রাজধানীর অন্তত ১২টি পয়েন্টে শনিবার মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে দলগুলোরাজধানীর অন্তত ১২টি পয়েন্টে শনিবার মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে দলগুলো
সরকার পতন, নির্বাচন কমিশন গঠন ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠেয় শনিবারের (২৮ অক্টোবর) মহাসমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। নতুন এই কর্মসূচির ধরন ও সময় নির্ধারণ হবে সমাবেশের চরিত্রের ওপর। রাজধানীর অন্তত ১২টি পয়েন্টে শনিবার মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে দলগুলো।
এরই মধ্যে সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়তি নজরদারির কারণে রাজধানীজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মোড়ে মোড়ে চলছে বিভিন্ন বাহিনীর ‘নিরাপত্তাজনিত’ তৎপরতাও।
বিএনপি ও বিরোধী দলগুলোর নেতারা বলছেন, শনিবারের সমাবেশ থেকে ঘেরাও বা অবরোধ ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে। শুক্রবার (২৭) রাতেও এ বিষয়ে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা পৃথকভাবে বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। এরপর চূড়ান্তভাবে ঘোষণার আগে আরও একবার নিজেদের মধ্যে আলাপ করে নেবেন তারা।
একাধিক দলের প্রধান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মহাসমাবেশের দিন সবকিছু শান্তিপূর্ণ থাকলে এক দিন বিরতি দিয়ে কর্মসূচি আসবে এবং সেই কর্মসূচি দেওয়া হবে এককভাবে। যদি সমাবেশের চরিত্র পাল্টে যায় বা কোনও ইনসিডেন্ট ঘটে, সে ক্ষেত্রে সমাবেশের পরদিন (২৯ অক্টোবর) কর্মসূচি থাকতে পারে।
তবে শুক্রবার এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত নেতারা জানান, সিঙ্গেল কর্মসূচি দেওয়া হবে। একেবারেই তা ঢাকাকেন্দ্রিক। পরবর্তী কর্মসূচি আসবে দেশভিত্তিক।
শুক্রবার রাত সোয়া ১০টার দিকে একটি দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, এক দিন বিরতি দিয়ে ঢাকাসহ দেশব্যাপী কর্মসূচি আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে সচিবালয়ের পাশাপাশি দেশের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় অভিমুখে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘ইতোমধ্যে সরকার সারা ঢাকা শহরকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছে। শহরের প্রবেশমুখগুলোয় সর্বত্র তল্লাশির নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। ফোন চেক করা হচ্ছে। যেভাবে প্রক্রিয়া চলছে, তাতে পাকিস্তানি শাসনামলের কথা মনে হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষের ঢল নামবে সমাবেশে। মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে মানুষ তাদের আকাঙ্ক্ষার কথা জানান দেবে।’
নতুন কর্মসূচির বিষয়ে সাইফুল হকের ভাষ্য, কর্মসূচি আসবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পুলিশের অনুমতির মধ্য দিয়ে মহাসমাবেশ নিয়ে যে উত্তাপ ছিল, তা অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে। সে ক্ষেত্রে সমাবেশ থেকে বিএনপির নেতারা কী বার্তা দেন এবং কী কর্মসূচি দেবেন, সেদিকেই সবার লক্ষ্য।
তবে সূত্রটির দাবি, ইতোমধ্যে জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়া এবং দলটির পক্ষ থেকে কর্মসূচি পালনে অনড় অবস্থানের কারণে শনিবার সহিংসতার শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণতন্ত্র মঞ্চের এক প্রভাবশালী নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জামায়াত যেহেতু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি পায়নি, এরপরও তারা সমাবেশ করার কথা জানিয়েছে, সে ক্ষেত্রে তারা কী অবস্থান নেবে, সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাদের পুলিশ বাধা দেবে এবং তাদের সক্রিয়তার ওপর ক্যাজুয়ালটি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মহাসমাবেশের রাজনীতির ফোকাস তাদের ওপরে যাবে। এ বিষয়টি মঞ্চের পক্ষ থেকে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে অবহিত করা হচ্ছে। তারা যেন বাস্তবসম্মত উপায়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে।’
মঞ্চের নেতা সাইফুল হকের ভাষ্য, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ আয়োজনে বদ্ধপরিকর। সরকার উসকানি দিয়ে পরিস্থিতিতে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
রাজধানীর যত জায়গায় হচ্ছে মহাসমাবেশ
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বিএনপির মহাসমাবেশ হবে দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন। এ ছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চ বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে; ১২-দলীয় জোট দুপুর ২টা বিজয়নগর পানির ট্যাংক মোড়; জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট দুপুর ২টা পুরানা পল্টন আলরাজী কমপ্লেক্স সামনে; গণফোরাম ও পিপলস পার্টি দুপুর ১২টা মতিঝিল নটরডেম কলেজ উল্টো দিকে গণফোরাম চত্বর; এলডিপি বেলা ৩টা কাওরান বাজার এফডিসি সংলগ্ন এলডিপি অফিস সামনে; গণ-অধিকার পরিষদ বেলা ১১টা বিজয়নগর পানির ট্যাংক মোড়; এনডিএম দুপুর ৩টা মালিবাগ মোড়; গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য দুপুর ১২টা জাতীয় প্রেসক্লাব সামনে; গণ-অধিকার পরিষদ (ড. রেজা কিবরিয়া ও ফারুক হাসান) বেলা ৩টা পুরানা পল্টন কালভার্ট; লেবার পার্টি দুপুর ৪টা পুরানা পল্টন মোড়ে সমাবেশ করবে।
শায়রুল কবির উল্লেখ করেন, আরও যারা কর্মসূচি পালন করবে, সেই দলগুলো হচ্ছে, এবি পার্টি সকাল ১১টা বিজয়নগর হোটেল ৭১ সামনে (বিজয় ৭১); জনতার অধিকার পার্টি দুপুর ২টা বিজয়নগর পানির ট্যাংক মোড়; বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বেলা ৩টা শাহবাগ জাতীয় জাদুঘর সামনে এবং জাতীয়তাবাদী পেশাজীবী পরিষদ বেলা ১১টা জাতীয় প্রেসক্লাব সামনে সমাবেশ করবে।