ভারতকে বিদায় করে যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ

Slider খেলা

বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলোতে নকআউট পর্বে অনেকবারই দেখা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ও ভারতের। ২০২০ যুব ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল বাদ দিলে বাকি সময়গুলোতে বাংলাদেশের জন্য শেষটা হয়েছে হতাশার। তবে এবার আর কোনো আক্ষেপের গল্প নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে দুবাইয়ের মাটিতে ভারত ‘জুজু’ কাটাল বাংলাদেশের যুবারা।

মারুফ মৃধার বিধ্বংসী বোলিংয়ের পর আরিফুলের ৯০ বলে ৯৪ রানের অনবদ্য ইনিংসে ভর করে টুর্নামেন্টটির বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতের বিপক্ষে ৪ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে লাল-সবুজের দল। সেই সঙ্গে চলমান আসরে অপরাজিত থেকে ফাইনালে পৌঁছে গেল মাহফুজুর রহমান রাব্বির দল। আগামী রোববারের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ আরেক সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে চমকে দেওয়া সংযুক্ত আরব আমিরাত।

এ নিয়ে দ্বিতীয়বার যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের আসরে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে যায় টিম টাইগার্স। এবার প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ বাংলাদেশের সামনে।

দুবাইয়ের আইসিসি একাডেমি মাঠে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে টাইগার পেসার মারুফ মৃধার বোলিং তাণ্ডবে ৪২ ওভার ৪ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৮৮ রানেই থেমেছিল ভারতের ইনিংস। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬২ রান করেছেন আভিষেক। আর বাংলাদেশের হয়ে ৪১ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন মারুফ।

হাতের নাগালে থাকা লক্ষ্য তাড়ায় দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশের যুবারা।ইনিংসের প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। গোল্ডেন ডাক হয়ে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার জিশান আলম। এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে রিজওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস গড়ার চেষ্টায় ছিলেন আসরে দারুণ ফর্মে থাকা আশিকুর রহমান শিবলি। তাদের জুটি থেকে আসে ১৯ রান।

ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে স্রেফ আত্মাহুতি দেন রিজওয়ান। নামান তিওয়ারির বলে কাভারে শচীন দাসকে ক্যাচ প্রাকটিচ করিয়ে সাজঘরে ফেরেন টাইগার এই ব্যাটার। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১৯ বলে ১৩ রান। এরপর সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা আসে শিবলির দুঃখজনক রানআউটে। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান শিবলি আজ রানআউট হয়ে ফেরার আগে করেন ২২ বলে ৭ রান।
ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট আরিফুল ও আহরারের অনবদ্য জুটি।

এমন অবস্থা থেকে দলকে টেনে তুলতে হতো কাউকে। যে কাজটা দক্ষতার সঙ্গে করেছেন মূলত আরিফুল ইসলাম। আহরার আমিনকে সঙ্গে নিয়ে ১৩৮ রানের মহামূল্যবান জুটি গড়েন। চলতি আসরে এটিই সর্বোচ্চ রানের জুটি। আরিফুল নিজেও ছিলেন সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে। বড় শট খেলতে গিয়ে ৯৪ রানের মাথায় কাটা পড়েন শেষপর্যন্ত।

তবে আরিফুল নিজে ৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করলেও দলকে জয় থেকে মাত্র ১৭ রান দূরত্বে রেখে ফিরেছেন। টাইগার এই ব্যাটারের বিদায়ের পর দ্রুত বেশ কয়েকটি উইকেট হারিয়ে ফের এলোমেলো মনে হচ্ছিল বাংলাদেশকে। তবে ততক্ষণে জয়টা কেবল সময়ের অপেক্ষা ছিল টিম টাইগার্সের। শেষ পর্যন্ত ৪২ দশমিক ৫ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দুবাইয়ের ভেজা উইকেটে সুবিধা করতে পারেনি ভারত। উল্টো নতুন বলে সেটি ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন মারুফ মৃধা। এই পেসারের তাণ্ডবে তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেছে ভারতীয় টপ অর্ডার। শুরুটা করেন আদার্শকে দিয়ে। ইনিংসের প্রথম ওভারেই দুর্দান্ত এই ইনসুইংয়ে পরাস্ত করেন ভারতীয় এই ওপেনারকে।

নিজের পরের ওভারে বোলিংয়ে ফিরে আবারও ভারতীয় শিবিরে আঘাত হানেন মারুফ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলটি লেগ স্টামের ওপর ফুল লেন্থে করেছিলেন মারুফ। সেখানে ফ্লিক করতে গিয়ে ডিফ ফাইন লেগে ধরা পড়েন আর্শিন। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে মোটে ১ রান। নিজের চতুর্থ আর ইনিংসের সপ্তম ওভারে এসে আরও একবার মারুফ ‘শো’ দেখেছেন ক্রিকেট ভক্তরা! তৃতীয় বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে খানিকটা খাটো লেন্থে করেছিলেন মারুফ। জায়গায় দাঁড়িয়ে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন উদয়। ১০ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।

এরপর শচিন দাস ও প্রিয়াংশুর ভালো শুরু পেয়েছিলেন। কিন্তু উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। শচিন ১৬ ও প্রিয়াংশু ১৯ রান করে ফিরেছেন। আরভেলি অভানিষ সাতে নেমে ডাক খেয়ে ফিরলে ৬১ রান তুলতেই শুরুর ৬ উইকেট হারায় ভারত। এরপর খানিকটা প্রতিরোধ গড়েন মুসের ও অভিষেক। সপ্তম উইকেট জুটিতে এই দুইজন মিলে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা চালান। মুসের ৫০ রান করে আউট হলে ভাঙে ৮৪ রানের জুটি। আর অভিষেক ফিরেছেন ৬২ রান করে। তার বিদায়ের পর আর বেশিক্ষণ টিকেনি ভারতের ইনিংস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *