বোলিংয়ের পর ব্যাট হাতেও ব্যর্থ পাকিস্তান। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই পারল না বাবর আজমের দল। ৩২ ওভারেই থমকে গেছে তাদের ইনিংস, হেরেছে ২২৮ রানের বড় ব্যবধানে। যা ভারতের বিপক্ষে রানের হিসাবে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় হার।
ভারতের এই জয়ে কঠিন হয়ে গেল এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠার লড়াই। এই মুহূর্তে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ভারত প্রত্যেকেরই জয় সমান, একটা করে। ফলে ফাইনালে যেতে বেশ কঠিন সমীকরণের মধ্য দিয়েই যেতে হবে দলগুলোকে। বিপরীতে টুর্নামেন্ট থেলে অফিসিয়ালভাবেই ছিটকে গেল বাংলাদেশ।
রোববার টসে হেরে ব্যাট করতে নামা ভারত সোমবার রিজার্ভ ডেতে ২ উইকেট হারিয়ে থামে ৩৫৬ রানের রেকর্ড সংগ্রহ নিয়ে। যা দু’দলের মুখোমুখি দেখায় সর্বোচ্চ রান। জোড়া শতক তুলে নেন বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল।
জবাবে শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা পাকিস্তান টিম। বড় লক্ষ্য তাড়ায় যেমনটা শুরু করা প্রয়োজন ছিল পাকিস্তানের, তা করতে ব্যর্থ হয় উদ্বোধনী জুটি। অথচ ইনিংসের ভীত গড়ে দায়িত্বটা ছিল তাদেরই। পঞ্চম ওভারেই দলীয় মাত্র ১৭ রানে ফেরেন ইমাম উল হক। বুমরাহর শিকার হয়ে ফেরেন ১৮ বলে ৮ রানে।
তবে বড় ধাক্কাটা আসে ১১তম ওভারে, বাবর আজমকে ফিরিয়ে দেন হার্দিক পান্ডিয়া। র্যাঙ্কিয়ের শীর্ষে থাকা এই ব্যাটার ফেরেন ২৪ বল খেলে মাত্র ১০ রানে। এখানেই যেন থমকে যায় পাকিস্তানের লড়াই করার শক্তি। এ সময় আবার নামে বৃষ্টি, খেলা বন্ধ থাকে ঘণ্টা খানেক।
আবারো খেলা শুরু হতেই ফেরেন রিজওয়ান। ছন্দে থাকা এই ব্যাটারকে ফেরান শার্দুল ঠাকুর, মাত্র ২ রান আসে তার ব্যাটে। ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারায় পাকিস্তান। যদিও আগা সালমানকে নিয়ে এরপর কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন ফখর জামান। তবে ফখরকে ফিরিয়েই এ জুটি ভাঙেন কুলদিপ।
ফখর জামান আউট হন ১৯তম ওভারে। ইনিংস সর্বোচ্চ ২৭ (৫০) রান আসে তার ব্যাটে। তবে তাকে ফিরিয়েই শুরু হয় কুলদিপ ম্যাজিক। পরের অধ্যায়টা শুধুই তার। পাকিস্তানের ইনিংসের মেরুদণ্ড ভেঙে দেন তিনি, তার হাত ধরেই নিশ্চিত হয় পাকিস্তানের পরাজয়।
পরের পাঁচ উইকেটের সবগুলোই তুলে নেন এই স্পিনার। একে একে ফেরান আগা সালমান, ইফতেখার আহমেদ, শাদাব খান ও ফাহিম আশরাফকে। সালমান ও ইফতেখার করেন সমান ২৩ রান। শাদাব ৬ ও ফাহিমের ব্যাটে আসে ৪ রান। মাত্র ২৫ রানে ৫ উইকেট নেন কুলদিপ।
৩২ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১২৮ রান তুলতেই হার মেনে নেয় পাকিস্তান। মূলত শেষ দুই উইকেট- নাসিম শাহ ও হারিস রউফ চোটে পড়ায় তাদের আর ব্যাট হাতে নামায়নি পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্ট।
এর আগে সোমবার রিজার্ভ ডের খেলা শুরু বৃষ্টির কারণে শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট পর। বৃষ্টির ফলেই রোববার নির্ধারিত দিনে খেলা শেষ করা যায়নি। টসে হেরে ব্যাট করতে নামা ভারত ২৪.১ ওভারে ১৪৭ রান তুলতেই শুরু হয় বৃষ্টি। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও তা না থামায়, খেলা গড়ায় রিজার্ভ ডেতে।
সোমবারও জ্বলে উঠতে পারেনি পাকিস্তানি বোলাররা, বৃষ্টি যেন নিস্তেজ করে দিয়েছে তাদের। রোববার বৃষ্টির আগে ২ উইকেট আদায় করে নিতে পারলেও এদিন রিজার্ভ ডেতে এসে উইকেটের মুখই দেখা হয়নি। সব মিলিয়ে শেষ ৩২ ওভারে কোনো উইকেট তুলতে পারেনি দলটি।
বড় সংগ্রহের ভীত অবশ্য রোববারই গড়ে ফেলেছিল ভারত। উদ্বোধনী জুটিতেই যোগ হয় শতাধিক রানে। ১৬.৪ ওভারে এসে ১২১ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। ৪৯ বলে ৫৬ করর শাদাব খানের শিকার হন রোহিত শর্মা। পরের ওভারেই শাহিন আফ্রিদির শিকার হয়ে ফেরেন শুভমান গিল। ৫২ বলে ৫৮ রান আসে তার ব্যাটে।
ওপেনারদের গড়া ভীতে দাঁড়িয়ে সোমবার শুধু প্রয়োজন ছিল ইনিংসটা টেনে নিয়ে যাওয়া। এ কাজটা খুব ভালোভাবেই করলেন বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল, দলকে এনে দিলেন রেকর্ড সংগ্রহ। একই সাথে জোড়া শতকও তুলে নিয়েছেন তারা।
ছয় মাস পর দলে ফিরেই শতক তুলে নেন লোকেশ রাহুল, সমান ১০০ বলে পৌঁছান এই মাইলফলকে। কোহলি যেন আরো একধাপ এগিয়ে, ৮৪ বলেই স্পর্শ করেন তিন অঙ্কের মাইলফলক। ওয়ানডেতে যা তার ৪৭তম শতক, সব মিলিয়ে ৭৭তম।
শতকের আগের বলেই কোহলি পূরণ করেছেন ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৩ হাজার রান। যা ইতিহাসের দ্রুততম। মাত্র ২৭৭ ইনিংসে এই কীর্তি গড়েন কোহলি, দ্বিতীয় স্থানে থাকা শচীন টেন্ডলকারের লেগেছিল ৩২১ ইনিংস।
পুরো ইনিংস-জুড়ে পাকিস্তানি বোলারদের নাভিশ্বাস উঠিয়ে ছাড়েন দু’জনে। গড়েন তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি। কোহলি ও রাহুল মিলে ১৯৫ খেলে যোগ করেন ২৩৩ রান। যা আবার এশিয়া কাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের জুটি।