বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার ভোট চোরের চেয়ে বড় হলো এরা সংবিধান চোর। এদের কোনো ক্ষমা নাই।’
সোমবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার লক্ষ্যে বিদেশ প্রেরণসহ এক দফা দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে যুবদল।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি টিম এসেছিল। এই দলটি কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের টিম নয়, এটি সম্পূর্ণ স্বাধীন একটি টিম। তারা এসেছিল, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিস্থিতি আছে কি না, এটা যাচাই এবং বাংলাদশের নির্বাচনে পর্যবেক্ষণে বড় কোনো টিম পাঠাবে কি না- এই হলো তাদের উদ্দেশ্য। তারা বাংলাদেশের সকল নির্বাচনী স্টেক হোল্ডাদের সাথে কথা বলেছে। সাংবাদিক, রাজনীতিক দল, সুশীল সমাজ, সরকার সবার সাথে আলোচনা করেছে। তারা পাঁচটি সুপারিশ দিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো সংলাপের কথা।’
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্য মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা যে সরকারে বসে আছেন সেটি সাংবিধানিকভাবে বৈধ- এটা প্রমাণ করতে হবে। আমি প্রমাণ করেছি, আপনারা সাংবিধানিকভাবে অবৈধ।’
আজকের সমাবেশকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের এই সমাবেশ সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে যে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হতে যাচ্ছে, এই সমাবেশ নিঃসন্দেহ সেক্ষেত্রে অনেক শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। আমাদের একটাই লক্ষ্য এখন- জনগণকে সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বুকের ওপর যে জগদ্দল পাথর চেপে আছে, তাদেরকে সরানো।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা স্লোগানে ভোট চোর চোর বলি না? এরা ভোট চোরের চেয়ে বড়; এরা সংবিধান চোর। এদের কোনো ক্ষমা নাই।’
সমাবেশের বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজকের সমাবেশে যত যুবক, এত যুবক আমাদের সময় ছিল না। সেইসময় আমরা যুবকদের নিয়ে স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করেছিলাম।’
যুবদল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যুবদল তো এখন অনেক সংগঠিত, তোমরা কেন এই সরকারকে নাড়া দিতে পারছ না? আন্দোলন কিন্তু অল্প দিনের মধ্যে শুরু হবে। তোমাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে।’
‘এ দেশে চোরের জামিন মিললেও আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দিচ্ছে এই সরকার,’ বলেন মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেন, সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের ভয় পায়, সেজন্য ৪৩ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এই ৪৩ লাখ নেতাকর্মী যদি ঢাকায় আসে কিসের আইন, বিচার, কিছু টিকতে পারবে না আর।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘যখন পর্যন্ত এই সরকারের পতন ঘটাতে না পারবো ততক্ষণ পর্যন্ত সমাবেশ সফল হওয়ায় তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে কোনো লাভ নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, এই সরকার মরণ কামড় দিবে, কিভাবে উল্টা কামড় দেয়া যায় সেই কাজ আমাদের করতে হবে। বিনা কারণে আমরা তাদেরকে ছাড় দিতে পারি না। কোনো অন্যায়-অত্যাচার, নিপীড়ন করতে সংবিধান বলেনি। রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ যে জুলুম করছে সেটা সংবিধান বলেনি।’
যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে ও সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, দক্ষিণের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা: ফরহাদ হালিম ডোনার, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সসহ যুবদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।