বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। ফলে কিছুটা কমেছে সব ধরনের সবজির দাম। আমদানি শুরু হওয়ায় ডিম ও পেঁয়াজের দামও কিছুটা কমেছে। তার পরও নাগালের ভেতরে আসেনি নিত্যপণ্যের দাম। পেঁয়াজ- তেল-ডাল, মাছ-গোশত বাড়তি দামে বিক্রি হওয়ায় স্বস্তি মিলছে না স্বল্প আয়ের মানুষের। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। যা গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমেছে। তবে স্বাভাবিক সময়ে বছরজুড়ে এ আলুর দাম থাকে ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুম শেষ হওয়ার কারণে বাজারে আলুর সরবরাহ কম। এর মধ্যে ভারত থেকে আলু আমদানি হচ্ছে। তবে যে পরিমাণে আলু এসেছে, তা চাহিদার তুলনায় খুব সীমিত। ফলে বাজারে তেমন প্রভাব রাখতে পারছে না। দাম কিছুটা কমে এলেও নাগালের মধ্যে আসেনি।
প্রায় তিন মাস আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে খুচরা পর্যায়ে আলুর দর ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু বাজারে এ দর কার্যকর হয়নি। উল্টো দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা হয়েছিল, যা গত সপ্তাহে আমদানির অনুমতি দেয়ার পর থেকে কিছুটা কমতে শুরু করেছে।
ভারত থেকে ডিমও আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তারও কিছুটা প্রভাব বাজারে রয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে বেশ কমেছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। এ সময়ের ব্যবধানে প্রতিটি ডিমের দাম প্রায় এক টাকা কমেছে।
খুচরা বাজারে এখন প্রতি পিস ডিম ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি হালি ৪৮ টাকা। এ এক হালি ডিম দুই সপ্তাহ আগে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে, বড় বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে।
বাসাবো বাজারে গিয়ে দেখা যায়, খুচরায় প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ টাকা। সাদা বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। একইভাবে দাম কিছুটা কমে পটোল ৪০ টাকা কেজি, পেঁপে ২৫ টাকা কেজি, ঝিঙা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। বাজারে কাঁচামরিচ ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ও টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি পিস লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কচুরলতি ও চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, মুলার কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। প্রতি আঁটি লাল, মুলা, কলমি শাক ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিকে পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, লাউশাকের আঁটি ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাজারে চালের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি বাজারে চিকন ও মোটা চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। একই সময়ে মোটা চালের দাম খুচরা বাজারে কেজিতে বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ টাকা। নি¤œ ও মধ্যবিত্তের পছন্দের মোটা চাল ব্রি-২৮ মানভেদে দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। বাজারে মিনিকেট বলে পরিচিত চিকন চাল মানভেদে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এবং নাজিরশাইল মানভেদে ৬৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চাল ব্যবসায়ী বলছেন, অবরোধ ও হরতালের কারণে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি এবং মৌসুমের শেষ দিকে সরবরাহ কমে যাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। ডিসেম্বরের শুরুতে বাজারে নতুন চাল এলে তখন দাম কমে আসবে। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, পাবনাসহ বিভিন্ন এলাকায় আগাম ধান কাটা শুরু হয়েছে। এই ধান বাজারে এলে চালের দাম কমতে শুরু করবে।
রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে গত বছরের তুলনায় মোটা চালের দাম কেজিতে ৮ থেকে ১২ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের নভেম্বরে খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল পাইজাম ও ব্রি-২৮ মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকায়। দাম বেড়ে গতকাল তা বিক্রি হয় ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়।
বাজারে ব্রয়লার মুরগির দামও কিছুটা কমেছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া সোনালি জাতের মুরগির কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশী মুরগি প্রতি কেজি ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিকে বাজারে গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় আর খাসির গোশত প্রতি কেজি ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এক কেজি ওজনের রুই মাছের দাম ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, দুই-আড়াই কেজি ওজনের দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, আর তিন কেজির বেশি ওজনের হলে দাম হাঁকা হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। মাঝারি ও বড় সাইজের কাতল মাছ ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।