গাজীপুরে ন্যূনতম বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে বৃহস্পতিবারও জেলার বিভিন্ন এলাকায় শিল্প-কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কয়েকটি কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।
এ দিকে শ্রমিক অসন্তোষের মুখে এদিন অর্ধশতাধিক কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা করার মজুরি বোর্ডের ঘোষণা প্রত্যাখান করে বৃহস্পতিবারও আন্দোলনে নেমেছে গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এদিন সকালে মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার হাসান তানভীর ফ্যাশন ও লিবাস নিট ওয়্যার গার্মেন্টসসহ আশপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় এসে কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে।
একপর্যায়ে তারা কারখানা থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। এ সময় তাদের সাথে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে যোগ দেয়। তারা ঢাকা-জয়দেবপুর সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে টায়ার ও কাঠ-বাঁশ জ্বালিয়ে ওই সড়ক অবরোধ করে। পুলিশ বাধা দিলে তাদের সাথে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
এদিকে প্রায় একইসময়ে মহানগরীর বাসন থানাধীন নাওজোর এলাকায় আন্দোলনরত শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। এ সময় তারা আগুন জ্বালিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে তারা উত্তেজিত হয়ে উঠে। শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। তারা ভাঙ্গা ব্রিজ এলাকায় বিভিন্ন কারখানায় ঢিল ছুঁড়ে ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশ ও শ্রমিকদের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে অন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
অপরদিকে মহানগরীর কাশিমপুর, জরুন, হাতিমারা ও কোনাবাড়িসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা দিনভর কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। তারা কাঠ ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও কোনাবাড়ি-কাশিমপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। পুলিশ মহাসড়কের ওপর থেকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। তারা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। দুপুরের খাবারের বিরতির পর তুষুকা গার্মেন্টসসহ আরো বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে যোগ দিলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে অন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বেশ কিছু শ্রমিক মহাসড়ক-সংলগ্ন তুষুকা গার্মেন্টসে ঢুকে পড়ে। তারা ওই কারখানায় হামলা চালিয়ে বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা ধাওয়া দিলে শ্রমিকরা পিছু হটে পালিয়ে যায়।
র্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ সন্ধ্যায় কোনাবাড়ি এলাকায় সাংবাদিকদের জানান, পোশাক শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি ও আন্দোলনের নামে নাশকতা করার অভিযোগে আমরা এপর্যন্ত ২৭ জনকে গ্রেফতার করেছি।
তিনি আরো জানান, একটি কুচক্রি মহল শ্রমিক আন্দোলনের আড়ালে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে রাজনৈতিকভাবে ফায়দা লুটার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে আমরা মনে করি।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: মঈনুল হক জানান, গত ২৩ অক্টোবর থেকে বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করে বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকেরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৭ নভেম্বর মজুরি বোর্ড পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে ঘোষণা দেয়। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তে শ্রমিকরা সন্তুষ্ট না হওয়ায় তারা মজুরি বোর্ডের ঘোষণা প্রত্যাখান করে পরদিন থেকে ফের আন্দোলনে নামে। আন্দোলনরত শ্রমিকরা বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে। একাধিকস্থানে শ্রমিকদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও সর্টগানের গুলি ছুঁড়েছে। এছাড়াও শ্রমিক অসন্তোষের মুখে বিভিন্ন কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।