বিশ্বকাপের প্রতিশোধ বিশ্বকাপেই নিলো নিউজিল্যান্ড। যেই ইংল্যান্ডের কাছে হাতছাড়া করেছিল শিরোপা, তাদের হারিয়েই শুরু করলো নতুন আসরের সূচনা। যদিও শিরোপা ফিরে পাওয়া হয়নি, তবে শিরোপা জয়ের রসদ পেয়ে গেছে দলটি।
উদ্বোধনী ম্যাচে উড়িয়ে দিলো থ্রি লায়ন্সদের। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বড় হারের তিক্ত স্বাদ উপহার দিয়েছে কিউইরা। ২৮২ রান সংগ্রহ করেও ৯ উইকেটের বিশাল ব্যাবধানে হেরেছে ইংল্যান্ড। কিউইদের হয়ে জোড়া শতক হাঁকিয়েছেন ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবিন্দ্র।
দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বরাবরই উত্তেজনা ছড়ায়। যার প্রমাণ আছে পরিসংখ্যানেও। পরিসংখ্যানে দু’দলের জয়ের পাল্লা এতোদিন ছিল ৪৫-৪৪। আজ জিতে তাতে সমতা ফেরাল কিউইইরা।
ইংল্যান্ডের দেয়া মধ্যমানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় নিউজিল্যান্ড। ১০ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। গোল্ডেন ডাক মেরে ফেরেন উইল ইয়ং। তবে এরপর আর উইকেটের মুখ দেখা হয়নি ইংলিশ বোলারদের। তাদের কোনো সুযোগই দেননি কনওয়ে-রাচিন জুটি।
ভারত বিশ্বকাপের প্রথম শতক তুলে নেন ডেভন কনওয়ে। আসরের উদ্বোধনী ম্যাচেই দেখা পেয়ে যান তিন সংখ্যার ম্যাজিক্যাল ফিগারের। বেশ দাপুটে ব্যাট করেই ছুঁয়েছেন শতক, মাত্র ৮৩ বলে ১৩ চার ৩ ছক্কায় এই কীর্তি গড়েন তিনি।
খানিক বাদে শতক তুলে নেন রাচিন রবিন্দ্রও। ৮২ বলে ক্যারিয়ারে প্রথমবার তিন অংক স্পর্শ করেন তিনি। এটাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার প্রথম শতক। নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের জায়গায় খেলতে নেমে তার অভাব বুঝতেই দেননি রাচিন। দুর্দান্ত খেলেছেন পুরো ইনিংসজুড়ে।
ইতিহাস গড়া জুটি গড়েই দলকে পৌঁছিয়েছেন জয়ের বন্দরে। ২১৪ বলে যোগ করেন ২৭৩ রান। যা বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই চতুর্থ সেরা জুটি। বিশ্বকাপে যা নিউজিল্যান্ডের সেরা জুটি। আর সব মিলিয়ে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় সেরা জুটি।
দু’জনের এমন রেকর্ড গড়া জুটিতে ১৩.৪ বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করেছে নিউজিল্যান্ড। জয় দিয়েই বিশ্বকাপ শুরু করলো তারা।
এদিন ইংল্যান্ডের পক্ষে জো রুট ছাড়া বড় ইনিংস আসেনি কারো ব্যাটে। অধিনায়ক জশ বাটলার চেষ্টা করেছিলেন বটে, তবে ইনিংসটাকে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানে রূপ দিতে পারেননি। বাকিরাও ভালো শুরু পেয়েছিলেন, তবে থিতু হতে পারেননি মাঠে। তবে লোয়ার অর্ডারের দৃঢ়তায় চোখ রাঙানো সংগ্রহই পায় থ্রি লায়ন্সরা।
আহমেদাবাদে বেশ ভালো শুরু পেয়েছিল দলটি। ৭.৩ ওভারে তুলে ফেলেছিল ৪০ রান। তবে এরপরই শুরু হয় বিপত্তি, ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেনি কেউ।
৭.৪ ওভারে ডেভিড মালান ফিরলে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। ম্যাট হ্যানরির শিকার হয়ে মালান ফেরেন ২৪ বলে ১৪ রানে। তিনে নামা জো রুটকে নিয়ে ইনিংস এগিয়ে নিচ্ছিলেন বেয়ারেস্টো। তবে ১২.৫ ওভারের মাথায় সান্টনারের বলে ডেরিয়েল মিচেলকে ক্যাচ অনুশীলন করার বেয়ারেস্টো। ৩৫ বলে ৩৩ করেন তিনি।
হ্যারি ব্রুক সাহসী শুরু করেছিলেন। রাচিন রবিন্দ্রকে জোড়া চার ও এক ছক্কায় তুলে নিয়েছিলেন ১৪ রান। তবে পরের বলেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ১৬ বলে ২৫ রান আসে তার ব্যাটে। ৯৪ রানে ৩য় উইকেটের পতন হয় থ্রি লায়ন্সদের।
মইন আলি উঠে এসেছিলেন চারে। তবে তিনিও ব্যর্থ ইনিংস বড় করতে। ১৭ বলে ১১ করে গ্ল্যান ফিলিপসের বলে বোল্ড হন তিনি। ১১৮ রানে ৪ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। সেখান থেকে ইংলিশদের টানেন জো রুট ও জশ বাটলার। ৭২ বলে ৭০ রানের ইনিংস সর্বোচ্চ জুটি গড়েন দু’জনে।
৩৩.২ ওভারে ৪২ বলে ৪৩ করে আউট হন বাটলার। লিয়াম লিভিংস্টোনও ইনিংস টানতে পারেননি, ২২ বলে ২০ করে থামেন তিনি। দলের সংগ্রহ তখন ২২১/৬। এরপর ৩১ রান যোগ হতেই আরো ৩ উইকেট হারায় থ্রি লায়ন্সরা। ফেরেন একপ্রান্ত আগলে রাখা জো রুটও। ৮৬ বলে ৭৭ করে গ্লেন ফিলিপসের দ্বিতীয় শিকার হন তিনি।
তাছাড়া স্যাম কুরান ১৪, ক্রিস ওকস ১১ করে আউট হন। তবে শেষ উইকেট জুটিতে ৩০ রান তুলে দলকে লড়াইয়ে রেখেছেন আদিল রাশিদ ও মার্ক উড। রাশিদ ১৫ ও উড করেন ১৩ রান। ৩ উইকেট নেন ম্যাট হেনরি, দুটো করে উইকেট পান সান্টনার ও গ্লেন ফিলিপ।