মাসুদ রানা সরকার, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি :- সকল অপশক্তি বিনাস করে কল্যান প্রতিষ্ঠায় দেবী দূর্গা মর্তোলোক ছেড়ে চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলায় সমাপ্ত হয়েছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা। এবছর এই উপজেলার ৩৯টি মন্দিরে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে গত মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর বগুড়া জেলার ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া গ্রামের ইছামতি নদীর তীরে এবারও বসেছিল ঐতিহ্যবাহী বউ মেলা। এই মেলায় শুধুমাত্র মহিলারাই প্রবেশ করতে পারে। মেলাটিতে পুরষদের প্রবেশ ঠেকাতে প্রধান ফটকে মহিলা স্বেচ্ছাসেবীরা নিয়জিত থাকে। একারনে মহিলারা স্বাচ্ছন্দে কেনা-কাটা করতে পারে। তাই যুগ যুগ ধরে এই মেলাটির নামকরণ হয়ে আসছে ‘বউ মেলা’ নামে। এ মেলাকে ঘিরে প্রতি বছর হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।যুগ যুগ ধরে ধুনট সদরপাড়া, দাসপাড়া, কলেজপাড়া ও সরকারপাড়া সহ আশপাশের পূজা ম-পের প্রতীমা সরকারপাড়া ইছামতি নদীতে বিসর্জন দেওয়া হতো। তাই প্রতীমা বিসর্জন ঘিরে দূরদূরান্ত থেকে হরেক রকমের দোকানীরা এসে ইছামতি নদীর তীরে পণ্যের পসরা সাজিয়ে মেলা বসাতো। কিন্তু ২০২১ সাল থেকে শুধুমাত্র সরকারপাড়া মন্দিরের প্রতীমাই সেখানে বিসর্জন দেয়া হয়। এরপর থেকেই সেই শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বউ মেলা তার প্রাচীন ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। বউ মেলার নারী বিক্রেতা স্বরস্বতী রানী বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে এই মেলায় ব্যবসা করি। কিন্তু এবারের মেলা যেন অন্য রকম। সেই পুরো ঐতিহ্য আর নেই। শতাব্দী প্রাচীন এই মেলায় যুগ যুগ ধরে ৭-৮টি এলাকার প্রতীমা একসঙ্গে এই সরকারপাড়া ইছামতি নদীতে বিসর্জন দিত। তখন প্রায় একদিনেই প্রায ৩০-৪০ হাজার টাকা বিক্রি-বাট্টা হতো। কিন্তু গত ৩ বছর ধরে শুধুমাত্র সরকারপাড়া মন্দিরের প্রতীমাই এখানে বিসর্জন দেয়া হয়। তাই আগের মতো আর লোক সমাগম নেই। তবে মেলায় হিন্দু ধর্মালম্বী লোকজন আসে ভক্তি আর মানত নিয়ে। কিন্তু অন্য ধর্মের লোকজন আসে আনন্দ আর উৎসব করতে। দেবী দূর্গা মর্তোলোক ছেড়ে চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখাই এই মেলার প্রধান আকর্ষন। মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী ৭১তম এই ‘বউ মেলার’ সমাপ্তি ঘটে।মেলায় আগত ক্রেতা স্মৃতি রানী জানান, শেরপুর উপজেলা থেকে এই বউ মেলায় এসেছেন। মেলার ভিতরে কোন পুরুষ লোক না থাকায় অনেক স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করেছেন এবং দামটা এবার কিছুটা বেশি ছিল বলেও জানান তিনি। তারপরও পরিবারের সঙ্গে এই মেলার আনন্দ উপভোগ করেছেন। বউ মেলার দোকানী চাঁন মিয়া বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বগুড়া এই বউ মেলায় ব্যবসা করতে এসেছি। কিন্তু এবছর তেমন কোন বিক্রি নেই। তাই হতাগ্রস্থ হয়ে ফিরে যেতে হবে। ধুনট উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ কুমার ঘোষ জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এই উপজেলায় দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি পূজা ম-পে স্বেচ্ছাসেবী কর্মী, পুলিশ ও আনসার-ভিডিপির সদস্যরা নিয়েজিত ছিল।ধুনট পৌরসভার মেয়র এজিএম বাদশা জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সরকারপাড়া বউ মেলাটি। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আগত হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের হাজারো মানুষের সমাগমে এবারও মুখরিত ছিল মেলাটি। কিন্তু তারপরও আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে বসেছে শতাব্দী প্রাচীন এই মেলাটি।ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ধুনট উপজেলার ৩৯টি পূজা মন্ডপে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি পূজা মন্ডপে রাত-দিন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত ছিল।