মেয়েকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করতে কয়েক দিন ধরেই পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খোঁজ নিচ্ছেন মো. শহিদুল ইসলাম। তবে আবেদন করতে গিয়ে দেখেন, তার মেয়ের আবেদন আগেই করা হয়ে গেছে। কোন কলেজ পছন্দ দেওয়া হয়েছে তা তারা জানতে পারেননি। গতকাল সোমবার অভিযোগ জানাতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে হাজির হন শহিদুল। তার মতো শত শত অভিভাবক প্রতিদিনই বোর্ডে হাজির হচ্ছেন।
জানা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে তাদের তথ্য দিয়ে অনলাইনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করে দিচ্ছে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এমন আবেদনের কারণে পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন করতে পারছেন না ভর্তিচ্ছুরা। প্রতিদিন এমন শত শত অভিযোগ নিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ধরনা দিচ্ছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
প্রতিবছর একাদশ শ্রেণির ভর্তির মৌসুমে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে বলে জানান বোর্ডের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বিষয়টি প্রতিরোধের কৌশল খোঁজা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তার মতে, অনেক কলেজ আছে মানহীন, অথবা নামসর্বস্ব- এগুলোতে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকে না। এই ধরনের প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের তথ্য নিয়ে আগাম আবেদন করে ফেলে, তার প্রতিষ্ঠানকে পছন্দ দিয়ে। ফলে ওই শিক্ষার্থী নিজে যখন আবেদন করতে বসে, সে আবেদন করতে পারে না। স্বয়ংক্রিয় বার্তা দেওয়া হয়ে তার আবেদন আগেই সম্পন্ন হয়েছে।
আপাতত সমাধান হিসেবে অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট আবেদন বাতিল করে দিচ্ছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার আমাদের সময়কে বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও এ ধরনের অনেক অভিযোগ বোর্ডে আসছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অজ্ঞাতে হয়ে যাওয়া আবেদন বাতিল করে দিচ্ছি। ফলে শিক্ষার্থী তার পছন্দের কলেজে নতুন করে ভর্তির আবেদন করতে পারে।
অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভর্তির আগ্রহ কম থাকে তারাই চৌর্যবৃত্তির পথ বেছে নিয়ে শিক্ষার্থী নিতে টানাটানি করছে বলে ধারণা করছি। বোর্ডে অনলাইনে একাদশ শ্রেণির আবেদন করার যে মডিউল আছে ওখানে সবাই নির্ধারিত তথ্য দিয়ে আবেদন করতে পারে। এখন কে কার কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের তথ্য নিয়ে আবেদন পূরণ করছে- এটি সুনির্দিষ্ট করা মুশকিল। প্রযুক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করা যায় কিনা, আমরা ভাবছি।
ঢাকা বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকাল পর্যন্ত একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন পড়েছে ৯ লাখ ৭২ হাজার ৬৭৮টি। এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ফলের ভিত্তিতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু হয়েছে ১০ আগস্ট থেকে। ২০ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে অনলাইনে আবেদন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এবারও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির প্রক্রিয়া চলবে লটারিতে। এবারও তিন পর্যায়ে আবেদন গ্রহণ করা হবে। কলেজে ভর্তির জন্য কোনো পরীক্ষা হবে না, শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে।
অনলাইনে আবেদন : চলতি বছর অনলাইনে নির্ধারিত ওয়েবসাইটে (http://www.xiclassadmission.gov.bd/) ভর্তির আবেদন করা যাচ্ছে। অনলাইন ছাড়া ম্যানুয়ালি ভর্তির আবেদন নেওয়া হয় না। আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ টাকা। সর্বনিম্ন ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে পছন্দ দিতে পারে শিক্ষার্থীরা। একজন শিক্ষার্থী যতগুলো কলেজে আবেদন করবে, তার মধ্য থেকে তার মেধা, কোটা ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে একটিমাত্র কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হবে।
নির্বাচিত শিক্ষার্থীকে ৩৩৫ টাকা দিয়ে ভর্তির প্রাথমিক নিশ্চায়ন করতে হবে। আগে প্রাথমিক নিশ্চায়ন ফি ছিল মোট ৩২৮ টাকা। আগের ১৩৫ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি ৭ টাকা বাড়িয়ে ১৪২ টাকা করায় মোট ফি বেড়েছে।
তবে যেসব শিক্ষার্থী বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হিসেবে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, তারা বোর্ডে ম্যানুয়ালি ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা বোর্ড।
বোর্ডের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রবাসীদের সন্তান ও বিকেএসপি থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বোর্ডে ম্যানুয়ালি আবেদন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে বোর্ড প্রমাণপত্র যাচাই-বাছাই করে শিক্ষার্থীর ভর্তির ব্যবস্থা করবে।
গত ২৮ জুলাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ১১ শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ৪১ হাজার ৪৫০ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা এখন একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির চেষ্টা করছে।