জাকাত ট্র্যাজেডি ময়মনসিংহে থামছে না কান্না

Slider জাতীয়

images
ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুপ্ত। বয়স ১১ বছর। ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চারিদিকে লোকজনের কথাবার্তা আর স্বজনহারাদের তীব্র আহাজারিতেও সে নীরব। ভিড়ের মাঝে তার চোখ যেন শুধুই খুঁজে ফিরছে নিজের মমতাময়ী মা সখিনা খাতুন (৩২), নানী শামীমা খাতুন (৫৫) আর ছোট বোন লামিয়াকে (৫)।

জাকাতের কাপড়ের জন্য তারা চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তাদের সঙ্গে সুপ্তও জাকাতের কাপড়ের সংগ্রহের জন্য গেলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে এ অবুঝ শিশুটি। মৃত্যুর শূন্যতা এখনো তাকে গ্রাস করেনি। অশ্রুসজল চোখে কেমন জানি নির্বাক হয়ে গেছে ফুটফুটে সুপ্ত। হয়তো ভেতরে ভেতরে নিজের ভাগ্যকেই দোষারোপ করে চলেছে এ শিশুটি।

ময়মনসিংহ শহরের থানাঘাট এলাকার বেড়িঁবাধ এলাকায় সুপ্তদের বাড়ি। সেখানেই আলাপ হয় তার সঙ্গে। কান্নাজড়িত সে কন্ঠে জানায়, শহরের নূরানী জর্দা ফ্যাক্টরির শামীম তালুকদারের বাসায় তারা ৪ জন মিলে গিয়েছিলেন জাকাতের কাপড় আনতে।

কিন্তু বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা হাজার হাজার লোক গেট খুলে দিতেই হুড়োহুড়ি শুরু করে দেয়। এ সময় আমি ভিড়ের মধ্যে মাটিতে পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পাই। আমার নিচে চাপা পড়ে আমার নানী। এ সময় মালিকের লোকেরা লাঠিপেঠা শুরু করলে আমি ভিড় ঠেলে বেরিয়ে রাস্তায় এসে আমার মা-বোন ও নানীকে খুজঁতে থাকি।

কিন্তু তাদের খুঁজ পাচ্ছিলাম না। এর কিছুক্ষণ পর দেখি একটা লোক আমার বোনের লাশ নিয়ে আসে। পরে আমি বাবাকে এসব ঘটনা জানাই।

মৃত্যুর মিছিলের হৃদয়স্পর্শী এ ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী সুপ্ত জানায়, বাসার গেট ভেতর দিয়ে বাশঁ দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়া ছিল। হঠাৎ গেট খুলে দিয়ে কয়েক হাজার লোক এক সঙ্গে ঠেলা দিয়ে ভেতরে ঢুকলে সামনের লোকজন চাপে পড়ে মাটিতে পড়ে যায়। এতে মারা যায় অনেকেই।
Mymensingh_01
সুপ্ত আরও জানায়, যারা সামনে ছিল তারাই মরেছে। আর যারা পেছনে ছিল তারা কেউ মরেনি।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের মেঝেতে বসে বিলাপ করছিলেন শহরের পাটগুদাম বিহারি ক্যাম্পের সাবা বেগম (৩০)। মা শামীমা ওরফে শামু (৬০), বোন সখিনা (৪০) ও ভাগ্নী লামিয়া (৫) কে হারিয়ে তার আর্তনাদ যেন আরও গগণবিদারী হয়ে উঠে। বুকফাটা আর্তনাদ করতে করতে বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন সাবা।

আহাজারি করতে করতে বলছিলেন, সকাল ৬ টার দিকে পাশের বাসার একজন এসে বলে তোমার মা, বোন ও ভাগ্নি আর নেই। কিন্তু আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। পরে হাসপাতালের মর্গে এসে তাদের লাশ দেখতে পাই। শুধুমাত্র একটা কাপড়ের জন্য সবাইকে হারাতে হলো।

বিহারি ক্যাম্পের সিরাজুলের পুত্র সিদ্দিক (১২) মা আর খালার সঙ্গে গিয়েছিলেন জাকাতের কাপড় আনতে। কিন্তু জাকাতের কাপড় না জুটলেও তার ভাগ্যে জুটেছে কাফনের কাপড়।

জাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে নিহত ২৭ জনের বাড়ি পাটগুদাম বিহারী ক্যাম্প, শহরের ধোপাখোলা, আকুয়া, চরপাড়া, কাচারিঘাট, শহরের থানাঘাট, তারাকান্দা, ত্রিশাল ও জামালপুরে। বিকেলের মধ্যেই লাশগুলো বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পৌছলে কান্নার রোল পড়ে যায় তাদের স্বজনদের। এ মৃত্যুর মিছিলের শোক স্পর্শ করেছে কাছের মানুষ থেকে দূরের মানুষকেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *