দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল বাতিল, সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনসহ একদফা দাবিতে বিএনপি- জামায়াতসহ বিরোধীদল ও জোটের সকাল- সন্ধ্যা হরতাল মঙ্গলবার চলছে। ১২ ঘণ্টার হরতাল মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যায ৬টা পর্যন্ত চলবে।
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালের সমর্থনে আগের রাতে রাজধানীসহ সারাদেশে মশাল মিছিল করেছে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীরা।
এদিকে সোমবার দুপুরে ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের আইন-আদালত, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, কোর্ট-কাচারি, বিচার-আচার সবকিছুই আওয়ামী মাফিয়া সরকারের হাতে বন্দী। বিচার ব্যবস্থা আর আওয়ামী লীগ একাকার হয়ে গেছে। পৃথক কোনো সত্বা নেই।
রিজভী বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের সম্পূর্ণ মিথ্যা সাজানো মামলায় জেলে পুরে এবং সারাদেশে বাড়ি-ঘর ছাড়া করে তাড়িয়ে বেড়ানোর গোমর ফাঁস করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। গতকাল একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, সিট ভাগাভাগির উদ্ভট তামাশার নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন-কন্টকমুক্ত করার জন্যই বিএনপির ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে জেলে রাখা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমরা চিন্তা ভাবনা করেই এই কাজ করেছি। তাদেরকে জেলে না ভরলে দেশ অচল হয়ে যেতো। হরতালের দিন গাড়ি চলতো না।
তিনি বলেন, ড. আবদুর রাজ্জাক সাহেব আরো বলেছেন, ‘বিএনপিকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল তারা নির্বাচনে আসলে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া হবে। শুধু পিছিয়ে দেয়া নয়, বলা হয়েছে, সবাইকে জেল থেকে ছেড়ে দেয়া হবে। এমনকি একরাতে সব নেতাকে জেল থেকে মুক্তির প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি রাজি হয়নি।’
এতক্ষণে ‘অরিন্দম কহিলা বিষাদের মতো’ কৃষিমন্ত্রীর এই হরষের স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা করে পুলিশি তাণ্ডব-হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে চলমান যত সহিংসতা, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, হুলিয়া, হত্যা, বিএনপিসহ বিরোধীদলের বাড়ি-ঘরে হামলা-তল্লাশি, ভাংচুর, গৃহছাড়া, আটক বানিজ্য সবকিছু শেখ হাসিনার পূর্ব পরিকল্পিত।
শেষ পর্যন্ত এই প্রভাবশালী মন্ত্রী হাটে হাঁড়ি ভেঙে স্বীকার করলেন যে, দেশে কোনো আইন নাই। সব শেখ হাসিনার ইশারাই চলছে।
গত ১৫ নভেম্বর রাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২৪ সালের জানুয়ারি ৭ তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ২৯ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। গৃহপালিত পার্টি হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আসন ভাগাভাগি করে ২৬টি আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৪ দলকে ৭টি এবং অন্যান্য দলগুলোকে ৭ আসন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৭ ডিসেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। তবে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশসহ জনপ্রিয় দলগুলো নির্বাচন নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছ হবে না এমন প্রশ্ন তুলে অংশ নেয়নি।
২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে হামলা হওয়ার পর থেকেই বিএনপি ইতোমধ্যে ৩ দফায় ৪ দিনের হরতাল এবং ১১ দফায় ২০ দিনের অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। কর্মসূচি একই হলেও আলাদাভাবে পালন করে যাচ্ছে বিরোধী দল গুলো।