বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেয়া নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যপরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় সরকারি মহলও বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই বেগম জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর জন্য নতুন করে আবেদনও করা হয়েছে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায় গতকাল বিকেলে বেগম জিয়াকে আবারো সিসিইউতে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। রাতে আবার কেবিনে নেয়া হয়।
দীর্ঘ ৫০ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়া। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে তার। তবে স্বাস্থ্যের তেমন কোনো উন্নতি নেই। বরং দিন দিন অবস্থার অবনতির দিকেই। মাঝে-মধ্যেই দেখা দিচ্ছে শ^াসকষ্ট। এ কারণেই বার বার নিতে হচ্ছে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ)। বেগম জিয়া লিভার সিরোসিসে ভুগছেন। তার পেটে পানি জমছে বারবার। সেটা বের করতে হচ্ছে নিয়মিত। তার অবস্থা জটিল থেকে জটিল হচ্ছে। ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছেন।
তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে এলেও সরকার এতদিন আমলে নেয়নি। তবে গত কিছু দিনে বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা চলছে। সরকারি তরফে নতুন আবেদন করার কথা জানানোর পর এরই মধ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে নতুন করে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনটি বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দ্রুতই এ ব্যাপারে মতামত দেয়া হবে।
সূত্র মতে, খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে এখন সরকার ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে। এ ব্যাপারে বিএনপিকে সবুজ সঙ্কেত দেয়া হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকেও ইতোমধ্যেই কোন দেশে নিলে ভালো চিকিৎসা সম্ভব হবে তার খোঁজাখবর নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সাথে কথা বলেছেন। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জার্মান ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত। সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে চিকিৎসা সম্ভব বলে বিএনপি মহাসচিবকে জানিয়েছেন তিনি।
এই আলোচনার সূত্র ধরে অনেকে মনে করছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানি নেয়া হতে পারে। এ ব্যাপারে আজকালের মধ্যেই বিএনপির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
তবে সরকার বিএনপির সিদ্ধান্তের আলোকে তাদের পছন্দের দেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি দেবে কি না তা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। কেউ কেউ মনে করছেন, সরকার শেষ পর্যন্ত অনুমতি দিলেও দেশের নাম উল্লেখসহ নানা শর্ত যুক্ত করে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড কিংবা এশিয়ার কোনো দেশে চিকিৎসা করানোর অনুমতি দেয়া হতে পারে। কিন্তু বিএনপি জার্মানি কিংবা যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যেই বেগম জিয়াকে চিকিৎসার জন্য নিতে চায় বলে বিএনপির নেতাদের সাথে আলাপে জানা যায়। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের এখন যে অবস্থা তাকে উন্নততর চিকিৎসা দেয়ার জন্য জার্মানি যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যের বিকল্প নেই।
বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর বিষয়ে সরকারের তরফে এখনো কিছু জানানো হয়নি।
বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা বলছেন, লিভার সিরোসিস ছাড়াও বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন তিনি। সেজন্য তার অতি উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। এ কারণেই শুরু থেকেই মেডিক্যাল বোর্ড কয়েকটি দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দিয়ে আসছেন। সেগুলো হলো জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্য। তবে সরকার অনুমতি দিলে মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা যে দেশে পাঠানোর পরামর্শ দেবেন সেদেশে পাঠানো হবে।
বেগম খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়। তখন থেকে তিনি গুলশানের বাসভবনে অবস্থান করে আসছেন। কারাগারে থাকাকালীন থেকেই খালেদা জিয়া নানা রোগে ভুগছেন। এর আগেও কয়েক দফায় তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। বিএনপি তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার জন্য আবেদন জানিয়ে এলেও সরকারি তরফে বলা হয়, তার চিকিৎসা দেশেই সম্ভব। সেক্ষেত্রেও সরকার হাসপাতাল নির্ধারণ করে দিতে চায়। সর্বশেষ এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসার অনুমতি পান।
ফের সিসিইউতে খালেদা জিয়া
সর্বশেষ গতকাল বিকেলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কেবিন থেকে আবারো করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে। বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এই নিয়ে গত ৯ আগস্ট থেকে তাকে তৃতীয়বারের মতো সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি হওয়ায় আজ বিকেল ৫টার দিকে ৭ম তলার কেবিন থেকে ৪র্থ তলার সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। খালেদা জিয়া লিভার জটিলতার সাথে অন্যান্য রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় তাকে সেখানে নেয়া হয়। রাতে আবার কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, মেডিক্যাল বোর্ডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধায়নে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন ম্যাডাম।