বগুড়া: বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা এলাকা। সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে জলকামান। পাশেই রাখা হয়েছে সাঁজোয়া যান ‘রায়ট কার’। অস্ত্রে সজ্জিত বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আর্মড পুলিশের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। শহর ও আশেপাশের বিভিন্ন মোড়ের চিত্রও একই। মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) মৃত্যদণ্ডের রায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বহাল রেখেছেন। তাই বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়ায় যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য এমন প্রস্তুতি নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। বুধবার (২৯ জুলাই) ভোর থেকেই সাকা চৌধুরীর রায়কে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র্যাব-পুলিশ বিএনপির এই দুর্গে কঠোর অবস্থান গড়ে তোলে। কিন্তু যাদের জন্য এই রণপ্রস্তুতি এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের কোথাও দেখা মেলেনি। বগুড়া শহর ও আশেপাশের উপজেলা শহরগুলোতেও রায় বিরোধী কোন কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃণমূল বিএনপির কয়েকজন নেতা বাংলানিউজকে বলেন, বগুড়ায় বিএনপির দুর্গে কোন সমস্যা নেই। যত সমস্যা কতিপয় নেতার মধ্যে। সেই সব নেতাদের কারণে এই জেলায় বিএনপির কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে বলে জানালেন তিনি। তৃণমূলের এই নেতা বলেন, বগুড়ায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা নানা গ্রুপে বিভক্ত। বিভিন্ন দ্বন্দ্বে জড়িত। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে। তাই ছোট পরিসরেও কোনো দলীয় কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে না। দলীয় সূত্র জানায়, বগুড়ায় বিএনপির প্রথম সারির কয়েকজন নেতার নামে দুই-তিনটি মামলা থাকলেও সিংহভাগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে। মামলার কারণে তারা ঘর ছাড়া। বর্তমানে তারা ফেরারি জীবন-যাপন করছেন। আবার অনেক নেতাকর্মী কারাগারে। দলীয়ভাবে তাদের জামিনেরও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এসব কারণে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে দেশব্যাপী দুইদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও ২১ জুলাই বগুড়ায় তা পালন করতে পারেন নি জেলা ও শহর ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন বাংলানিউজকে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। আমাদেরও কোন কর্মসূচি পালন করতে বলা হয়নি। তাই এ রায় নিয়ে বগুড়ায় কোনো কর্মসূচি পালন হচ্ছে না বলে জানান তিনি। ‘দলে কোনো সমস্যা নেই’ দাবি করে বিএনপির স্থানীয় এই নেতা বলেন, নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। দলের হাইকমান্ড থেকে সিদ্ধান্ত এলে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করা হবে। তবে বিএনপি নেতা সাকা চৌধুরীর রায় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। এদিকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১২) বগুড়া ক্যাম্পের স্কোয়াড কমান্ডার আরেফা খাতুন জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সার্বক্ষণিক র্যাবের ৩টি টহল দল মাঠে কাজ করছে। এ পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। জেলার মিডিয়া সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি বি-সার্কেল) গাজিউর রহমান জানান, পুরো জেলায় বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত টহলের পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছেন।