শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের পথেই হাঁটছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে নানা নাটকীয়তার মধ্যেই গতকাল থেকে দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করেছে দলটি। রাজধানীর বনানীর জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে প্রথম দিন ফরম বিক্রি হয়েছে ৫৫৭টি। আজো মনোনয়নপত্র বিক্রি চলবে। প্রথম দিনই দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) এবং পার্টির প্রধান উপদেষ্টা ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ।
দলীয় সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করছেন শীর্ষ নেতারা। তার সাথে দেখা করে আসন বাড়ানোসহ আরো কিছু দাবি জানাবেন জাপা নেতারা। কিন্তু এখনো সেভাবে সাড়া পাননি তারা। জাপা আশঙ্কা করছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তৃণমূল বিএনপিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এমনকি আসন্ন নির্বাচনে জাপাকে বাদ দিয়ে তৃণমূল বিএনপিকেই সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আনা হয় কি না- এ নিয়ে সন্দেহ ও সংশয় তৈরি হয়েছে জাতীয় পার্টিতে। কারণ হিসেবে তারা মনে করছেন, বিএনপি নির্বাচনে না গেলে গত দুইবারের মতো জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের আসনে থাকার কথা থাকলেও বিএনপিছুট নেতাদের নিয়ে গঠিত তৃণমূল বিএনপিকেই সরকার বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। নতুন নিবন্ধন পাওয়া দলটি কেন্দ্রীয় নেতাদের খুব বেশি কাছে টানতে না পারলেও তৃণমূলে বিএনপিতে দীর্ঘদিন অবহেলিত অথচ জনপ্রিয়-এরকম নেতাদের নিয়ে সক্রিয় হচ্ছে। সারা দেশে জনপ্রিয় তৃণমূল নেতাদের মনোনয়ন দিয়ে জাতীয় পার্টির বিকল্প অবস্থানে নেয়া হতে পারে বলে প্রায় দেড় দশক ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গী জাপা নেতাদের মনে এখন সন্দেহ সংশয় দোল খাচ্ছে।
মনোনয়নপত্র তুললেন জি এম কাদেরসহ শীর্ষ নেতারা : গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় মনোনয়ন ফরম বিতরণ উদ্বোধন করেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো- চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি। এ সময় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো: মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো- চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপিসহ জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে মনোনয়ন ফরম গ্রহণ করেন। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া আনুষ্ঠানিকভাবে পার্টির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের হাতে মনোনয়ন ফরম তুলে দেন। প্রথম দিন মোট ৫৫৭টি ফরম বিক্রি হয়। প্রতিটি ফরমের দাম ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে রংপুর-৩ আসনে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের পক্ষে মনোনয়নপত্র কেনা হয়েছে। আর ময়মনসিংহ-৪ আসনের জন্য জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির দফতর সম্পাদক-২ আব্দুর রাজ্জাক। তবে বিরোধীদলীয় নেতার সহকারী একান্ত সচিব মো: মামুন হাসান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রওশন এরশাদ এমপি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে তা সঠিক নয়। এ বিষয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান বিরোধীদলীয় নেতা।
জানা যায়, রংপুর-৩ আসনটি মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আসন হিসেবে পরিচিত। রওশন এরশাদপুত্র রাহগির আল মাহি এরশাদ সাদ এই আসনের বর্তমান এমপি। অন্যদিকে, ঢাকা-১৮ আসন থেকে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদের। তিনি বর্তমানে সংরক্ষিত আসনের এমপি। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন, জাপার এমন উল্লেখযোগ্য নেতারা হলেন-দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রতনা এমপি, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, রানা মোহাম্মদ সোহেল (অব:) এমপি, আতিকুর রহমান আতিক, নুরুল ইসলাম তালুকদার এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান এমপি।
এদিকে মনোনয়নপত্র বিতরণকালে জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো: মুজিবুল হক চুন্নু এমপি গণমাধ্যমকে বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। আমরা আশা করেছিলাম আনন্দমুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে। দেশের মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে সেই নির্বাচনে ভোট দিতে পারবে। আমরা নির্বাচনে যাওয়ার প্রাথমিক কাজ শুরু করেছি। এটি নির্বাচনে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি, নির্বাচনে যেন সাধারণ ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করুন। নির্বাচনে আমরা আস্থার পরিবেশ চাই। জাতীয় পার্টির সব পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ পার্টি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছেন। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এমপি নির্বাচনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তিনি প্রয়োজন মনে করলে, সিনিয়র নেতাদের সাথে আবারো আলোচনা করতে পারেন। নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের আছে, পার্টি চেয়ারম্যান শিগগিরই নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে শুধু আমরা মহাজোটের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেই। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে আমাদের আসনভিত্তিক নির্বাচনী সমঝোতা ছিল। এখন জাতীয় পার্টি কোনো জোটের সাথে নেই। আমরা তিন শ’ আসনেই আমাদের নিজস্ব প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বারবার বলেছেন, সব দলের সাথে আলোচনা করুন।
সবাই এক টেবিলে বসলে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান একটি ফর্মুলা দিতে পারতেন, যাতে সংবিধানের আওতায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।