প্রমাণিত হয়েছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর কেন সর্বজনীন অনাস্থা ও বিশ্বাসহীনতা বিরাজমান এবং সর্বাঙ্গীনভাবে পক্ষপাতদুষ্ট এই কমিশনের অধীনে কেন কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে দলটি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি একটি নজিরবিহীন ও গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে যেন ১৮ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণের আগ পর্যন্ত ভোটের প্রচার ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি তথা সভা-সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি না দেয়া হয়।
আরো বলা হয়েছে, ‘৭ জানুয়ারি একটি তথাকথিত নির্বাচনের নামে, ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে ডামি নির্বাচন আয়োজনের যে অপপ্রয়াস, সেটিকে পৃষ্ঠপোষকতা করতেই অথর্ব ও অযোগ্য নির্বাচন কমিশন জনবিদ্বেষী সিদ্ধান্তটি নিয়েছে। প্রকারান্তরে এটি আবারো প্রমাণিত হয়েছে যে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর কেন সর্বজনীন অনাস্থা ও বিশ্বাসহীনতা বিরাজমান এবং সর্বাঙ্গীনভাবে পক্ষপাতদুষ্ট এই কমিশনের অধীনে কেন কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা ফেয়ার ইলেকশন সম্ভব নয়।’
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে, জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধের নব্য অপতৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি ও নিন্দা জানাচ্ছি। গণতান্ত্রিক মত প্রকাশের অধিকারকে রুদ্ধ করার এই অশুভ উদ্যোগ বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক, অর্থনীতিক ও কূটনীতিক সঙ্কটকে আরো ঘনীভূত করে তুলবে।
দেশের মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে বিএনপির চলমান শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলন একটি সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। সভা-সমাবেশ ব্যাহত করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও দাবি আদায়ের সংগ্রামের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছে নির্বাচন কমিশন, আমরা আশা করছি, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তারা এটি প্রত্যাহার করবেন।
কারসাজির মাধ্যমে ভোটারবিহীন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন তথাকথিত নির্বাচনে, পূর্বনির্ধারিত ফলাফল ঘোষণার লক্ষ্যে, নামস্বর্বস্ব নানা দলের সাথে যেভাবে আসন নিয়ে ভাগ-বাটোয়ারা করছে আওয়ামী লীগ, একতরফা সেই নির্বাচন আয়োজনের নৈতিক, সাংবিধানিক ও আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। আওয়ামী লীগ ও রাষ্ট্রযন্ত্রের পূর্বনির্ধারিত ফলাফলের এই নির্বাচনী অপপ্রয়াসকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।
ভোটে অংশগ্রহণ করা বা না করা দু’টি সিদ্ধান্তই দেশের প্রতিটি ভোটার ও রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। গণতান্ত্রিক বিশ্বের সকল দেশে, সকল সমাজে, ব্যক্তিগত ও দলীয় এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো হয়, সেটিই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের বৃহত্তম ও জনপ্রিয়তম রাজনৈতিক দল হিসেবে, জনগণের সমর্থনকে শক্তি হিসেবে ধারণ করে, বিএনপি কখনোই নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে নয়। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে সেটিতে বিএনপি’র বিপুল বিজয় অনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী, ইনশা আল্লাহ।
এটি আজ স্পষ্ট, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের কলঙ্কিত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে, ২০২৪ সালেও প্রহসনমূলক নির্বাচনের ছক এঁকেছে আওয়ামী লীগ। জনগণের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ভোটের আকাঙ্ক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক এই সমঝোতা-ভিত্তিক প্রকল্পকে, সংজ্ঞাগতভাবে নির্বাচন বলে অভিহিত করা যায় না।
রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বারা সংঘটিত চলমান সর্বগ্রাসী সহিংসতা ও বিভাজিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, যে নির্বাচনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক বা অংশগ্রহণমূলক করার ন্যূনতম পরিবেশও সৃষ্টি করেনি নির্বাচন কমিশন, জাতির সাথে প্রতারণামূলক সেই উদ্যোগে ১৬০০ কোটি টাকা ব্যয় করে নির্বাচন কমিশন কি অর্জন করতে চাচ্ছে, সেটি নিয়েও আজ জনমনে প্রশ্ন রয়েছে।
ফ্যাসিবাদের কবলে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনে পরিণত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছ থেকে সম্ভাব্য সকল সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে প্রতিটি দিন ও প্রতিটি মুহূর্তে, সর্বাঙ্গীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ। আওয়ামী লীগ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের চিহ্নিত অংশের বহুমাত্রিক হামলা-মামলা, জেল-জুলুম, আঘাত-নিপীড়নে আজ বিএনপি’র সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ন্যূনতম নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার নেই।
এরই মাঝে, সকল গণতন্ত্রমনা রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলন পরিচালনা করছে। গণমানুষের প্রেরণায়, তাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে, পরিকল্পিত ভাগ-বাটোয়ারার নির্বাচনকে বর্জন করেছে বিএনপিসহ ৬৩টি রাজনৈতিক দল। ১২ কোটি ভোটারের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে, আমাদের এই শান্তিপূর্ণ ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে, আরো বেগবান হবে।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই প্রতিজ্ঞায় আমাদের প্রেরণা যোগাচ্ছে জনগণের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা ও অভূতপূর্ব সমর্থন, তথা সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি। ডামি নির্বাচন বর্জনকারী প্রতিটি দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলের একটিই লক্ষ্য, সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে হলেও, জনগণকে সাথে নিয়ে, আমরা শিগগিরই জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব ইনশা আল্লাহ।