জার্মানি বনাম আর্জেন্টিনা : যা জানা দরকার

খেলা গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ সারাদেশ সারাবিশ্ব

53343_argentina win
গ্রাম বাংলা ডেস্ক:  বিশ্বকাপ ফাইনালে আগামী রোববার রাতে মুখোমুখি হচ্ছে জার্মানি এবং আর্জেন্টিনা। দু’দল এর আগেও ফাইনালে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। চলুন জানা যাক, বর্তমানে কোন দল কোন দিক দিয়ে এগিয়ে কিংবা পিছিয়ে আছে।

জার্মানি এবং আর্জেন্টিনার মধ্যে মূল ব্যবধানটি দলের গঠন নিয়ে। আর্জেন্টিনা বলতেই অনেকে বোঝেন মেসি এবং তাকে সহায়তাকারী কয়েকজন খেলোয়াড়। অন্যদিকে জার্মানি মানে হচ্ছে পুরো একটি ‘টিম’। তবে খেলার কৌশলের দিক দিয়ে আর্জেন্টিনা অনেকটাই জার্মানিকে অনুসরণ করতে সক্ষম। অবশ্য পর্তুগাল এবং ব্রাজিলের বিপক্ষে জার্মানি যে বিধ্বস্ত রূপ দেখিয়েছে, তেমনটা দেখাতে সক্ষম হয়নি মেসির দল।

সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে দু’দলের অবস্থান

গোলরক্ষক
বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক হিসেবে মানুয়েল নয়ারের পরিচিতি তৈরি হয়েছে কিন্তু ব্রাজিলেই। পুরো টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা জার্মান ফুটবলারদের একজন তিনি। শুধু শট আটকে দেয়াই নয়, বৈচিত্রময় বিভিন্ন উপায়ে বল ঠেকানোতে বিশেষ পারদর্শী তিনি। আলজেরিয়ার বিপক্ষে খেলায় অনেকেই লক্ষ্য করেছেন নয়ারের এই গুণ।

অন্যদিকে আর্জেন্টিনার সার্জিও রোমেরো গত ফুটবল মৌসুমটা কাটিয়েছেন মোনাকো কাবের ‘ব্যাকআপ’ গোলরক্ষক হিসেবে। তবে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে পেনাল্টি শুট আউটে চমক দেখিয়েছেন তিনি। দুটি শট রুখে দিয়ে দলকে ফাইনালে নিয়ে গেছেন তিনি। তা সত্ত্বেও এই গোলরক্ষকের বিবেচনায় জার্মানিকে এগিয়ে রাখছেন ফুটবল বোদ্ধারাই।
রক্ষণভাগ
জার্মান অধিনায়ক ফিলিপ লামকে মধ্যমাঠ দিয়ে সরিয়ে তার প্রিয় জায়গা ‘সেন্টার ব্যাকে’ নেয়ার পর থেকে আরো মজবুত হয়েছে জার্মানির রক্ষণভাগ। আলজেরিয়ার সাথে খেলার পর এই সিদ্ধান্ত নেন কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ। এছাড়া মাটস হুমেলসও জার্মানির রক্ষণভাগকে কার্যত অভেদ্য দূর্গে পরিণত করেছেন। ফলে ফ্রান্স বা ব্রাজিল বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। তবে এই রক্ষণভাগ মেসিকে আটকাতে কতটা সক্ষম হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে রক্ষণভাগে আর্জেন্টিনা সবচেয়ে দুর্বল। চলতি বিশ্বকাপে অনেকের নজরে এসেছে সেটা। তবে এটাও সত্যি যে, নক আউট পর্বের খেলাগুলোতে কোনো গোলই হজম করেনি দলটি। মোটের উপর সেমিফাইনালে আরিয়ন রবেন এবং রবিন ফন পার্সিদেরকে সাধারণ খেলোয়াড়ে পরিনত করেছে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগের দুই ফুটবলার পাবলো সাবালেটা এবং মার্টিন ডেমিকেলিস।
বার্তা সংস্থা এপি-র ক্রীড়া সাংবাদিক মাটিয়াস কারেন এক্ষেত্রে এগিয়ে রাখছেন জার্মানিকে।

মধ্যমাঠ
জার্মানির সবচেয়ে বড় শক্তি মধ্যমাঠ। দলটির এই অংশের খেলোয়াড়রা একটা ‘টিম’ হিসেবে চমৎকার খেলছেন। বাস্টিয়ান শোয়াইনস্টাইগার এবং সামি খেদিরা প্রতিপক্ষকে মধ্যমাঠেই দুর্বল করে দেন আর টোনি ক্রোস এবং মেসুত ওজিল সহায়তা করেন আক্রমণে। ব্রাজিলকে চরম অপদস্থ করেছে জার্মানির মধ্যমাঠের খেলোয়াড়রা। এখন আর্জেন্টিনা তাদের কতটা সামলাতে পারবে বলা কঠিন।
অন্যদিকে আর্জেন্টিনা আশা করছে আনহেল ডি মারিয়া ফাইনালের আগে সুস্থ হয়ে উঠবেন। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলায় তার অভাব ভালোভাবেই অনুভব করেছে দু’বার বিশ্বকাপ জয়ীরা। এছাড়া মিডফিল্ডার খাভিয়ার মাসকেরানো আর্জেন্টিনার বড় শক্তি। তিনবারের বিশ্বকাপ জয়ীদের রুখতে তাকে ভালো ভূমিকা রাখতে হবে।
সংবাদ সংস্থা এপি-র হিসেবে অবশ্য এখানেও এগিয়ে জার্মানি।

আক্রমণভাগ
বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোল করা খেলোয়াড়টি জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসা। এখন অবধি বিশ্বকাপে ১৬টি গোল করেছেন তিনি। তবে আর্জিন্টিনার আছে মেসি এবং আরো দু’জন ভালো আক্রমণভাগের খেলোয়াড়। মেসি নক আউট পর্বের শেষ তিনটি খেলায় গোল করতে না পারলেও, গ্রুপ পর্বে চারটি দর্শনীয় গোল করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ফিফার বিচারে চারবার বিশ্বসেরা ফুটবলার হয়েছেন লিওনেল মেসি। যদিও সেদলে স্যার্জিও আগুয়েরো এবং গনজালো হিগুয়াইনের মতো ফুটবলার রয়েছেন, তা সত্ত্বেও মেসিই আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় শক্তি। আর জিততে হলে তাকে হয় গোল করতে হবে কিংবা গোলের উপযোগী বল সতীর্থদের জন্য তৈরি করে দিতে হবে।
ও হ্যাঁ, ক্লোসা ছাড়াও জার্মানির আরেক খেলোয়াড় কিন্তু আছেন গোল করার জন্য। তিনি টমাস ম্যুলার। দুটি বিশ্বকাপে ইতোমধ্যে দশটি গোল করে ফেলেছেন তিনি। তবে এপি-র বিচারে আক্রমণভাবে এগিয়ে আছে আর্জেন্টিনা।

শেষ করার আগে ছোট্ট একটি পরিসংখ্যান, বিশ্বকাপ ফাইনালে এর আগে দু’বার মুখোমুখি হয়েছে জার্মানি এবং আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬ সালে জার্মানিকে হারিয়ে কাপ জয় করে আর্জেন্টিনা, পরের ফাইনালেই অবশ্য প্রতিশোধ নেয় জার্মানরা। আর সর্বশেষ ২০১০ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানদের কাছে ৪-০ গোলে হেরে বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা।
সূত্র : ডয়চে ভেল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *