উপকূলজুড়ে আতঙ্ক, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত, নিহত ৬, আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ লাখ মানুষ

Slider টপ নিউজ

85797_f2

 

সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ ও কক্সবাজারে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় কোমেন। ধীরে ধীরে চট্টগ্রামের দিকে এগুচ্ছে ঘূর্ণিঝড়টি। গতকাল ভোরে কোমেন নামের ওই ঘূর্ণিঝড়টি সেন্ট মার্টিনে আঘাত হানে। একই সময়ে এটি টেকনাফেও আঘাত হানে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত  ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’-এর প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছের নিচে চাপা পড়ে ৩ জন ও আশ্রয়ণ কেন্দ্রে উঠার সময় হুড়াহুড়িতে ১ জনসহ মোট ৬ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কোমেনের আঘাতে প্রায় দেড় হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ। সারা দেশের নৌ-চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘ?ূর্ণিঝড়ের কবল থেকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল থেকে প্রায় বিশ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আবাহাওয়া অফিস জানিয়েছে, কোমেন একই স্থানে স্থির রয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাতে দুর্বল হয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা জানান, সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজারে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় কোমেন। এরপর থেকে কক্সবাজার শহর ও আশপাশে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। তীব্র বাতাস বয়ে যাচ্ছে। এর আগে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছিল, গতকাল দুপুর নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল হয়ে বরিশাল উপকূল অতিক্রম করতে পারে। আবহাওয়া অফিস কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম বন্দরকে ৭ নম্বর, পায়রা ও মংলা বন্দরকে ৫ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে।
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’ আতঙ্কে সকাল থেকে স্থবির হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম নগরীর জীবনযাত্রা। বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করবে ঘূর্ণিঝড় কোমেন আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রয়েছে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা। কয়েকদিন ধরে টানা বর্ষণ চলছিল এমনিতেই। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বুধবার রাত থেকে বৃষ্টির সঙ্গে বইছে দমকা বাতাস। তাই আতঙ্ক একটু বেশিই ছিল নগরবাসীর। বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ ছিল একই চিত্র। সকাল থেকে নগরীর অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ কিছুক্ষণ পর পরই আসা-যাওয়া করছিল। তাই দিনের বেলাতেও অনেকটা অন্ধকারে দিন কাটাতে হচ্ছে নগরবাসীর। এদিকে জেলা প্রশাসন থেকে নগরীর স্কুল-কলেজগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বুধবার রাতেই। তাই বৃহস্পতিবার কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু নগরীর সরকারি অফিস, আদালত , ব্যাংক, বীমা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকায় নগরবাসীকে সকাল থেকে তাদের কর্মস্থলে ঠিকই যাত্রা করতে হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ও ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় রাস্তায় যানবাহন চলছে স্বাভাবিকের চেয়ে কম। তাই যানবাহন সঙ্কটে কোথাও কোথাও রাস্তায় লোকজনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে দুর্যোগের ঘনঘটার মধ্যে রাস্তা-ঘাটে লোকজনের উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম। অনেকেই বাসায় থেকে বের হননি। ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে সরে না যাওয়া পর্যন্ত আশঙ্কামুক্ত হতে পাছেন না কেউই। নগরীর পাহাড়তলী এলাকার গৃহিণী আমেনা বেগম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আতঙ্কে আছি। তবে বাচ্চাদের স্কুল ছুটি দিয়ে দেয়ায় ভাল হয়েছে। কাউকে বাইরে যেতে হচ্ছে না।’ এদিকে এমন পরিস্থিতির মাঝেও অফিসে যেতে হচ্ছে বলে জিইসি মোড়ে গাড়ির অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকা নূর চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই বৃষ্টি বাদলের মাঝেও অফিস করতে হচ্ছে। তার ওপর আবার ‘কোমেন’ আসছে। অথচ অফিস বাদ দেয়ার উপায় নেই।
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’-এর প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছের নিচে চাপা পড়ে মো. ইসলাম (৫০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোরের দিকে এই ঘটনা ঘটে। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান খন্দকার এই মৃত্যু ও ঘরবাড়ি বিধ্বস্তের খবর নিশ্চিত করে বলেছেন, ঝড়ো বাতাসে দ্বীপের বেশ কিছুসংখ্যক নারকেলগাছ উপড়ে পড়েছে। তবে আর কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে ঝড়ে গাছপালা উপড়ে পড়ার পাশাপাশি শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রকৃতির নিষ্ঠুর তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে প্রায় ৩০০০ ঘর-বাড়ি, পাহাড়ী সড়কের গাছ। জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে গাছ চাপায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। উপকূলীয় ইউয়িনের সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে ৭০০০ লোক আশ্রয় নিয়েছে।  মঙ্গলবার রাত থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ।
সূত্র জানায়, নিহত পশ্চিম পাড়ার অলি আহমদের ছেলে মো. ইসলাম (৫৫)। হ্নীলা লেচুয়াপ্রাং এলাকার মৃত হাজত আলীর ছেলে মোহাম্মদ ইসমাঈলের উঠানে থাকা বিরাট তুলা গাছ গোয়াল ঘরে পড়ে ৩টি গরু মারা গেছে। এ ছাড়া প্রবল বাতাসে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শাহপরীরদ্বীপবাসীসহ নিম্নাঞ্চল এলাকার মানুষগুলো পানিবন্দি রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছে শাহপরীরদ্বীপবাসী।   সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রচুর পরিমাণ নারিকেল গাছ ভেঙ্গে বাড়িতে পড়ে বাড়ি ঘর, হোটেল মোটেল বিধ্বস্ত হয়েছে। শতাধিক ফিশিং ও সার্ভিস বোট বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙ্গে গেছে। দ্বীপের পশ্চিম পাড়া, ডেইল পাড়া, পূর্ব পাড়া, মাজের পাড়া, কোনার পাড়া, নজরুল পাড়া, দক্ষিণ পাড়ার বিভিন্ন ঘর  বাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙ্গে যায় বাড়িয়ারী বাঁধ। সেন্টমার্টিন সার্ভিস বোট মালিক সমিতির সভাপতি আবু তালেব জানান, কয়েকটি সার্ভিস বোট বঙ্গোপসাগরে  নোঙ্গর অবস্থায় হারিয়ে গেছে। তার মালিকানাধীন সার্ভিস বোটটিও হারিয়ে গেছে। সাগরের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। কোস্টগার্ড ভবনসহ, স্কুল, সাইক্লোন শেল্টার, হাসপাতালে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে দ্বীপবাসী। ফলে আতঙ্কে রয়েছে গোটা সেন্টমার্টিনবাসী। নিরাপদে আশ্রয়ের জন্য মাইকিং অব্যাহত রেখেছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। হ্নীলায় বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে নাফ নদীর পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে দমদমিয়া, হোয়াব্রাং, চৌধুরীপাড়া, রঙ্গিখালী নিম্নাঞ্চল। একই অবস্থা হোয়াইক্যং ইউনিয়নেও। সেখানেও গাছচাপা পড়ে ও বাতাসে ঘর-বাড়ি এবং ঘেরা বেড়ার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে উনছিপ্রাংসহ নিম্নাঞ্চল। পানিতে তলিয়ে গেছে চিংড়ি ঘের। সড়কের উপর গাছ পড়ায় সাময়িকভাবে যান চলাচল বন্ধ থাকলেও দ্রুত সরিয়ে ফেলায় যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সাগর ও নদী উত্তাল থাকায় টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিটের যাত্রী ও সেন্টমার্টিনে পারাপারের নৌ-চলাচল ৪ দিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। চলাচল বন্ধ রয়েছে স্থলবন্দরের সকল প্রকার মালামাল বহনের ট্রলার। নিরাপদের অবস্থান করছে বন্দরে অবস্থানরত সকল ট্রলার । ভারি বর্ষণের সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ায় সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, গতকাল বুধবার থেকে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং উপকূলীয় ইউনিয়ন সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপে ৩টি করে পৃথক ৬টি টিম গঠন করা হয়েছে। টিমগুলো সেন্টমার্টিন ও সাবরাংয়ে সর্বশেষ খবরাখবর তদারকি করছে। এ ছাড়া উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগ নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে এবং শুকনো খাবার মজুদ রাখা হয়েছে। ৬০টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৭০০০ লোক নিরাপদে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হোটেলসহ অস্থায়ী সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’-এর প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছের নিচে চাপা পড়ে জেলার গলাচিপায় এক ব্য?ক্তি মারা গেছেন। তার নাম মো. নুরুল ইসলাম ফকির (৫২)।
সূত্র জানায়, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কল্যাণ কলস গ্রামে বেলা ১১টার দিকে গাছের নিচে চাপা পড়েন নুরুল ইসলাম। দুপুর ১২টার দিকে তাকে উদ্ধার করে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার আগেই তিনি মারা যান। গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুব আলম এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। প্রত্যক্ষদর্শী কালাম খান জানান বেলা ১১.৩০ মি. সময় বৃষ্টি ও হালকা বাতাস হচ্ছিল। এ সময় স্থানীয় একটি ছোট্ট চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিল নুরুল ইসলাম ফকির। হঠাৎ  সেখানে পার্শ্ববর্তী একটি চাম্বল গাছ ভেঙ্গে পড়লে ঐ গাছের চাপায় নুরুল ইসলাম ফকির নিহত হয় ।
এদিকে বন্ধ রয়েছে সকল  প্রকার লঞ্চ চলাচল। ঘূর্ণিঝড় কোমেন মোকাবিলায় পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন গতকাল সকাল দশটায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলায় দুইশটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ৫০ জন যুব রেড ক্রিসেন্ট কর্মী ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সিপিপির ২৭৫ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যরা তাদের লোকজনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়ার প্রসু্ততি নিয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জিআর ১শ মেট্রিক টন চাল ও পর্যাপ্ত নগদ টাকা জমা আছে বলেও জানান। এ ছাড়া উপকূলের দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যাতে দুর্যোগকালীন মানুষ আশ্রয় নিতে পারে সেজন্য খোলা রাখা হয়েছে। সভায় জেলা দুর্যোগ ব্যস্থাপনা কমিটির সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে: ঘূর্ণিঝড় কোমেন ধেয়ে আসায় চট্টগ্রামে যে যেদিকে পারছে  আশ্রয় নিচ্ছে । এরই মধ্যে গাছ চাপায় একজন মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে নিহতের নাম জানা যায়নি। এ নিয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছে চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা বাঁশখালী, আনোয়ারা , সন্দ্বীপ, মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড এলাকার মানুষ ।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে জেলা প্রসাশনের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি ২৭৮টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ২৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে সন্দ্বীপ উপজেলায় ৬২টি,বাঁশখালীতে ১০০টি ,আনোয়ারাতে ২০টি, সীতাকুণ্ডে ২০টি, মিরসরাইতে ২৭টি এবং মহানগরে ৪টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাশ জানিয়েছেন, যে যেই দিকে পারছে আশ্রয় নিচ্ছে, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষরা গতরাত থেকে সরে যাওয়া শুরু করেছে।
উপজেলার ছনুয়া, গন্ডামারা শেখের খিল ও গন্ডামারা ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, এসব ইউনিয়নের সমুদ্র নিকটে বসবাসকারীদের প্রায় সবাই নিজদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে, জানান তিনি।
সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মশিউর রহমান জানিয়েছেন, দ্বীপের আশ্রয় কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়া হয়েছে, অনেকেই এসব সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছে, আরও অনেকে আশ্রয় নেয়ার জন্য এখনও আসছে।
সমুদ্র তীরবর্তী আনোয়ারা উপজেলার ও একই পরিস্থিতি বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল লতিফ।
স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী থেকে জানান, আশ্রয়ণ কেন্দ্রে উঠার তাড়াহুড়াতে তানজিনা বেগম নামে ১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে । শিশুটির বাড়ি হাতিয়া উপজেলার পশ্চিম সোনাদিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে। হতভাগ্য শিশুর পিতা আজমীর হোসেন ও মাতা মর্জিনা বেগম।
