মাসুদ রানা সরকার, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি ঃ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী ডামাডোল আর বিরোধীদের চলমান হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির সুযোগে বগুড়ার শেরপুরে আলুবীজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।তারা কৃষকদের জিম্মি করে নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতিবস্তা বীজআলু ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা বেশি নিয়ে বিক্রি করছেন। এভাবে ইচ্ছেমাফিক দামে আলুবীজ বিক্রি করে ওই সিন্ডিকেট চক্রটি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।এদিকে স্থানীয় বাজারে আলুবীজের কৃত্রিম সংকট থাকায় ডিলার ও ব্যবসায়ীদের কাছে বারবার ধরণা দিয়েও বীজ মিলছে না। তাই কৃষকরা তাদের জমি তৈরি করেও বীজের অভাবে রোপণ করতে পারছেন না। চাহিদা অনুযায়ী মানসম্মত বীজ না পাওয়ায় তাদের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় আলু চাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন এই উপজেলার আলু চাষিরা।স্থানীয় কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে বীজ লাগে দেড় মেট্রিকটন। সে অনুযায়ী এই উপজেলায় বীজের প্রয়োজন সাড়ে চার হাজার টন। কিন্তু বরাদ্দ মিলেছে অর্ধেকেরও কম। আর এসব বীজ বিক্রির জন্য জন্য ৪৫ জন ডিলার রয়েছেন। এরমধ্যে ডিএডিসির ১৮ জন, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের আটজন ও অন্যান্য কোম্পানির ১৯ জন।অনুসন্ধানে জানা যায়, ভালো ফলন পাওয়ার আশায় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক সিড অ্যান্ড এগ্রো এন্টারপ্রাইজের আলুবীজের দিকে কৃষক ঝুঁকে পড়েছেন। তাই সরকারি বিএডিসি’র আলুবীজের চাহিদা কম থাকায় এই বীজ উত্তোলন করছেন না ডিলাররা। এমন পরিস্থিতে ব্র্যাকসহ অন্যান্য কাম্পানির বীজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন ডিলার ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।তাই স্থানীয় বাজারে আলুবীজ পাওয়া যাচ্ছে না। সিন্ডিকেটের কবজায় চলে গেলে ওইসব কোম্পানির আলুবীজ। ফলে ডিলার ও ব্যবসায়ীদের দোকানে দোকানে ঘুরেও বীজ পাচ্ছেন না চাষিরা। তবে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দিলেই মিলছে তাদের কাঙ্খিত আলুবীজ। ফলে আলু চাষের পরিবর্তে অন্য ফসল চাষের কথাও ভাবছেন তারা।উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের মামুরশাহী গ্রামের আলহাজ শফিকুল ইসলাম, কুসুম্বী ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের সেলিম উদ্দিন,সীমাবাড়ী ইউনিয়নের নাকুয়া গ্রামের কাজেমুদ্দিন শেখের পু্ত্র মো:শফিকুল ইসলাম শেখসহ একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, ব্র্যাকের ৪০ কেজি ওজনের বীজআলুর বস্তা বি-গ্রেড ২ হাজার ৫২০ টাকা ও এ-গ্রেড ২ হাজার ৬৪০ টাকা বিক্রি করার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ১০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। অর্থাৎ বস্তায় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা বেশি। এরপরও চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না আলুর বীজ। তারা আরো জানান, বেশি দামে বীজ কেনার কারণে এবার একর প্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি খরচ পড়বে। উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে। তাই আলু তোলার সময় ন্যায্যমূল্য না পেলে কৃষক ক্ষতির মুখে পড়বেন বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, বিএডিসিসহ বেসরকারি কোম্পানির বিভিন্ন ডিলাররা বীজ বিক্রির ওপর কমিশন পান। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তেমন কোনো মনিটরিং না থাকার সুযোগ নিয়ে মুনাফাখোর ওই সিন্ডিকেট চক্রটি পরিকল্পিতভাবে বাজারে আলুবীজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে বলে দাবি তাদের।জানতে চাইলে শহরের খন্দকারপাড়াস্থ ব্র্যাকের ডিলার ফিরোজ আলী মাস্টার বীজ সংকটের কথা জানিয়ে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী এই উপজেলায় বীজের বরাদ্দ দেওয়া হয় না। তাই প্রতিবছরই আলুবীজের সংকট থাকেই। এছাড়া বীজের দাম বাড়ার পেছনে সাব-ডিলারদের দায়ি করে বলেন, প্রত্যেক বীজ ডিলার আবার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সাব-ডিলার (বীজ বিক্রেতা) নিয়োগ দিয়েছেন। তারা আগাম টাকা ও বুকিং দিয়ে আলুবীজ নিচ্ছেন।মূলত তারাই কোম্পানির নির্ধারিত দামের চেয়ে বে কর্মকর্তা ফারজানা আকতার এ প্রসঙ্গে বলেন, এখানে বীজের কোনো সংকট নেই। সময়মতো সব কৃষকই বীজ পাবেন। তাই বীজের কারণে আলু চাষ ব্যাহত হবে না বলে দাবি করেন তিনি। তবে এব্যপারে দূত ব্যবস্হা নেওয়া হবে বলে হুশিয়ার করে জানান এক সরকারি কৃষি কর্মকর্তা(নাম প্রকাশ অনুচ্ছিক)।