স্থানীয় বাজারে ডলার সঙ্কট দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এই সঙ্কট মেটাতে ব্যাংকগুলো নানাবিধ পদক্ষেপ নিচ্ছে। আর এটা করা হচ্ছে কখনো নিয়ম ভেঙে, আবার কখনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অমান্য করে। ব্যাংকগুলো এখন নিজেরাই নিজেদের সিদ্ধান্ত মানছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরোক্ষ নির্দেশনায় ব্যাংকগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে সর্বোচ্চ ব্যয় করতে হবে প্রতি ডলারে ১১০ টাকা। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত এখন নিজেরাই অমান্য করে ১১৩ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা পর্যন্ত মূল্যে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে কেউ কেউ। এখন প্রশ্ন হলো, ১১৮ টাকা মূল্যে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে কত টাকায় তা বিক্রি করবে। এখানেও সেই একই অবস্থা। ব্যাংকগুলো নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রি করা হবে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দরে। কিন্তু এ সিদ্ধান্তও অনেকেই মানছে না। বেশি দামে ডলার কিনে বেশি মূল্য নেয়া হচ্ছে। তবে তা সরাসরি না নিয়ে কখনো করপোরেট ডিলিংসের নামে বা কখনো অগ্রিম ডলার বিক্রির নামে বাড়তি প্রিমিয়াম নিয়ে। এভাবে কোনো কোনো আমদানিকারকের কাছ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত ডলারের মূল্য নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: মেজবাউল হক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, রেমিট্যান্সের ডলারের মূল্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো শিথিলতা দেয়া হয়নি। রেমিট্যান্সের মূল্যতো নির্ধারণ করাই আছে। কিন্তু কেউ যদি বেশি দামে ডলার আনে তাহলে এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তারা লোকসান দিয়ে কম দামে ডলার বিক্রি করবে। তিনি বলেন, বেশি দামে ডলার বিক্রির জন্য ১০ ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। সুতরাং বেশি দামে ডলার বিক্রি যারাই করবে তাদেরকে একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার শিথিলতা দেখাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, ডলারের মূল্য নিয়ে কোনো প্রকার শিথিলতা দেয়া হয়নি। শুধু ডলার থেকে অন্য মুদ্রায় রূপান্তের ক্ষেত্রে শিথিলতা দেয়া হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ডলারের আন্তঃব্যাংকের মূল্যকেই ভিত্তি ধরে করতে হবে। যেমন, দিনের বিভিন্ন সময় ইউরোর মূল্য উটা নামা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ডলারের আন্তঃমূল্য ১১০ টাকা ৫০ পয়সাকে ভিত্তি দরে ইউরোর মূল্য রূপান্তর করতে পারবে ব্যাংকগুলো। তিনি বলেন, এটাকেই কেউ কেউ ভুল ব্যাখ্যা করে বলছে ডলারের মূল্যের ক্ষেত্রে শিথিলতা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এক দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ, অপর দিকে গ্রাহকের চাপ সবমিলেই তারা বিপাকে পড়েছেন। কারণ, বাফেদা রেমিট্যান্সের ডলারের অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ করলেও এ মূল্য কেউই মানছে না। বলা হয়েছে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করতে পারবে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা দরে। কিন্তু ব্যাংকভেদে ১১৩ টাকা থেকে ১১৮ টাকা পর্যন্ত দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে কেউ কেউ। যারা নিয়ম মানতে যাচ্ছে তারাই পড়ছে বেকায়দায়। কারণ, একজন নিয়ম মেনে ১১০ টাকা দরে রেমিট্যান্স আনছে। কিন্তু অন্য ব্যাংক দিচ্ছে ১১৮ টাকা। ফলে নিয়ম মানতে গিয়ে তার ব্যাংক রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারছে না। এ দিকে গ্রাহকের পণ্য আমদানিতে ডলার সরবরাহ করতে না পারলে অন্য ব্যাংকে চলে যাচ্ছে। এখন বেশি দামে ডলার এনে কিভাবে কম দামে বিক্রি করছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সোজা কথা হলো, তারা বেশি দামে ডলার কিনে নানা কৌশলে বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে। তবে, সরাসরি বেশি দামে ডলার বিক্রি না করে করপোরেট ডিলিংস বা আগাম ডলার বুকিংয়ের নামে বেশি দাম নিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট করছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু এর সাথে ১০ শতাংশ বাড়তি প্রিমিয়াম নিয়ে ১২৩ টাকা পর্যন্ত ডলার বিক্রি করছে। মুদ্রাবাজারে এ অস্থিরতার কারণে নিয়ম মেনে চলা ব্যাংকগুলো পড়েছে বেকায়দায়। তারা কাক্সিক্ষত পরিমাণ রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে না পারায় গ্রাহক ধরে রাখতে পারছে না। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই আরো শক্ত অবস্থান নিতে হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।