এদিকে, রেডক্রিসেন্ট ৫শ ১৩টি আশ্রয়ণ কেন্দ্রের জন্য ৫ হাজার লোক মোতায়েন করেছে।  নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে ২৫’হাজার লোক। গতকাল মীরওয়ারিশপুর ইউনিয়নের ৫ গ্রামে ২৫ কিলোমিটার কাঁচা ও ১৬ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ও ৫০০টি মাছের খামার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে ৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার জন্য এখানে ত্রাণ এসেছে মাত্র দেড় টন টাউল ও আড়াই হাজার টাকা সরকারি ত্রাণ পৌঁছায় এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় কোমেন। এর প্রভাবে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, সূবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার চরএলাহি, চরফকিরা, মুছাপুর ইউনিয়ন, কবিরহাট উপজেলার ঘোষবাগ, ধানশালিক, ধানসিঁড়ি উপজেলা, সূবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর, চরবাটা, চরক্লার্ক, চরওয়াপদা, চরজুবলী, আমানউল্লাহ, পূর্ব চরবাটা, মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন এবং হাতিয়া উপজেলার সবগুলো ইউনিয়ন ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতিমধ্যে এসব উপজেলা গুলোতে ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য, কোম্পানীগঞ্জে ৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্র, ১৩টি মেডিক্যাল টিম, কবিরহাটে ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র, ১২টি মেডিক্যাল টিম, সূবর্ণচরে ৯৪টি আশ্রয়কেন্দ্র, ৭টি মেডিক্যাল টিম, হাতিয়া ১৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৪টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলাগুলোর সকল সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, মঙ্গলবার রাত থেকে উপজেলার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে অন্তত ২৫ হাজার লোকজনকে নিরাপদে ৩০টি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছে। সাগরে রেডএলার্ট জারি করে সকল মাছ ধরার নৌকাসহ জেলেদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। নোয়াখালী জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) অনুপম বড়ুয়া জানান, জেলার ৪টি উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণের নিরাপত্তার জন্য সবধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও দুইজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দুটি উপজেলা করে ৪টি উপজেলায় দায়িত্ব পালন করবেন।
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার থেকে জানান, ঘূর্ণিঝড় কোমেন কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল অতিক্রম করছে। এর ফলে আতঙ্ক কাটছে না জেলাবাসীর। তবে থেমে থেমে ধমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা জানান, জেলার ৯৬টি আশ্রয়ণকেন্দ্রে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রিত লোকদের শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। রেডক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুর্গত এলাকার মানুষের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। তিনি বলেন, জেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ছুটি ঘোষণা করে আশ্রয়ণ কেন্দ্রের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি ছুটি বাতিল করেছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মওসুমী নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। বাতাসের গতিবেগ সর্বোচ্চ ৫৪ থেকে ৬২ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রবাহিত হচ্ছে। যা দমকা হাওয়া অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় কোমেন আতঙ্কে সময় পার করে মানুষ। আতঙ্কিত লোকজন রাত থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়া শুরু করে। জেলা প্রশাসন কার্যালয়, পৌরসভা ভবন, বিভিন্ন স্কুল কলেজ ভবন হয় তাদের আশ্রয়স্থল। ৭ নম্বর মহা বিপদ সংকেত ঘোষণা পর থেকে (রাত ১১টা) উপকূলীয় এলাকায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাইকিং শুরু হয়। প্রথম দিকে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে না আসলে ও শেষ রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা শুরু করে।
ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে কক্সবাজারে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে জেলার ৮ উপজেলার ২৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে এ জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিকুর রহমান জানান, বাঁকখালী নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে ৩৪ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে এই পানির স্তর থাকে এরও ১০ সেন্টিমিটারের নিচে। তবে মাতামুহুরী পানির উচ্চতা রয়েছে স্বাভাবিক। যদি ভারী বর্ষণ হয় তাহলে অতিরিক্ত বেড়ে যাবে পানির উচ্চতা।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জলোচ্ছ্বাসে সদর উপজেলার ৬টি, রামুর ১টি, চকরিয়ার ৪টি, পেকুয়ার টি, কুতুবদিয়ার ৭টি, মহেশখালির ৩টি, উখিয়ার ১টি ও টেকনাফের ২টি ইউনিয়ন কোমেনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিজিবি-বিজিপি পতাকা বৈঠক বাতিল: এদিকে গতকাল মিয়ানমারের জলসীমা থেকে উদ্ধার হওয়া অভিবাসী প্রত্যাশীদের মধ্যে বাংলাদেশী হিসেবে শনাক্ত হওয়া ১৫৯ জনকে পতাকা বৈঠকের মধ্যে ফেরত আনার কথা থাকলে ও দুর্যোগ এর কারণে তা বাতিল করা হয়েছে বলে বিজিবির কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার এম এম আনিছুর রহমান জানিয়েছেন।
বিমানবন্দরে ফ্লাইট বন্ধ: সম্ভাব্য ঝড়ো হওয়া, জলোচ্ছ্বাস ও বিরূপ আবহাওয়াজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কায় কক্সবাজার বিমানবন্দরে সবধরনের বিমান অবতরণ ও উড্ডয়ন বন্ধ ঘোষণা করেছেন কর্তৃপক্ষ। সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজারের কাছাকাছি চলে আসায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বুধবার রাত ১১টায় এ ঘোষণা দেয়া হয়। গতকাল সকালে বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সাধন কুমার মোহন্ত জানান, সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিমানবন্দরের যাবতীয় উপকরণ ও যন্ত্রপাতি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে ও রানওয়ের লাইটিং সিস্টেম ইতিমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিমান বন্দরে থাকবে। সমুদ্র থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরত্বে অবস্থিত কক্সবাজার বিমানবন্দরে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস জনিত ক্ষতি এড়াতে আরও নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। ৭নং বিপদ সংকেত বলবত থাকায় কক্সবাজার থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী ইতিপূর্বের নির্ধারিত সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক বেসরকারি এয়ার লাইন্সের কর্মকর্তারা।
মংলা প্রতিনিধি  জানান,  ঘূর্ণিঝড় কোমেনেরে প্রভাবে মংলা বন্দরে ৫নং বিপদ সংকেত বহাল রাখায় বন্দরে অবস্থানরত বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর পণ্য খালাস বোঝাই কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে । দুর্যোগ মোকাবিলায় মংলা উপজেলা প্রশাসন, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। বর্তমানে বন্দরে ৫টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এর মধ্যে একটি খাদ্যবাহী জাহাজ (গম) রয়েছে। নিরাপদ অবস্থানে রাখা হয়েছে বন্দরে অবস্থানরত দেশী-বিদেশী সকল বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে। বঙ্গোপসাগর উত্তাল, সাগর ও নদী পথে চলাচলকৃত মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাসহ সকল ধরনের নৌযান নিরাপদে অবস্থান নিয়েছে। বুধবার রাতে ৫নং বিপদ সংকেত জারির পর থেকে পৌর এলাকাসহ সকল ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি),উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে জনসাধারণকে সচেতন করতে মাইকিং করা হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা উপজেলার সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মংলা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেনের’ জন্য কন্টোল রুম খোলা, মেডিক্যাল টিম গঠন,ডাক্তারদের ছুটি বাতিল করা,ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত রাখা,শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা এবং পৌরসভাসহ সকল জায়গায় মাইকিং করে পানি বেড়ে গেলে তাদের মালামাল দ্রুত সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। সকল মুদি ব্যবসায়ীদের দোকানে শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে দুপুর ১টার পর থেকে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় এখানকার ইউনিয়নগুলোর ৩৯টি সাইক্লোন শেল্টার খুলে রাখা ও দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষের আশ্রয়ের জন্য সকল বহুতল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দুপুর ১টার পর থেকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কোমেন মোকাবিলায় বাতিল করা হয়েছে জেলার সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জেলার অভ্যন্তরীণ ও ঢাকাগামী সব ধরনের লঞ্চসহ নৌ-চলাচল। সুন্দরবনে জারি করা হয়েছে রেড এলার্ড। জেলার ২০৭টি সাইক্লোন শেল্টার খুলে দেয়ায় সকাল থেকে সেখানে আতঙ্কিত হাজার-হাজার মানুষ আশ্রয় নিচ্ছে। গতকাল  সকালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টায় সভা শেষে মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সার্বক্ষণিক দুর্যোগ প্রস্তুতি মনিটরিং এর জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। মাইকিং করে জেলা উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মংলা এলাকায় জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে একাধিক মেডিক্যাল টিম ও স্বেচ্ছাসেবকদের। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে তাদের কর্মস্থলে থাকতে বলা হয়েছে। কোমেনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা ‘রেড এলার্ড’ জারি করেছে সুন্দরবন বিভাগ।
স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেনের’ কারণে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌ-রুটের বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যাত্রী পারাপারে লঞ্চ, সিবোট ও ট্রলারসহ ছোট ছোট সব ধরনের নৌ-যান। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এসব নৌযান। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ রুটে চলাচলরত সাধারণ যাত্রীদের। শিমুলিয়াস্থ বিআইডব্লিউটিএ’র উপপরির্দশক তোফাজ্জল হোসেন পাটোয়ারি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় কোমেনের কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় এসব নৌযান বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে আসলে ওইসব নৌযান পুনরায় চালু করে দেয়া হবে।
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’ এর কারণে চট্টগ্রামে বুধবার রাতে ৭নং বিপদ সংকেত ও গতকাল ৮নং বিপদ সংকেত থাকায় সীতাকুণ্ডে মহাসড়ক ও বাজারগুলো ছিল প্রায় মানবশূন্য।
হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান,  নোয়াখালীর বিছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া উপজেলায় নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়া প্রচণ্ড দমকা বাতাস, ঝড়ো হাওয়া, ভারি বর্ষণে উপজেলা নিঝুমদ্বীপ,নঙ্গলিয়া,নলেরচর.কেয়ারিংচর নলচিরা, সুখচর, তমরদ্দি, চরঈশ্বর, চরকিং, সোনাদিয়া ও হাতিয়া পৌরসভার অর্ধশতাধিক গ্রাম জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। দমকা বাতাস,ঝড়ো হাওয়া ও ভারি বর্ষণে কাঁচা ঘরবাড়ি গাছপালা বিদ্যুৎ লাইন ছিঁড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন সড়কে বড় বড় গাছ উপড়ে পড়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ১ শত কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও ৫ হাজার গাছপালা ভেঙ্গে ও উপড়ে যায়। নলচিরা ইউনিয়নের ৩টি স্থানে বেড়িবাঁধ ছিড়ে যাওয়ায়,ভাঙা বেড়ি মেরামত না করা ও নিঝুমদ্বীপসহ চরাঞ্চলে বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করার কারণে জোয়ারে এসব এলাকা দিয়ে প্রতিদিন পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
কুয়াকাটা প্রতিনিধি জানান,  কুয়াকাটায় উপকূলীয় অঞ্চলে ৫ নং নাম্বার বিপদ সংকেত জারি। প্রশাসনের নেই কোন উদ্যোগ। আবহাওয়া অফিস থেকে উপকূলীয় এলাকাগুলোকে ৭ নাম্বার বিপদ সংকেত জারিতে স্থানীয় প্রশাসনের কোন ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। নিম্নাঞ্চলের লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার কোন সংকেত পাচ্ছে না এ অঞ্চলের সাগর পারের বঙ্গোপসাগরের “কোমেন” আঘাত হানতে পারে।

এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *