কক্সবাজার: ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে কক্সবাজারে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে জেলার ৮টি উপজেলার ২৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে এ জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে কক্সবাজারের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানান, কোমেনের প্রভাবে জেলার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চলে ৩/৫ ফুট উচ্চতার পানি উঠেছে। ঘূর্ণিঝড় কোমেনের চারপাশের বাতাসের গতিবেগ ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। এছাড়া কোমেন দুপুর নাগাদ চট্টগ্রাম অতিক্রম করতে পারে বলেও তিনি জানান। বর্তমানে কোমেনের অবস্থান কক্সবাজার থেকে ৬০ কিলোমিটার ও চট্টগ্রাম থেকে ৭৫ কিলোমিটার অদূরে রয়েছে। এদিকে, সেন্টমার্টিনে ঝড়ো হাওয়ায় গাছ পড়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। টেকনাফে অর্ধ শতাধিক বসতবাড়ি বিধস্ত হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের পূর্ব প্রস্তুতি থাকায় ক্ষয়ক্ষতি খুব একটা হয়নি। পুরো জেলায় আশ্রয় কেন্দ্র করা হয়েছে ৯৬টি। প্রত্যেকটি ইউনিয়নে রয়েছে উদ্ধার বাহিনী। উদ্ধার ও উদ্ধার পরবর্তী কাজের জন্য রয়েছে ১০টি স্পিড বোট, ৭টি বাস ও একাধিক ট্রাক ত্রাণ পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি আশ্রয় কেন্দ্রে সেবা নিশ্চিত করার জন্য একজন করে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা রয়েছেন। এছাড়া রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা কাজ করছে দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিকুর রহমান জানান, বাঁকখালী নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে ৩৪ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে এই পানির স্তর থাকে এরও ১০ সেন্টিমিটারের নিচে। তবে মাতামুহুরী পানির উচ্চতা রয়েছে স্বাভাবিক। যদি ভারী বর্ষণ হয় তাহলে অতিরিক্ত বেড়ে যাবে পানির উচ্চতা। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জলোচ্ছাসে সদর উপজেলার ৬টি, রামুর ১টি, চকরিয়ার ৪টি, পেকুয়ার ৪টি, কুতুবদিয়ার ৭টি, মহেশখালির ৩টি, উখিয়ার ১টি ও টেকনাফের ২টি ইউনিয়ন কোমেনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কক্সবাজারের দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবীর জানান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসেব করা হয়নি। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। কক্সবাজার সিভিল সার্জন কমল উদ্দীন মুকুল জানান, আসন্ন দুর্যোগে সার্বিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সব চিকিৎসক ও নার্সদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পুরো জেলায় ৮৮টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তার মধ্যে ৭১টি হল প্রত্যেকটি ইউনিয়নে। আর ১৭টি হল ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম। কক্সবাজার বিমানবন্দরের ম্যানেজার সাধন কুমার মুহন্ত জানান, বিমানের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া বিমানের সব সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল মজিদ জানান, জেলার সব দমকল বাহিনী কাজ করে যাচ্ছেন দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে। তারা লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়াসহ নানাভাবে কাজ করছেন। কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক অনুপম সাহা বাংলানিউজকে জানান, আগাম প্রস্তুতি থাকায় এখনো জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এছাড়া দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি।