ছাত্রলীগের তিন নেতাকে থানায় ধরে নিয়ে বেধড়ক মারধরের ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে তিনি নিজেও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হলেও অভিযোগ উঠেছে তার পরিবারের সদস্যরা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে তার এলাকার লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য।
হারুনের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের থানাঘাটা গ্রামে। থানাঘাটার আগে তার বাবা জামালউদ্দীন গাজীর বাড়ি ছিল একই ইউনিয়নের বালিয়াখালী গ্রামে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামালউদ্দীন গাজী পাশের গ্রাম মাড়িয়ালা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে তিনি অবসর জীবন-যাপন করছেন। হারুনের মা শেফালী বেগম একজন গৃহিণী।
বাবার কর্মস্থল মাড়িয়ালা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন হারুন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির (টিপু-বাদশা কমিটি) বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপসম্পাদক ছিলেন। হারুনের ছোট ভাইয়ের নাম শরীফুল ইসলাম। তিনি সাইফুর রহমান সোহাগের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়াবিষয়ক উপসম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন শরীফুল। তার পরিবারের আর কেউ সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নেই।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে থানাঘাটা গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথম বর্ষে জিয়া হল ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাকের ছত্র-ছায়ায় থাকতেন এবং সেখানকার গণহলে অবস্থান করতেন হারুন। পরবর্তীতে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত হন। এছাড়া হারুনের দাদা নরিম গাজীর দুই স্ত্রী ছিল। দুই স্ত্রীর ঘরে হারুনের বাবা-চাচারা পাঁচ ভাই। হারুনের চাচাতো ভাইদের অধিকাংশই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে গোলাম বারী, আজিজুল বারী, আব্দুল গণি, হযরত আলী ভুট্টো, ওসমান গণি অন্যতম।
এ বিষয়ে শ্রীউলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান প্রভাষক দীপঙ্কর বাছাড় সাংবাদিকদের বলেন, হারুনের নানা হাজরাখালী গ্রামের বাবর আলী সানা চিহ্নিত রাজাকার ছিলেন। তাদের পরিবারের অন্যরা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেও দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে শ্রীউলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবু হেনা সাকিল বলেন, হারুনের পরিবারের লোকজনকে তিনি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকতে দেখেছেন। বিশেষ করে গত দুইটি সংসদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তার ইউনিয়নের পোলিং এজেন্টদের যাবতীয় খরচ এডিসি হারুন ঢাকা থেকে পাঠাতেন। হারুনের বাবা-মা নৌকার পক্ষে মানুষের কাছে ভোট প্রার্থনাও করেছেন।
তিনি বলেন, তার নানার পরিবারের সঙ্গে জমাজমি নিয়ে বিরোধের কারণে শ্রীউলা ইউনিয়নের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন জোয়ারদার ও তার ছেলে পলাশ বিভিন্ন স্থানে তাকে জামায়াত-বিএনপি বানানোর চক্রান্ত করছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী বলেন, হারুনের বাবা শিক্ষক ছিলেন, ভাই শরীফুল ইসলামও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। তারা সব সময় আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছেন।