যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের নিজ জেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয়ী করার লক্ষ্যে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী যুবলীগ। যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে এই নির্দেশ রয়েছে ডা. খালেদ শওকত আলীর প্রতিও। কিন্তু তিনি নিজেই শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জানা যায়, আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের নির্দেশে গত ৮ ডিসেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয়ী করার লক্ষ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়েছে। গঠিত ওই কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, কো-চেয়ারম্যান হিসেবে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মইনুল হোসেন খান নিখিল ও সদস্যসচিব হিসেবে যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মতিউর রহমান বাদশা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য দায়িত্ব পালন করবেন। যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে ওই কমিটির ৫ নম্বর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা ডা. খালেদ শওকত আলীর।
এদিকে, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা মার্কার প্রার্থী হিসেবে আসনটি (নড়িয়া-সখিপুর) থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন এ কে এম এনামুল হক শামীম। বিজয়ী হয়ে তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর আগে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. খালেদ শওকত আলীর বাবা প্রয়াত কর্নেল (অব.) শওকত আলী শরীয়তপুর-২ আসন থেকে বারবার নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে তিনি ছিলেন ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত। একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশা করে না পেয়ে এবার ডা. খালেদ শওকত আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিলে ত্রুটিপূর্ণ স্বাক্ষরের অভিযোগে তার মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেছিলেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। এরপর নির্বাচন কমিশনের আপিল বিভাগে আবেদন করলে তার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করার দিন ওই রাতে নড়িয়াতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ডা. খালেদ শওকত আলীর সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে কেন্দ্র থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. খালেদ শওকত আলী নিজেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় স্থানীয় যুবলীগসহ নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা কোন দিকে অবস্থান নেবেন সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও শরীয়তপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ডা. খালেদ শওকত আলী ঢাকা পোস্টের প্রতিনিধিকে আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
কিন্তু আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের মোবাইল নম্বরটি বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয়ী করার লক্ষ্যে গঠিত কমিটির সদস্যসচিব ও যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মতিউর রহমান বাদশা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী করার লক্ষ্যে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তা মূলত কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ও দুই মহানগরী নিয়ে গঠিত। এই কমিটির আলোকে সাব-কমিটি হবে। তবে যুবলীগের নেতাদের মধ্যে ৩-৪ জন প্রার্থী রয়েছেন, যারা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয়ী করার লক্ষ্যে গঠিত কমিটিতেও আছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সঙ্গে কথা বলেছি। যেহেতু এমন ৩-৪ জন জন প্রার্থী রয়েছেন, সেহেতু তিনি বিষয়টি নিয়ে নির্দেশনা দেবেন। যদি তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের তারিখ শেষেও প্রার্থী হিসেবে বহাল থাকেন, তবে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।