সংসদের বাইরের কোনও দলকে বিদেশে বিরোধী দল হিসেবে মনে করা হয় না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যাদের নির্বাচন করার মতো সাহস নেই, যারা নির্বাচন করে সংসদে আসতে পারে না, তারা আবার বিরোধী দল কিসের? গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংসদ সদস্য হিসেবে বিরোধী দলে যাদের আসন তারাই বিরোধী দল। আর রাস্তায় কে ঘেউ ঘেউ করে বেড়ালো, সেটাতে কিন্তু বিদেশে কখনও বিরোধী দল হিসেবে ধরে না। এটা সবার মনে রাখা উচিত।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান ও যুক্তরাজ্য সফরের নানা দিক তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে তিনি বলেন, অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বী থাকতে হবে। বিরোধী দল থাকতে হবে। কিন্তু বিরোধী কে? যাদের সংসদে একটি সিট নেই তাদের বিরোধী দল হিসেব করে তো রাখা যায় না। বলা যায় না।
বিএনপিকে আন্দোলনের সুযোগ দেওয়ার প্রতি ইঙ্গিত তরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তো ওদের খুলে দিয়েছি, তোমাদের যা খুশি করো। কাজের মাধ্যমে মানুষের হৃদয় অর্জন করে আসো।
তিনি বলেন, এত টেলিভিশন খুলে দিয়েছি। টকশোতে যে যা পারছেন, টক কথা মিষ্টি কথা বলে যাচ্ছেন। খুব বলেন, কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু সারা দিন কথা বলার পর যদি বলেন আমাদের কথা বলতে দেয় না, আর বিএনপির তো মাইক একটা লাগানো থাকে। আর বলেন আমাদের মিটিং মিছিল করতে দেওয়া হয় না। যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, আমাদের সঙ্গে কী আচরণ করতো? আমরা যদি তার একটা কণাও করতাম তাহলে তো ওদের অস্তিত্বই থাকতো না, থাকবে অস্তিত্ব? থাকবে না।
তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ায় যুদ্ধ, প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেল। পরিবহন খরচ বেড়ে গেলো। আমরা তো তাও খেয়ে-পরে আছি। যান না, আমেরিকায় যান, ইংল্যান্ডে যান। বিভিন্ন দেশে যান সেখানকার মানুষের কী অবস্থা! ওই একটা টমেটো কয়শ’ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। একটা রুটি কতো দিয়ে কিনতে হয়। সেখানে নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। বেশি জিনিস কিনতে পারবে না।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন দেশ সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত খাদ্যমন্দা। এটা কেউ বলবে কেউ বলবে না। আমি নিজেই তো কয়েকটা দেশ দেখলাম। সেখানে যে কী অবস্থা আমরা জানি। ওয়াশিংটনে তো বাজার-টাজার করে আমরা রান্না করে খেয়ে আসছি। এক পিস মাছ কিনতে বা দুই টুকরো মুরগি কিনতে কত শত টাকা খরচ হয় সেটা তো আমরা নিজে দেখে আসছি। কিন্তু আমরা মানুষের পাশে আছি। যাতে মানুষের কষ্ট না হয়।
পাঙ্গাশ মাছ খাওয়া নিয়ে কোনও একজনের বক্তব্যের উদ্বৃতি টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন বলে দিলেন পাঙ্গাশ মাছ খেতে পারেন না। আমি যদি জিজ্ঞাসা করি ২০০৯ বা ১৯৯৬ সালের আগে কে কত পাঙ্গাশ মাছ খেয়েছেন। মানুষ যেখানে আগে নুনভাত খেতে পারতো না, এখন অন্তত পাঙ্গাশ মাছের কথা চিন্তা করে। এই মাছ আগে বরিশাল আর যমুনা নদীতে পাওয়া যেত। সারা দেশে পাওয়া যেত না। গবেষণার মাধ্যমে এটি চাষ হয় এবং সারা দেশে পাওয়া যায়। যেখানে মানুষ নুনভাতের জন্য হাহাকার করতো। ফেন চাইতো, নুনভাত চাইতো, সেখানে মানুষ মাছ মাংস ডিম খাওয়ার জন্য চিন্তা করতে পারে। এইটুকু মানুষের জন্য করতে পারছি, আমি ওইভাবে দেখি। আমাদের যতটুকু সাধ্য ছিল সেটা করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আগে বিদেশে বাংলাদেশ শুনলে সবাই নাক সিটকাতো। এখন আর সিটকায়? বাংলাদেশের নাম শুনলে এখন আলাদা মর্যাদা নিয়ে তাকায়। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখে। এটা বাসাতে হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে দেশের উন্নতি করি।