আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সোমবার খুলনায় আসছেন। বিকেলে খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেবেন তিনি। সেখানে ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন জানান, জনসভায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলা এবং গোপালগঞ্জ ও পিরোজপুরের ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
৫ বছরেরও বেশি সময় পর প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভা ঘিরে খুলনা উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে নৌকা ও পদ্মা সেতুর আদলে প্রস্তুত করা হয়েছে জনসভা মঞ্চ। জনসভায় ১০ লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের নেতাদের। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে পুরো নগরী নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত খুলনাবাসী।
খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে দুপুর পৌনে ১টায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে নির্মিত হেলিপ্যাডে অবতরণ করবেন। এরপর দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত সার্কিট হাউজে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবেন তিনি। বেলা পৌনে ৩টায় সার্কিট হাউজ মাঠে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এরপর যোগ দেবেন আওয়ামী লীগ আয়োজিত খুলনা বিভাগীয় জনসভায়।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর খুলনা সার্কিট হাউসের জনসভার সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করার সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে বরণের অপেক্ষায় রয়েছে খুলনাবাসী।
নগরজুড়ে উৎসবের আমেজ
প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে নগরীতে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। তোরণ, পোস্টার, প্লাকার্ড, বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে নগরী। ইতোমধ্যে সার্কিট হাউজ মাঠে নির্মাণ করা হয়েছে নৌকা ও পদ্মা সেতুর আদলে বিশালাকৃতির মঞ্চ। রাতে আলোকসজ্জা করা হচ্ছে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে টিভি স্ক্রিন। এসব টিভি স্ক্রিনে মহাসমাবেশ সরাসরি সম্প্রচার হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নির্বাচনের আগে এই জনসভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী জনসভায় দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করবেন, তিনি আগামী নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ দিক সামনে নিয়ে আসবেন।
১০ লাখ মানুষ সমাগমের টার্গেট
খুলনায় প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশে ১০ লাখ মানুষ সমাগমের প্রত্যাশা করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা-থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ এই সমাবেশে আসবেন।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মুন্সি মাহবুবুল আলম সোহাগ জানান, প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে। আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে প্রধানমন্ত্রী খুলনার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছেন। এ জন্য খুলনাবাসী প্রধানমন্ত্রীকে গ্রান্ড সেলিব্রেশন দিবে। সার্কিট হাউস মাঠসহ নগরজুড়ে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সমাগম ঘটবে। এই জনসভায় ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে। শুধু মাঠে নারী কর্মীদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যরা নগরীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন জানান, জনসভায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলা এবং গোপালগঞ্জ ও পিরোজপুরের ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এবারের জনসভা হবে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসভা। জনসভাস্থলের আশপাশের সব সড়কে মাইক দেওয়া হয়েছে, যাতে সভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর নেতাকর্মীরা রাস্তার দাড়িয়ে প্রিয় নেত্রীর ভাষণ শুনতে পারেন।
পদ্মা সেতু-নৌকার আদলে মঞ্চ
খুলনায় নৌকা ও পদ্মা সেতুর আদলে প্রস্তুত করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা মঞ্চ। সার্কিট হাউস ময়দানের আবাহনী ক্রীড়াচক্র প্রান্তে তৈরি করা হয়েছে নিচে নৌকা ও উপরে পদ্মা সেতুর আদলে ৯০ ফুট দৈর্ঘ্য, ৪০ ফুট প্রস্থ ও সাড়ে ১৩ ফুট উঁচু সুবিশাল মঞ্চ। যেখানে অন্তত ৪০০ জন অতিথি বসতে পারবেন।
উদ্বোধন হবে ২৪ প্রকল্প, ৫টির ভিত্তিপ্রস্তর
জেলা প্রশাসন জানায়, প্রধানমন্ত্রী ২ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন এবং ২২৩ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ ৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, প্রধানমন্ত্রী ২৪টি প্রকল্প উদ্বোধন ও ৫টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে খুলনাবাসীর দাবি
খুলনায় পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ ও বিমান বন্দর নির্মাণসহ কমপক্ষে ২০টি দাবি নিয়ে অপেক্ষায় আছেন খুলনার মানুষ। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই ও সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, খুলনাবাসীর ১৮টি দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হবে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে ইতিবাচক ঘোষণা দেবেন বলে আমরা আশা করছি।
নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা গোটা নগরী
খুলনা বিভাগীয় জনসভাস্থল ও আশপাশে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। জনসভাস্থলে পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করবে। সার্কিট হাউজ মাঠ ও আশপাশে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। গোটা নগরী নিরাপত্তার চাদরের ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
নৌকা-পদ্মা সেতুর আদলে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা মঞ্চ
খুলনায় পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহসহ ১৮ দফা দাবি উন্নয়ন কমিটির
তিনি জানান, জনসভাস্থলে আসা এবং জনসভা শেষে যাতে লোকজন নির্বিঘেœ ফিরে যেতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাতে যানজট সৃষ্টি না হয় সেজন্য পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। নৌপথে নৌ-পুলিশ টহল দেবে। জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে পুলিশ আনা হয়েছে।
১০ জোড়া স্পেশাল ট্রেন
খুলনায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে ১০ জোড়া স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নওয়াপাড়া, যশোর, বেনাপোল, চুয়াডাঙ্গা, কোটচাঁদপুর, আলমডাঙ্গা, মোবারকগঞ্জ ও কুষ্টিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে খুলনায় আসবে এসব ট্রেন।
খুলনা রেল স্টেশন মাস্টার মো. মাসুদ রানা জানান, প্রধানমন্ত্রীর খুলনা সফর উপলক্ষে ১০ জোড়া নতুন ট্রেন বিভিন্ন জেলা থেকে খুলনায় এসে পৌঁছাবে। শুধুমাত্র আজ ১৩ নভেম্বর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রেনগুলো চলাচল করবে।
তিন ঘাটে ১০টি ফেরি
বহুদিন পর খুলনার রূপসাঘাটে ভিড়েছে ফেরি। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে রূপসা ঘাটে ৫টি ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু রূপসা ঘাটেই নয়, জেলখানা ঘাটে তিনটি ও নগরঘাটে দুটি ফেরি চলাচল করবে। সবমিলিয়ে খুলনার তিনটি ঘাটে ১০টি ফেরি চলাচল করবে আজ।
খুলনা সড়ক ও জনপদ বিভাগ সওজ (ফেরি বিভাগ)’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আজম শেখ জানান, প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় নির্বিঘ্নে দলীয় নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের আসা-যাওয়ার জন্য আমরা নদীপথে আগের চারটি ফেরির সঙ্গে আরও ৬টি নতুন ফেরি যুক্ত করেছি।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩ মার্চ খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠের জনসভায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি ব্যক্তিগত সফরে খুলনা এসেছিলেন তিনি।