গাজায় ইসরাইলি হামলায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠেছে। সেখানকার হাসপাতালগুলোতে প্রায় প্রতি মিনিটে আসছে একজন আহত রোগী।
এদিকে, জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার অফিস জানিয়েছে, গাজার হাসপাতালগুলোতে জ্বালানি তেলের সরবরাহ সম্ভবত আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস এলাকার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল নাসের হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সগুলো সমানে আনছে হতাহতদের।
সেখানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় হাসপাতালের বাইরে আহতদের চিকিৎসায় অস্থায়ী তাঁবু টানানো হয়েছে।
খান ইউনিস এলাকার সব হাসপাতালের অবস্থাই বিপর্যয়। সেখানকার কর্মীরা ইসরাইলি হামলায় আহতদের সেবা দিতে গিয়ে মারাত্মক হিমশিম খাচ্ছে। তার ওপর রয়েছে পানি ও বিদ্যুতের অভাব।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা একথা জানিয়েছেন।
নাসের হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ কানদিল আলজাজিরাকে বলেন, অবস্থা খুবই বিপর্যয়কর। গত এক সপ্তাহ ধরে এখানে স্রোতের মতো আসছেন আহত নাগরিকরা। হাসপাতালের বেডের প্রয়োজনীয়তা বহুগুণ বেড়ে গেছে।
তিনি জানান, গত এক ঘণ্টায় তারা ৬০ জন আহত ব্যক্তিকে পেয়েছেন। সে হিসাবে প্রতি মিনিটে আসছেন একজন আহত রোগী।
‘হাসপাতাল আর কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছে না। বিদ্যুৎ নেই। তেল দিয়ে চলা জেনারেটর বন্ধ হয়ে যেতে চলেছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে একসময় হাসপাতালটি গণকবরে পরিণত হয়ে যেতে পারে,’ বলেন তিনি।
দক্ষিণ গাজায় এখনো পৌঁছেনি কোনো খাবার পানি
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে এখনো কোনো পানি পৌঁছায়নি। জাতিসঙ্ঘে নিশ্চিত করেছে যে, সেখানকার বাসিন্দারা খাবার পানির জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
গাজার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, সেখানকার বাসিন্দারা অস্বাস্থ্যকর পানি পান করছে। ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইয়াদ আল-বোজোম জানিয়েছেন, অবরুদ্ধ এ উপত্যকায় গত ১০ দিনে কোনো খাবার পানি সরবরাহ করেনি ইসরাইল।
সমঝোতার চেষ্টা চালাতে মধ্যপ্রাচ্য যাচ্ছেন জাতিসঙ্ঘের সাহায্য সংস্থার প্রধান
জাতিসঙ্ঘের সাহায্য সংস্থার প্রধান মার্টিন গ্রিফিথ জানিয়েছেন, তিনি অবরুদ্ধ গাজায় সাহায্য পাঠানোর সমঝোতার চেষ্টা চালাতে মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাচ্ছেন।
তিনি জানান, তারা ইসরাইল, মিসর ও অন্যান্য দেশের সাথে এব্যাপারে ‘গভীর আলোচনা’ চালাবেন।
এক বিবৃতিতে তিনি জানান, তিনি আগামীকাল গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে যাচ্ছেন।
মানবিক করিডোর স্থাপনের আহ্বান আরব লিগের
গাজায় ইসরাইলি সামরিক অভিযান অতিদ্রুত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে আরব লিগ। সেখানে ত্রাণ যেতে দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান আহমেদ আবুল গেইত।
ইরাকের বাগদাদে এক বৈঠকে তিনি বলেন, আমরা অনতিবিলম্বে গাজায় ইসরাইলি আক্রমণ বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। সেইসাথে সেখানকার জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে মানবিক করিডোর খোলার দাবি জানাচ্ছি।
গাজার অন্তত ১০০০ মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা
ইসরাইলি হামলায় গাজার ধ্বংস হওয়া ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপের নিচে এক হাজারেরও বেশি মানুষ আটকা পড়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি নাগরিক প্রতিরক্ষা দল।
এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, আটকাপড়াদের অনেকে আহত অবস্থায় আছে আবার কেউ কেউ মারা গেছে। অনেককে আবার উদ্ধারও করা সম্ভব হয়েছে।
গাজায় চলমান ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৭৫০ জনের মতো ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরো অন্তত ৯ হাজার ৬০০ জন।
সূত্র : আলজাজিরা