কারবালার ঘটনার আরেকটি পুনরাবৃত্তি ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে ঘটে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘১৫ আগস্টের ঘটনা যেন কারবালার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি। কারবালায় নারী-শিশুদের হত্যা করা হয়নি। কিন্তু ১৫ আগস্ট ঘাতকরা আমার মা, আমার ভাইয়ের স্ত্রীদের ছাড়েনি। চার বছরের শিশুকেও ছাড়েনি। সবাইকে হত্যা করা হয়।’
আজ রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা-২০২৩ এর বিজয়ী হাফেজদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এই প্রতিযোগিতায় পাঁচ হাফেজকে পুরস্কৃত করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই রাতে আমি ও আমার ছোট বোন দেশের বাইরে ছিলাম। স্বজনহারা আর্তনাদ আর ঘরবাড়ি ছাড়া ছয়টি বছর আমাদের কাটাতে হয়েছে। ‘৮১ সালে আমরা দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে আমি সেই চেনা মুখগুলো পাইনি। যারা আমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিয়েছিল। আমি পেয়েছিলাম বনানীতে সারি সারি কবর। পেয়েছি বাংলাদেশের মানুষ। কাজেই সে মানুষগুলো আমার পরিবার, তারাই আমার আপনজন। তাদের মাঝেই ফিরে পেয়েছি আমার বাবার ভালোবাসা, মায়ের স্নেহ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা, আস্থা ও বিশ্বাস পেয়েছি, যা আমাকে প্রেরণা, শক্তি ও সাহস জুগিয়েছে। বারবার মৃত্যুকে সামনে থেকে দেখেছি। কিন্তু আমি কোনো দিন ভয় পাইনি। কেন যেন মনে হতো আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, এ দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে কিছু সময় দেন, কিছু মানুষকে কিছু কাজ দেন এবং এই কাজটা আমি যতক্ষণ না পর্যন্ত শেষ করব, রাব্বুল আলামিন আমাকে রক্ষা করবেন। এ বিশ্বাস নিয়ে আমার পথ চলা।’
ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলামের প্রচার ও তার শান্তির সুবাতাস ছড়িয়ে দিতেই সারা দেশে মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বলেও জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘একটা সময় বিএনপি ক্ষমতায় এসে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের মিনার এবং সেনানিবাসে মসজিদ নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সব সময়ই ইসলামের খেদমতে কাজ করে আওয়ামী লীগ।’
ইসলাম ধর্মের নাম ব্যবহার করে কেউ কেউ জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চায়, যা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয় মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘টেরোরিস্টদের কোনো ধর্ম নাই, তাদের কোনো দেশ বা বাউন্ডারি নাই। টেরোরিজমই হচ্ছে তাদের ধর্ম। আমি নিজে এর ভুক্তভোগী। আমি এক সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করার পর শত শত হুমকির চিঠি পেয়েছিলাম। সেই চিঠিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সন্ত্রাসীরা তার পক্ষ হয়ে আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। এর মধ্যে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান এমনকি বৌদ্ধও ছিল। আমি অবাক হয়ে গেলাম যে এটা কি ধরনের! সেইদিন থেকেই বুঝলাম এদের আসলে কোনো ধর্ম নাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তরুণদের বিপথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তরুণরা যেন বিপথে না যায়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে মাওলানা, আলেম ওলামাদের। মুসলিম উম্মাহর কোনো সংকটে যেন তৃতীয় শক্তি ঢুকতে না পারে সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
ইমামদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে যার যার ধর্ম সে সে পালন করবেন, যার যার কর্মফল সে সে ভোগ করবে। ধর্মের নামে খোদার ওপর খোদকারি করবেন না। ইসলামের মর্মবাণী মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেন। সন্ত্রাস করে ইসলাম সম্পর্কে যেন কেউ বদনাম করতে না পারে, সেদিকে সবাই খেয়াল রাখবেন।