সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের ‘মহাযাত্রায়’ নামার আগে আগামীকাল শনিবার রাজধানী ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কেই এই মহাসমাবেশ হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশকে চিঠি দিয়ে দলের এই স্পষ্ট অবস্থানের কথা জানিয়েছে বিএনপি। চিঠিতে জানানো হয়েছে, ‘ঢাকায় মহাসমাবেশ নয়াপল্টন ছাড়া অন্য কোথাও করা সম্ভব নয়’।
বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ আয়োজনের সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মহাসমাবেশে যোগ দিতে দুই দিন আগেই সারা দেশ থেকে দলটির নেতাকর্মীরা ঢাকামুখী হয়েছেন। গ্রেফতার এড়িয়ে নানা কৌশলে তারা ঢাকা পৌঁছাচ্ছেন, আজ শুক্রবারের মধ্যেই তাদের ঢাকায় চলে আসা শেষ হবে।
মহাসমাবেশ সফলের সাথে যুক্ত দলের সিনিয়র এক নেতা গতকাল বিকেলে নয়া দিগন্তকে বলেন, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপি মহাসমাবেশ করতে চায়। তবে সরকারের তরফ থেকে যদি বাধা দেয়া হয়, তাহলে পরিস্থিতি যেকোনো দিকে টার্ন নিতে পারে। আর তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।
বিএনপির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মহাসমাবেশ থেকে চূড়ান্ত আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কর্মসূচি হিসেবে আগামী ৩০ অক্টোবর সচিবালয় ঘেরাওয়ের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রা করে সচিবালয় অভিমুখে ঘেরাওয়ের উদ্দেশে রওনা হবেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে পথিমধ্যে পুলিশ বাধা সৃষ্টি করলে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে কয়েক ঘণ্টার অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করবেন তারা।
জানা গেছে, এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের অংশ হিসেবে সচিবালয় ঘেরাও ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন অভিমুখী ঘেরাওয়ের কর্মসূচি আসতে পারে। এসব কর্মসূচিতে সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিক্রিয়া, আচরণ কী হয়- সেটির ওপর ভিত্তি করে কর্মসূচির ধরনে পরিবর্তন আসতে পারে। সেক্ষেত্রে দাবি আদায়ে টানা অবরোধের কর্মসূচিতে চলে যেতে পারে বিএনপি।
এ দিকে মহাসমাবেশের পর নেতাকর্মীদের ঢাকা না ছাড়তে দলের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। লাগাতার কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফশিলের আগেই এক দফার আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছাতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের ‘এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের’ অংশ হিসেবে আগামীকাল শনিবারের এই মহাসমাবেশটি আহ্বান করা হয় গত ১৮ অক্টোবর। সেই সমাবেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মহাসমাবেশ থেকে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে। ইনশা আল্লাহ তার পরে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আর থেমে থাকব না।’ ঢাকায় মহাসমাবেশের ওই কর্মসূচি দেয়ার পর থেকেই তা সফল করতে প্রস্তুতি শুরু করে বিএনপি। দলের সাংগঠনিক সব স্তরে মহাসমাবেশ সফলের কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকেও মহাসমাবেশ সফলে ‘সর্বশক্তি’ নিয়োগ করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনা পেয়ে সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো ছাড়াও সব সাংগঠনিক জেলা থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় জড়ো হচ্ছেন।
বিএনপি নেতারা বলছেন, মহাসমাবেশে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। সাধারণ মানুষও সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন। অবশ্য বিএনপির পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে ডিএমপিকে জানানো হয়েছে, সমাবেশে এক লাখ থেকে সোয়া লাখ লোক হবে। বিএনপির মহাসমাবেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ আয়োজনে ইতোমধ্যে আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
তবে মহাসমাবেশ ঘিরে ত্রাস সৃষ্টির জন্য, নেতাকর্মীদের ভয় পাইয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসানো হয়েছে, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। কিন্তু এসব করেও জনস্রোত ঠেকানো যাবে না। এটি শুধু বিএনপির সমাবেশ নয়, এটির সাথে সাধারণ মানুষও সম্পৃক্ত হয়েছে। কারণ এই সরকারের ওপর কারো আস্থা নেই। সুতরাং সারা দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে আসবে, এটিই আমাদের প্রত্যাশা। মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, মহাসমাবেশ সফল করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ব্যাপকহারে সাধারণ মানুষও এই সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন। গ্রেফতারসহ কোনো বাধাই জনস্রোত ঠেকাতে পারবে না। এ দিকে পুলিশের তরফ থেকে গত বুধবার বিএনপিকে মহাসমাবেশের বিকল্প ভেনুসহ সাতটি বিষয়ে তথ্য জানাতে যে চিঠি দেয়া হয়েছিল, গতকাল বৃহস্পতিবার তার জবাব দিয়েছে দলটি। সেই চিঠিতে বিএনপি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় ‘মহাসমাবেশ’ নয়াপল্টন ছাড়া অন্য কোথাও করা সম্ভব নয়।
শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়াপল্টনস্থ বিএনপির প্রধান কার্যালয়ের সামনেই আয়োজনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ডিএমপি অন্য যেসব বিষয়ে জানতে চেয়েছে, সেগুলোর জবাবে চিঠিতে জানানো হয়েছে- ১. তাদের সমাবেশটি বেলা ২টায় শুরু হবে, মাগরিবের আজানের আগে শেষ হবে। ২. সমাবেশে এক থেকে সোয়া এক লাখ লোক হতে পারে। ৩. সমাবেশটি পশ্চিমে বিজয়নগর মোড় ও পূর্বে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। ৪. সমাবেশে পশ্চিমে বিজয়নগর মোড় ও পূর্বে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত কিছু দূর অন্তর অন্তর মাইক লাগানো হবে। ৫. সমাবেশে বিএনপি ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন না এবং ৬. সমাবেশে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় দলের নিজস্ব ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবেন।