্মী ছাড়া কারো কোনো কাজে আসেননি। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও এ আসনে জাতীয় পার্টির এই নেতার কারণে দলের নেতাকর্মীরা বঞ্চিত ও অবহেলিত। তাই এবার আর ছাড় দেয়া হবে না তাকে।

করিমগঞ্জ উপজেলার জয়তা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেন, ‘এ আসনে সমঝোতার কারণে নৌকার প্রার্থী প্রত্যাহার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে আমাদের জ্বালাপোড়া হচ্ছে। তবে আমাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দেয়ার অধিকার রয়েছে। এখন মুজিবুল হক চুল্লু তার পোস্টারে আওয়ামী লীগ সমর্থিত লিখে আমাদের কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছে। বিষয়টা আমরা মেনে নিতে পারছি না। চুন্নুর এই পোস্টার প্রত্যাহার করা উচিত। ক্ষমা চাওয়া উচিত ‘

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ–বিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো: এরশাদ উদ্দিন বলেন, উনি (চুন্নু) পোস্টারে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত কথা লিখতে পারেন না।

একই মত নৌকার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা নাসিরুল ইসলাম খানের। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির সাথে সমঝোতা হওয়ায় মুজিবুল হককে এ আসনে ছাড় দেয়া হয়েছে, তাই বলে সমর্থন দেয়া হয়নি। কাজেই পোস্টারে ‘আওয়ামী লীগ–সমর্থিত’ লেখাটা অন্যায় হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে মুজিবুল হকের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি, তবে করিমগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো: দেলোয়ার হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ২৬টি আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছে এবং ওই আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়েছে। এটা কি সমর্থন দেয়া নয়? সমর্থন ছাড়া কি ছাড় দেয়া হয়েছে? দেশবাসী জানে এটা। শুধু করিমগঞ্জ তাড়াইলের আওয়ামী লীগের লোকজন এটা বুঝতেছে না। এদেরকে জাতীয় রাজনীতি আরো বুঝতে হবে।’

এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, মুজিবুল হকের পোস্টারের ব্যাপারে একজন প্রার্থী অভিযোগ করেছেন। যেহেতু এটা দলীয় বিষয়, তাই এ বিষয়ে করার কিছু নেই। অভিযোগকারী ব্যক্তিকে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত আবেদন করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *