আফতাবনগরে নির্বাচনী হাওয়া, ছেয়ে গেছে ব্যানার-ফেস্টুনে

Slider সারাদেশ

চারিদিকে ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে, বিভিন্ন স্থানে ঝুলছে প্রার্থীর পোস্টার, কিছুদূর পরপর করা হয়েছে প্রার্থী-প্যানেলের পক্ষে প্যান্ডেল, চারিদিকে মাইকে বেজে চলেছে প্রার্থীর পক্ষের প্রচার-প্রচারণা। মূল সড়ক থেকে অলিগলি পর্যন্ত প্রার্থীদের রঙিন ব্যানার, বিলবোর্ড আর ফেস্টুনে নিজেদের অঙ্গীকার, প্রতিশ্রুতির বার্তা ফুটে উঠেছে। ভোটার, এলাকাবাসী তাদের এলাকার উন্নয়ন, চাওয়া-পাওয়া পূরণে যেমন নতুন নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছেন; তেমনি প্রার্থী, সমর্থকরাও নিজেদের ‍উজ্জীবিত করে চালিয়ে যাচ্ছেন শেষ সময়ের প্রচার প্রচারণা।

সব মিলিয়ে রাজধানীর মনোরম, নিরিবিলি, শান্ত, প্রাকৃতিক পরিবেশের এলাকা হিসেবে খ্যাত আফতাবনগরে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। এলাকাবাসী, ফ্ল্যাট-বাড়ির মালিক, ভোটার, প্রার্থী-সমর্থক সবার মধ্যেই লেগেছে সে হাওয়া। আগামী ২৫ নভেম্বর (শনিবার) এখানে অনুষ্ঠিত হবে জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটির নির্বাচন। যে নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে এখানকার মানুষদের মধ্যে।

আফতাব নগর জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটির নির্বাচন উপলক্ষ্যে এরইমধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। মোট ভোটার ১ হাজার ৬৮ জন। পুরো এলাকা এ থেকে এন পর্যন্ত ব্লকে ভাগ করা রয়েছে। নির্বাচনে মোট তিনটি প্যানেল থেকে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যার মধ্যে দুটি প্যানেল পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী দিয়েছে, আর একটি প্যানেল শুধু সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে তাদের প্রার্থী দিয়েছে। সব মিলিয়ে আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটিতে মোট ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠিত হবে।

নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন হাবিব মো. হালিমুজ্জামান। রয়েছেন দুইজন নির্বাচন কমিশনার। তারা হলেন- তোফায়েল আহমেদ এবং নূরুল ইসলাম তালুকদার। তিনটি প্যানেলের মধ্যে ছাতা প্রতীকে আলমগীর ঢালী-এস এম কামাল পরিষদে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদের জন্য ৩৭ জন প্রার্থী রয়েছেন। অন্যদিকে বাইসাইকেল প্রতীকে ইঞ্জিনিয়ার কামাল-মেজবাহ পরিষদেও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে ৩৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। পাশাপাশি মই প্রতীক নিয়ে শুধু সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছে ডক্টর ইউনুস-নুরুল পরিষদ।

নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়ে জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটি নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিব মো. হালিমুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এখানে ভোটার আছে মোট ১০৬৮ জন। তাদের ভোটেই ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদ কমিটি নির্বাচিত হবে। আগামী ২৫ নভেম্বর এখানে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। যার সার্বিক প্রস্তুতি এরইমধ্যে আমরা সম্পন্ন করেছি। ওইদিন আমাদের সোসাইটির অফিস প্রাঙ্গণে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে।

নির্বাচন কমিশনার তোফায়েল আহমেদ বলেন, এ থেকে এন পর্যন্ত ব্লক নিয়ে আফতাবনগর গঠিত। আমাদের ভোটারদের সুবিধার্থে ভোট দেওয়ার জন্য ৫টি বুথ তৈরি করা হচ্ছে। এর আগে জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটির কার্যক্রম থাকলেও এবারই প্রথম নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব আসবে। এখানে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের নেতৃত্ব বাছাই করে নেবে।

আরেক নির্বাচন কমিশনার নূরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যে পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ হয়, আমরাও একইভাবে আগামী ২৫ নভেম্বর ভোটগ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনা করব। আশা করছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটির কার্যনির্বাহী পরিষদের নেতৃত্ব খুঁজে নিবে ভোটাররা। ভোটগ্রহণের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে আমার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

নির্বাচন বিষয়ে ছাতা প্রতীকে আলমগীর ঢালী-এস এম কামাল পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী এস এম কামাল বলেন, আগামী ২৫ নভেম্বর জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমি সেখানে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। আশা করছি ওইদিন সুন্দর পরিবেশে ভোটাররা ভোট দেওয়ার মাধ্যমে নেতৃত্ব বেছে নেবেন। আফতাবনগরের সবার ভালোবাসা ও সমর্থন আশা করছি, পাশাপাশি নির্বাচিত হলে এই এলাকার যাবতীয় সমস্যা সমাধানে স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ।

আফতাবনগর এলাকার এফ ব্লকের ৬ নম্বর রোডের একটি বাড়ির মালিক সাজেদুর রহমান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা যারা জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটির সদস্য, এই এলাকার বাসিন্দা তাদের কাছে আসন্ন কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব এলে আমাদের এলাকার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করবে। যেকোনো বিষয়ে তাদের কাছে গিয়ে সমস্যার কথা তুলে ধরা যাবে। এখানে তিনটি প্যানেলের মাধ্যমে বিভিন্ন পদে অনেক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আমরাও বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নেব যে কাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করব। যে প্রার্থীকে আমাদের কাছে যোগ্য মনে হবে আমরা তাকেই ভোট দেব। কারণ তারাই হবে আমাদের এলাকার আগামী দিনের অভিভাবক।

