কমলাপুর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গার উদ্দেশে ট্রেনটি ছাড়ার কথা ছিল গতকাল সকাল ৯টায়। ছাড়তে ছাড়তে ১০টা পার হয়ে যায়। প্রায় এক ঘণ্টার এ বিলম্ব যাত্রায় অবশ্য কারও মুখে এতটুকু বিরক্তির ছাপ ছিল না। কারণ ট্রেনে চড়ে পদ্মা সেতু পার হওয়ার এ মাহেন্দ্রক্ষণকে স্মৃতিতে অম্লান করে রাখার দিকেই যেন বেশি মনোযোগ ছিল সবার। সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলেও ঐতিহাসিক এ মুহূর্তের ছবি তোলার সুযোগ হাতছাড়া করেননি ট্রেনে থাকা দুই শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী। ট্রেনে যাত্রীর আসনে বসে থাকা এমপি-মন্ত্রী, আমলা কিংবা প্রকল্প কর্মকর্তাদের চোখে-মুখে ছিল স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার প্রতিচ্ছবি।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়ে স্বপ্নের রেলযাত্রার সাক্ষী হতে রাস্তার দুপারে দাঁড়িয়ে ছিলেন শত শত মানুষ। কেউ রেলগাড়ির ছবি তুলছিলেন, কেউ আবার হাত নাড়িয়ে কিংবা জাতীয় পতাকা উড়িয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন। শীতলক্ষ্যা সেতু পার হওয়ার আগে
দেখা যায়, রেললাইনের বাঁ পাশে একটি ফসলি জমিতে দাঁড়িয়ে এক বয়স্ক নারী ছবি তুলছেন। পাশে স্কুলের পোশাক পরা শিক্ষার্থীরাও দাঁড়িয়ে ছিলেন ক্যামেরা হাতে। তাদের দেখে ট্রেনে থাকা এক যাত্রী বলেন, ‘ওদের কেউ কি কখনো ভেবেছিল, এই পথ দিয়ে রেল চলবে?’
ট্রেনটি পদ্মার এপারে, অর্থাৎ মুন্সীগঞ্জে অল্প সময়ের জন্য যাত্রাবিরতি দেয়। সেখানে ট্রেন থামাতেই জয়বাংলা সেøাগান দিতে থাকেন স্থানীয়রা। তাদের সঙ্গে সুর মেলান ট্রেনের অনেক যাত্রীও। এর পর পদ্মা সেতুতে ট্রেন ওঠার পর দুপাশের জানালা দিয়ে সৌন্দর্য অনুভব করেন ট্রেনের আরোহীরা। মাদারীপুরের শিবচর হয়ে ট্রেন ভাঙ্গায় পৌঁছানোর পর আতশবাজি, নানা রঙের বেলুন আর জয়বাংলা সেøাগানে নতুনমাত্রা পায় উৎসব।
স্থানীয়দের ভাষ্য- ভাঙ্গা আর ভাঙ্গা নাই, ভাঙ্গা এখন জোড়া লেগে গেছে। অনেকেই মনে করেন, পুরো দমে ট্রেন চলাচল শুরু হলে তারা প্রতিদিন বাড়ি থেকে ঢাকায় গিয়ে অফিস করতে পারবেন।
ট্রেনটি ভাঙ্গায় পৌঁছলে আরোহীদের স্বাগত জানান ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী। স্থানীয় কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল ট্রেনে বসে পদ্মা পাড়ি দেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইফ নূর-ই আলম চৌধুরী লিটন, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শাজাহান খান, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, পানিসম্পাদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি, সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর, রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান ও পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন।
ভাঙ্গায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রেলমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য এই রেল যোগাযোগ যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এর সুফল সারাদেশের মানুষ পাবে।
পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর প্রথম অংশ ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটারের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবর ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে ট্রেন চলাচল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ ট্রেনে করে রাজধানীতে আসা-যাওয়া করতে পারবেন।
সকাল ১০টা ৭ মিনিটে ঢাকা থেকে ছাড়ে ট্রেনটি। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে পৌঁছায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া স্টেশনে। এর পর ট্রেনটি ওঠে পদ্মা সেতুতে। ৩০ কিলোমিটার গতিতে ৮২ কিলোমিটার রেলপথ পাড়ি দিতে ট্রেনটি সময় নেয় ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট। পরীক্ষামূলক বলেই সময় বেশি লেগেছে; পুরোদমে চালু হলে সময় আরও কমে আসবে।