টঙ্গী( গাজীপুর) প্রতিনিধি: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট সাত জানুয়ারী। ১৮ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হবে। কিন্তু ইতোমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রায় প্রচারণার আদলে গণসংযোগ করছেন। গাজীপুর-২ আসনের টঙ্গীতে দুই জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বাড়ি হওয়ায় এই আসনের সকল প্রার্থী যেন টঙ্গী ছাড়ছেনই না। চষে বেড়াচ্ছেন টঙ্গীর ১৫ টি ওয়ার্ড। গণসংযোগে ঘটছেও একাধিক বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আর আচরণ বিধি প্রতিপালনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে কালের কন্ঠ কে জানিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুর-২ আসন সদর উপজেলার ১৯টি ও টঙ্গীর ১৫টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। সাত লাখের মত ভোটের মধ্যে সদর ও টঙ্গী প্রায় সমানে সমান ভোট। এই আসনে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকলেও আলোচনায় আছেন তিন জন। তারা হলেন টঙ্গীর নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এবং বর্তমান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজীপুর মহানগর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল ইসলাম। সদরে আছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন। গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সরাসরি স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিনের পক্ষে গণসংযোগ করছেন নিয়মিত। তবে জাহাঙ্গীর আলম একাধিক সভায় অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের সাইফুল ইসলামের সাথেও ছিলেন।
আলোচিত তিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে রাসেল ও সাইফুল টঙ্গীর বাসিন্দা। টঙ্গীর অর্ধেক ভোটে দুই জন প্রার্থী থাকায় প্রতিদিনই টঙ্গীতে দুই প্রার্থীর গণসংযোগ বেশী। টঙ্গীতে দুই জন প্রার্থী থাকায় সদরের প্রার্থী এখনো টঙ্গীতে আনুষ্ঠানিকভাবে আসেননি। বর্তমানে টঙ্গীতে রাসেল ও সাইফুল নিয়মিত রাত-দিন গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহিদ আহসান রাসেল প্রতিদিন সকালে টঙ্গী থেকে গণসংযোগ শুরু করে পুরো নির্বাচনী এলাকায় অসংখ্য সভা ও উঠান বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। টঙ্গীতে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিমন্ত্রীর চাচা গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি। তিনি টঙ্গী আওয়ামীলীগ অফিস ও প্রতিমন্ত্রীর বাসায় নিয়মিত বৈঠক করছেন। প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন স্কুল কলেজ মাদরাসা সরকারি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সভা করছেন। জানা গেছে, নৌকা প্রতীকের প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র কমিটি গঠন ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
টঙ্গীর স্বতন্ত্র প্রার্থী ও গাজীপুর মহানগর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল ইসলাম তার বাড়ির চারিদিকে টঙ্গীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাত-দিন গণসংযোগ করছেন। তিনি রাস্তাঘাট বিপনি-বিতান, আবাসিক এলাকা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বস্তি এলাকা সহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করছেন। তিনি টঙ্গীর ৪৩ থেকে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত মোট ১৫ টি ওয়ার্ডে নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। ইতোমধ্যে আগুনে পুঁড়ে যাওয়া টঙ্গীতে চারটি দোকান নিজে মেরামত করে দিয়েছেন। তিনি নির্বাচনের আগে নিজের অর্থায়নে তৈরী করে দেয়া প্রায় একশত গরীব ও অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। তিনি টঙ্গী এলাকার ভোট কেন্দ্র গুলোতে কেন্দ্র কমিটি গঠনের কাজ করছেন।
এদিকে টঙ্গী এলাকায় প্রার্থীদের গণসংযোগে একাধিক বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থনে অনুষ্ঠিত দুটি সভায় মারামারির ঘটনা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলামের গণসংযোগে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বাঁধা দেয়ার অভিযোগও উঠেছে। ইতোমধ্যে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলকে আচরণ বিধি লংঘনের অভিযোগে শোকজও করেছিল নির্বাচন কমিশন।
গণসংযোগের আদলে প্রচারণায় আচরণ বিধি লংঘন হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে গাজীপুর জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, আচরণ বিধি প্রতিপালন করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আমাদের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের একাধিক টিম কাজ করছে। যেখানেই আচরণ বিধি লংঘনের ঘটনা ঘটছে সেখানেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গতকাল রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিনকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের অভিযান চলছে।