ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) উপনির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা।
রোববার (৫ নভেম্বর) তিনি বলেন, আমাকে পরাজিত করতেই ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করা হয়।
তিনি আরো বলেন, এ ক্ষেত্রে ভোটার তালিকায় গড়মিল করাসহ আমার ভোটারদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া আশুগঞ্জের কয়েকটি কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা ভোট ছাপিয়ে ফেলছে। অন্তত সাতটি কেন্দ্রে সুক্ষ্ম কারচুপি চলেছে।
জিয়াউল হক মৃধা অভিযোগ করে বলেন, সরাইলের প্রায় সবকটি ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ করা ভোটার তালিকা ত্রুটিপূর্ণ। সুক্ষ্ম কারচুপির অংশ হিসেবে ইচ্ছাকৃতভাবেই এটি করা হয়েছে। এছাড়া আশুগঞ্জের শরীফপুর, আন্দিদিল, যাত্রাপুর, বড়তল্লা, টেকেরপাড়, চরচারতলা ও নাওঘাট কেন্দ্র্রে নৌকার জাল ভোট দেয়া হয়েছে। শরীফপুর কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বাতিলের দাবি করছি বলে জানান তিনি।
অভিযোগ সম্পর্কে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসককে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। যেহেতু নির্বাচনী ব্যস্ততা সময় কম, তাই লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়নি।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র বসাক বলেন, ভোটার তালিকা ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন থেকে যে তালিকা আমাদের দেয়া হয়েছে, সেই তালিকাই আমরা ভোটের সরঞ্জামের সাথে কেন্দ্রগুলোতে পাঠিয়েছি। কয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
আওয়মী লীগ মনোনিত প্রার্থী শাহজাহান আলম সাজু বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে এটি সত্য নয়, এটি ভিত্তিহীন। ভোটার উপস্থিতির কম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, একই আসনে তিনবার নির্বাচন হচ্ছে এ কারণে ভোটারদের আগ্রহ কিছুটা কম।
আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা কামিল মাদরাসায় গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ভোটাররা জাল ভোট দিতে আসেন। পরে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার বিষয়টি সন্দেহ হলে তাদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন। রাসেল নামক এক স্কুল শিক্ষার্থী জাল ভোট দিতে এলে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে চেয়ারম্যান বলেছে সেজন্য ভোট দিতে এসেছি।
আশুগঞ্জ উপজেলার রওশন আরা জলিল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট না দিয়ে ফিরে যাচ্ছেন মমতা বেগম। তিনি জানালেন, আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার স্লিপ দেয়া হতো এবার সেটা করা হয়নি। যে কারণে তিনি ভোট দিতে পারছেন না। যারা নামের তালিকা নিয়ে বাইরে বসে আছেন তারাও নাম বের করে দিতে পারছেন না। ভেতরে গেলেও বলা হচ্ছে ভোটার নম্বর নিয়ে আসতে।
নির্বাচনের কারচুপির অভিযোগটি মিথ্যা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক ও রিটানিং কর্মকর্তা মো: শাহগীর আলম বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রেই কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। কোথাও কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন চলছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচ প্রার্থী। আওয়ামী লীগের মো: শাহজাহান আলম (নৌকা), জাতীয় পার্টির মো: আবদুল হামিদ (লাঙ্গল), জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম জুয়েল (গোলাপ ফুল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো: রাজ্জাক হোসেন (আম) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা (কলার ছড়ি)।
ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ প্রশাসন। ভোটকেন্দ্র ও এর আশপাশের এলাকার নিরাপত্তায় আট শতাধিক পুলিশ সদস্য, সাত প্লাটুন বিজিবি সদস্যসহ র্যাব, আনসার, জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনে মোট চার লাখ ১০ হাজার ৭২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
উল্লেখ্য, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সাত্তার ভুঁইয়া মৃত্যুবরণ করায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। বিএনপির দলছুট নেতা আব্দুস সাত্তার ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) থেকে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে গত বছরের ডিসেম্বরে দলীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাত্তার।