বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন ও সাবেক এমপি কারাবন্দী মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর লাশ আজ মঙ্গলবার পিরোজপুরে তার গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে আজ তার জানাজার নামাজ হবে। আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমে তার জানাজা হবে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, উপস্থিত লোকজনের দাবি ছিল যে আজই বায়তুল মোকাররমে মাওলানা সাঈদীর জানাজা হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাতে সায় দেয়নি। অনেকে দাবি করেছেন, জোর করেই তার লাশ পিরোজপুর পাঠানো হচ্ছে। লোকজন বাধা দিতে গেলে শক্তিপ্রয়োগ করা হয় বলেও জানা গেছে।
গতকাল সোমবার রাত ৮.৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গতকাল সোমবার রাতে বিএসএমএমইউ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো: রেজাউর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
এ দিকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর বিএসএমএমইউ ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকাসহ রাজধানীতে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ডিএমপির রমনা জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সালমান ফার্সী জানান, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এ জন্য বিএসএমএমইউ এলাকায় পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
তবে মাওলানা সাঈদীর মৃত্যুর খবর প্রকাশের পরপরই বিপুলসংখ্যক লোক শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়। এ সময় হাসপাতালের সবগুলো গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। লোকজন স্লোগান দিতে থাকে।
এর আগে গত রোববার বিকেলে কাশিমপুর কারাগারে মাওলানা সাঈদী হার্টে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করলে প্রথমে তাকে গাজীপুরের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আনা হয়।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর হার্টে পাঁচটি রিং পরানো ছিল। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। এ ছাড়াও তিনি পায়ের গিরায় ব্যথাসহ বার্ধক্যজনিত নানান জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মাওলানা সাঈদীকে সর্বশেষ আপিল বিভাগ আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে প্রথমে গ্রেফতার হন তিনি। পরে ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
মাওলানা সাঈদী দেশ-বিদেশে একজন জনপ্রিয় ওয়ায়েজিন ও মুফাসসিরে কুরআন ছিলেন। তিনি পিরোজপুর-১ আসন থেকে দু’বার নির্বাচিত এমপি ছিলেন। গ্রেফতারের সময় তিনি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ছিলেন।