কার্যনিবার্হী পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী যারা

জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটি নির্বাচনে মোট তিনটি প্যানেলে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যার মধ্যে থেকে সব মিলিয়ে আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে জহুরুল ইসলাম সিটি সোসাইটিতে মোট ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠিত হবে।

এর মধ্যে ছাতা প্রতীক নিয়ে আলমগীর ঢালী-এস এম কামাল পরিষদে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে আছেন আলমগীর হোসেন ঢালী এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এস এম কামাল। এই পরিষদে আটটি সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন কে এম আমিনুল হক ফারুক, গাজী আলাউদ্দিন আলম, আবু সুফিয়ান, মিজানুর রহমান, আবুল হাসিম ভূইয়া, আলমগীর হোসেন, মুক্তার হোসেন মৃধা এবং শ্যামল রঞ্জন সাহা (বাপ্পী)। দুই জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসেবে আছেন মোল্লা জুলফিকার আলী, দেলোয়ার হোসেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রার্থী এম এ এলাহী শিমুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জাহাঙ্গীর আলম, অর্থ সম্পাদক পদে মোহাম্মাদ মাসুম বিল্লাহ, সহ-অর্থ সম্পাদক পদে সৈয়দ ইফতেখার আলী (মনা), দপ্তর সম্পাদক পদে জসিম উদ্দিন, আইনবিষয়ক সম্পাদক পদে লোকমান হাকিম খন্দকার, সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক পদে এস এম শামীম হোসেন, শিক্ষা ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে আতিকুর রহমান, সহ-শিক্ষা ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে শেখ মাহমুদ উজ্জ্বল, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক পদে মোহাম্মদ আকবর হোসেন, সহ-সমাজ কল্যাণ সম্পাদক পদে আব্দুল হাকিম (লাল), পরিবেশ ও নিরাপত্তা সম্পাদক পদে মোহাম্মদ বেলাল হোসেন, প্রচার সম্পাদক পদে মোতাসিম বিল্লাহ সিজন, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে জাহাঙ্গীর আলম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক সম্পাদক পদে কাজী আব্দুল বারেক, সহ-মহিলা ও শিশুবিষয়ক সম্পাদক পদে মোসলেম আলী হাওলাদার বাবু, রাস্তা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পাদক পদে ডা. মো. শামীম খান, সহ-রাস্তা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পাদক পদে কাইয়ুম তালুকদার (কানন), গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানিবিষয়ক সম্পাদক পদে আবু তাহের কোরেশী এবং ধর্মবিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হাজি মো. নরুল ইসলাম। এছাড়া পাঁচজন কার্যনির্বাহী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আব্দুস সালাম, নজরুল ইসলাম পাটোয়ারী, কামাল উদ্দিন পাঠান, নাইয়ুম বিল্লাহ এবং সোহেল গাজী।

অন্যদিকে বাইসাইকেল প্রতীক নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার কামাল-মেসবাহ পরিষদে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে আছেন ইঞ্জিনিয়ার কামাল হোসেন খান এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মশিউর রহমান চৌধুরী (মেসবাহ)। এছাড়া এই পরিষদে আটটি সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সিরাজুল ইসলাম, বেলায়েত হোসেন, শাহিরুল ইসলাম সিকদার, আবু সাঈদ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, আবদুর রব, ওয়াফী মো. কামরুল হুদা, আক্তারুজ্জামান মুকুট এবং মাহবুবুর রশিদ। দুইজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসেবে আছেন ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মাওলা রিপন, অ্যাড. এমদাদুল হক। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রার্থী আহাদুজ্জামান শিকদার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রাসেল উদ্দিন, অর্থ সম্পাদকবিষয়ক পদে এ টি এম মশিউর রহমান, সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক পদে আবুল কালাম আজাদ, দপ্তর সম্পাদক পদে শাহ আজম খান, আইনবিষয়ক সম্পাদক পদে দেলোয়ার হোসেন লস্কর, সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক পদে জয়নাল আবেদীন, শিক্ষা ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মোহাম্মদ মোরশেদ আলম, সহ-শিক্ষা ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মাহবুর রহমান সিকদার, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক পদে আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহ-সমাজ কল্যাণ সম্পাদক পদে সারোয়ার জাহান, পরিবেশ ও নিরাপত্তা সম্পাদক পদে ডা. মুন্সী নূরুল হক, প্রচার সম্পাদক পদে গাজী মো. কাওসার (অপু), সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে বাহার উদ্দিন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক সম্পাদক পদে জাহানারা বেগম, সহ-মহিলা ও শিশুবিষয়ক সম্পাদক পদে মোস্তারী জেসমিন (নিপা), রাস্তা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পাদক পদে নুরুনবী সরকার, সহ-রাস্তা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পাদক পদে বাদল গাজী, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, অবকাঠামোবিষয়ক সম্পাদক পদে বাছেদ ভূইয়া এবং ধর্মবিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মো. ওমর ফারুক। এছাড়া পাঁচজন কার্যনির্বাহী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তোফাজ্জল হোসেন, বশির উল্ল্যাহ, সাইদুর রহমান সোহেল, আবুল কালাম আজাদ এবং মিলন হাওলাদার (সোহেল)।

পাশাপাশি তৃতীয় প্যানেল হিসেবে মই প্রতীকে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হচ্ছে। বাকি পদগুলো এই পরিষদে নেই। ডক্টর ইউনুস- নুরুল পরিষদে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন ডক্টর মো. ইউনুস আলী আকন্দ এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন মো. নুরুল ইসলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *