শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, দেশের মানুষও সরকারকে স্যাংশন দিয়েছে : মির্জা ফখরুল

Slider বাংলার মুখোমুখি


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, দেশের মানুষও সরকারকে স্যাংশন দিয়েছে।

রোববার বিকেলে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

যারা বিচারের নামে অপবিচার করছে তাদেরকে চিহ্নিত করে রাখুন- এমন কথা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এরা সরকারের দালাল, এদেরকে চিহ্নিত করে রাখুন, নিম্ন আদালতের রায় দিয়েছিল ৫ বছর অথচ উচ্চ আদালত তা বাড়িয়ে ১০ বছর করেছে।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৪টি নির্বাচন হয়েছিল, তাতে কোনো প্রকার প্রশ্ন উঠেনি। দেশের মানুষের যেন ভোটের প্রতিফলন ঘটে। সেই জন্যই তিনি (খালেদা জিয়া) এই ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে সেই ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এরপর থেকে ১৪ ও ১৮ সালে কোনো ভোট হয়নি। কী হয়েছে দেশের মানুষ তা জানে।

‘আমরা নির্বাচন চাই, তবে সেটা হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এজন্যই তিনি দেশের মানুষের নেত্রী হয়েছিলেন। তিনি কোনো দল ভাঙতে চাননি। কিন্তু এই আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপি ভাঙতে পাঁয়তারা করে যাচ্ছে।’ বলেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ আগুন লেগেছে সরকারের, ১৬৫ জন নিয়ে আমেরিকা গেয়েছে, সেখানেই বসে থাকতেই ভিসা নীতির গুরুত্বরোপ করেছে। ভিসা নীতি নিশ্চয় কোনো দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। শুধু মার্কিন নয়, এ দেশের মানুষও স্যাংশন দিয়েছে এ সরকারকে।

এ সময় সমাবেশে উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বাংলার মানুষ বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চায়, মুক্ত দেখতে চায়। যে বিচারকরা একটি বিষয়ে দুই রকমের রায় দিয়েছে, এ দেশের মানুষ একদিন তাদের বিচার করবে।

তিনি আরো বলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিএনপির কোনো মাথা ব্যাথা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু সাবেক ও বর্তমান আমলা মিটিং করেছে, তারা নাকি এই সরকারকে রক্তের বিনিময়ে রক্ষা করতে চায়। এখন আবার পুলিশের কিছু কর্মকর্তা নাকি মিটিং করে যাচ্ছে, যেভাবেই হোক, বিএনপির আন্দোলন দমন করতে হবে। মিটিং আর গোপনে করেন না, প্রকাশ্যে করেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যারা প্রকৃতিকে জয় করতে পারে তারা এই স্বৈরাচারকে পতন ঘটাতে পারবে। আপনারা বৃষ্টির মধ্যে বসে ছিলেন। আপনারা পারবেন।

বিচাপতিদের সমালোচনা করেন তিনি বলেন, অন্যদের মুক্তি দেন, অথচ কেন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন না। এর বিচার একদিন দেশের মানুষ করবে। তার বিদেশ চিকিৎসা নেয়া সাংবিধানিক অধিকার। কেন যেতে দিচ্ছেন না? আদালত আমাদের সাথে নির্দয় আচরণ করে যাচ্ছে। যে মামলার তারিখ পড়ত এক মাস পর, তার ডেট দিচ্ছে সপ্তাহের মধ্যেই। এতে কি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন? না। পারবেন না। এখন আমাদের পেছনে যাওয়ার জায়গা নেই, এখন সামনে যেতে হবে। ডু অর ডাই। এর মাঝামাঝি কোনো জায়গা নাই।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, আপনারা প্রস্তুতি নিন, যে ধর্ষণ, অপরাধ করেছেন, তার ফল ভোগ করতে। কারণ বিদেশে তো আর যেতে পারবেন না। আপনাদের সমস্ত অপরাধে জেলে যেতে হবে।

বেগম খালেদা জিয়াকে কেন রাজনৈতিকভাবে মামলা করা হয়েছে এমন প্রশ্নে রেখে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বলেন, তার মামলার কোনো সাক্ষ্য, প্রমাণ ছিল না। আজকে বলতে হবে এই সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। বেগম খালেদা জিয়াকে এই দেশের মানুষ ভালোবাসেন। তিনি জনগণের হয়ে কাজ করেন। সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে বিএনপিকে ধ্বংস করতে চায়। গণতন্ত্র হত্যা করতে চায় কিন্তু এটা সম্ভব নয়। দেশের মানুষ বিএনপি ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মাথায় তুলে রেখেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু বলেন, দেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা হয়েছে। ৫০ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এই সরকার। বিএনপিকে ধংসের পাঁয়তারা করে যাচ্ছে এই সরকার। বাংলাদেশের শেখ হাসিনা জনগণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে আজ এই জায়গায় এসেছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে আটকে রেখে ভোট চুরি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য মুক্তি ভিক্ষা মনে করছে সরকার। এই বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচার ও অন্যায়ের কাছে কখনো মাথা নত করেননি। তার চিকিৎসা নিয়ে খেলা করে যাচ্ছে তারা। মনে রাখতে হবে, দেশের প্রত্যেকটি মানুষ প্রহর গুনছে কবে তাকে বিদেশে চিকিৎসা করতে নেয়া হবে। নইলে দেশের জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। চলে যাওয়ায় সময় হলেও একটা ভালো কাজ করে যান।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, কয়েকদিন আগে বললো আমেরিকা যাবো না, কোনো কূল না পেয়ে এখন বলছে আমরা স্যাংশন দেব। আজকে সরকার বিএনপি, জনগণ এবং দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বলে- আমরা যুদ্ধ চাই না। মানবাধিকারের কথা বলে, অথচ তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে সুচিকিৎসা দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাতে তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে ঢাকা মহানগরের প্রতিবাদ সমাবেশে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, উত্তরে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা ফরহাদ হালিম ডোনার, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির সহ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: রফিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *