ভারতের মণিপুর রাজ্যে আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এবার মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের পৈতৃক বাড়িতে হামলার চেষ্টা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ইম্ফলে বীরেন সিংহের পৈতৃক বাড়িতে হামলা চালানোর চেষ্টা করে জনতার একটি দল। পরিস্থিতি সামলাতে শূন্যে গুলি চালায় পুলিশ। নিরাপত্তাবাহিনীর চেষ্টায় হামলার ঘটনা এড়ানো হয়। ওই ঘটনার সময় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে কেউ ছিলেন না।
উল্লেখ্য, গত পরশু মণিপুরে আফস্পার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় আরো ছয় মাস। এরপরই গতকাল এই হামলা হয় বীরেনের পৈতৃক বাড়িতে।
ইম্ফলে অন্য একটি বাড়িতে থাকেন বীরেন সিংহ। নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে থাকে ওই বাড়ি। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হামলার চেষ্টার ঘটনা ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে ওই রাজ্যে। পরে এক্স হ্যান্ডলে (টুইটার) মণিপুর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বাড়িতে হামলার চেষ্টা হয়নি।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইম্ফলের হেইনগাং এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর পৈতৃক বাড়িতে হামলার চেষ্টা হয়েছিল। বিভিন্ন দিক থেকে দু’টি দল বাড়িটির দিকে এগোচ্ছিল। বাড়ি থেকে ১০০-১৫০ মিটার দূরত্বে জনতার দলকে আটকে দেয় নিরাপত্তা বাহিনী।’ ওই কর্মকর্তা আরো জানিয়েছেন, ওই বাড়িটিতে কেউ থাকেন না। তবুও বাড়িতে সর্বদা নজরদারি চালানো হয়।
জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটান র্যাফ এবং রাজ্য পুলিশের কর্মীরা। গোটা এলাকায় বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। বাড়ির সামনে আরো ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। বাড়ির সামনের রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিক্ষোভকারীরা। তবে এই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
কুকি ও মেইতেইদের সংঘর্ষ ঘিরে গত ৩ মে থেকে উত্তপ্ত রয়েছে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য। সম্প্রতি ওই রাজ্যের দুই শিক্ষার্থীকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। একটি ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। ছবিতে দেখা গেছে, আততায়ীদের সাথে বসে রয়েছে দুই শিক্ষার্থী। অন্য একটি ছবিতে তাদের লাশ দেখা গেছে। অবশ্য. এখন পর্যন্ত ওই দুই শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার করা যায়নি। এই ছবি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে মণিপুরে। বুধবার সকালে ইম্ফলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। মণিপুর সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তারা। বুধবারের বিক্ষোভে পুলিশের লাঠির ঘায়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জখম হয়েছেন বলে দাবি। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। যদিও পড়ুয়াদের অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। পুলিশের পাল্টা দাবি, শিক্ষার্থীরাই তাদের উপর আক্রমণ চালায়।
মণিপুরে দুই শিক্ষার্থীর হত্যাকাণ্ডে দোষীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সেই আশ্বাসে যে চিড়ে ভেজেনি, বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনাতেই তার আঁচ পাওয়া গেল।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস, আনন্দবাজার পত্রিকা এবং অন্যান্য