অবশেষে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে চালু হলো বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করা হয়।
‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নামে প্রথম ট্রেন কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে এই ট্রেন যাত্রা শুরু করে। কক্সবাজারে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো: হুমায়ুন কবীর।
একই দিনে রাত ১০টার দিকে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকেও উদ্বোধন হবে ট্রেনটির। ওই সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের মহা-পরিচালক কামরুল আহসান উপস্থিত থেকে কক্সবাজারগামী যাত্রিদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
রেল সচিব ড. হুমায়ুন কবির জানান, এই ট্রেন চলাচলের মধ্য দিয়ে কক্সবাজার ঢাকার সাথে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। পর্যটন এবং যাত্রী সেবার কথা মাথায় রেখে কক্সবাজারে রেল যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই পথে আরো ট্রেন সংযুক্ত করা হবে। প্রথম দিন ২০টি বগি নিয়ে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ১০২০ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা করেছে।
রেলওয়ে সূত্রে আরো জানা গেছে, কক্সবাজার এক্সপ্রেসে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন ছাড়বে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে। চট্টগ্রামে এসে পৌঁছাবে রাত ৩টা ৪০ মিনিটে। ২০ মিনিট যাত্রা বিরতি দিয়ে রাত ৪টার দিকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে ট্রেনটি। কক্সবাজারে পৌঁছাবে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে। অর্থাৎ রাজধানী থেকে পর্যটন শহরে যেতে সময় লাগবে ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিট।
অন্যদিকে, কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ট্রেন ছাড়বে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে। এই ট্রেন চট্টগ্রামে আসবে বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে। আর ঢাকায় পৌঁছবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে।
কক্সবাজার এক্সপ্রেসের প্রথম যাত্রী হতে পেরে উচ্ছাসিত যাত্রী। তারা জানান, কক্সবাজারে ট্রেন সার্ভিস চালু হওয়ায় পর্যটনের আরো গুরুত্ব বেড়ে গেল। যোগাযোগের ক্ষেত্রে পর্যটকদের কক্সবাজার আগমন আরো আরামদায়ক হবে বলে মনে করেন যাত্রীরা।
জানা যায়, ট্রেন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সাতকানিয়ায় নির্মিত চারটি সেতু ট্রেন ট্রায়ালের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে। কক্সবাজার স্টেশনে পদায়ন করা হয়েছে একজন ইনচার্জসহ মোট চারজন স্টেশন মাস্টারকে। এছাড়া বাড়ানো হয়েছে প্রয়োজনীয় লোকবল।
ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তায় ১০ জন রেলওয়ে পুলিশ নিয়োজিত থাকবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানা পুলিশ ইনচার্জ এসএম শহিদুল ইসলাম।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা। এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ১ হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) ভাড়া ২ হাজার ৩৮০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ৩৮৬ টাকা, এসি সিটের ৪৬৬ এবং এসি বার্থের ৬৯৬ টাকা।
শনিবার (১১ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী-কক্সবাজার রেল পথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে রেল নেটওয়ার্কে ৪৮তম জেলা হিসেবে যুক্ত হয় কক্সবাজার জেলা।
কক্সবাজারে নির্মাণ করা হয়েছে আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন। দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের পরিচালক মো: সুবক্তগীন জানান, ছয়তলার এই স্টেশনে রয়েছে চলন্ত সিঁড়ি, মালামাল রাখার লকার, হোটেল, রেস্তোরাঁ, শপিংমলসহ আধুনিক সব সুবিধা। ৪৬ হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতা সম্বলিত স্টেশনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এতে আছে কনভেনশন হল, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথ, এটিএম বুথ, এমনকি প্রার্থনার স্থানও। স্টেশনে ফুড কোর্ট, হোটেল ও শপিং কমপ্লেক্সের বিষয়টি বাইরের অ্যাজেন্সি দ্বারা টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে।
দোহাজারী-কক্সবাজার ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১০ শুরু হয়ে ২০১৩ সালে শেষ হবার কথা ছিল। তবে, ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল একনেকে অনুমোদিত হয় এবং এ লাইনে ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। কিন্তু জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে সংশোধিত প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকায়। এই বাজেটে এডিবি ঋণ দেয় ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা আর বাকি চার হাজার ৯১৯ কোটি সাত লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে।
একনেক অনুমোদনের পর, প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০১০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন ধরা হয়। এ রেলপথ নির্মাণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় এক হাজার ৩৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে ঠিকাদারকে বুঝিয়ে দিতে বিলম্ব হয়। প্রকল্পের ১৬৫ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চল ডি-রিজার্ভকরণসহ প্রকল্পে ব্যবহারে অনুমতি পেতে কালক্ষেপণ হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সবকাজ শেষ হতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
কক্সবাজারের সাথে শুধু ঢাকা নয়, পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গের সাথেও এ রেলপথ যুক্ত হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবির।