কক্সবাজারের সেই জেলা জজকে আবারও হাইকোর্টে তলব

Slider বাংলার আদালত


কক্সবাজারের জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলকে হাইকোর্টের আরেক বেঞ্চে তলব করা হয়েছে। মারধর ও ভাঙচুরের একটি মামলায় দুই আসামিকে শুনানি ছাড়াই জামিন দেওয়ার ঘটনায় আগামী ১৬ আগস্ট হাজির হয়ে তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট আইনজীবী সারওয়ার আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন। আদেশে কক্সবাজারে মারধর ও ভাঙচুরের একটি মামলায় দুই আসামিকে শুনানি ছাড়াই জামিন দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে গত ২৭ জুলাই চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন নামঞ্জুর হওয়া আসামিদের আইন ভঙ্গ করে আদেশে মিথ্যা তথ্য লিখে একই দিনে জামিন দেওয়ার ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করায় কক্সবাজারের জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলকে অব্যাহতি দেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে আইন লঙ্ঘন করে জামিন দেওয়া ৯ জন আসামির জামিন কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

সে সময় শুনানিতে কক্সবাজার জেলা জজকে কঠোরভাবে ভর্ৎসনা করেন হাইকোর্ট। জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলকে হাইকোর্ট বলেন, আপনি একজন সিনিয়র জেলা জজ। দীর্ঘদিন বিচারকাজ করেছেন। আপনি আদালতের আদেশ টেম্পারিং করেছেন। এতে আপনার বুক কাঁপল না? টেম্পারিং করে আপনি ভুল করেননি। জেনে-শুনে আপনি ক্রাইম করেছেন।

শুনানিতে জেলা জজের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘আমরা কনটেস্ট করতে চাই না। আমরা আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। আমরা খুবই অনুতপ্ত।’

একপর্যায়ে হাইকোর্ট জেলা জজকে ডায়াসের সামনে ডেকে আদেশ টেম্পারিংয়ের বিষয়ে জানতে চান। তখন জেলা জজ বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দিতে থাকেন। তিনি বলেন, ভুলে এটা হয়েছে। তখন আদালত বলেন, আপনি ভুল করেননি। আপনি জেনে-বুঝে ক্রাইম করেছেন।

এ সময় আইনজীবীরা আবারও ক্ষমা চাইলে হাইকোর্ট বলেন, আপনারা ক্ষমা চাচ্ছেন, অনুতপ্ত হচ্ছেন। কিন্তু জেলা জজের মধ্যে তো কোনো অনুশোচনা নেই। তিনি অনুতপ্তও নন। মন থেকে অনুশোচনা আসতে হয়।

ওইদিন আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন। ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, জমির দখল নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে মিঠাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ ভুট্টোসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে খোদেস্তা বেগম কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-১ ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী দ্রুত বিচার আদালতে নালিশি মামলা করেন।

মামলায় আসামিরা আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করলে ১১ এপ্রিল হাইকোর্ট তাদের ছয় সপ্তাহের মধ্যে কক্সবাজারের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এ নির্দেশ অনুসারে ২১ মে আসামিরা আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালত ৯ আসামিকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর বিরুদ্ধে সেদিনই আসামিরা কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। আদালত তাদের জামিন দেন। পরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন (ফৌজদারি রিভিশন) করেন খোদেস্তা।

আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন আরও বলেন, জেলা জজ আদালতে জামিন আবেদনের সঙ্গে হাকিম আদালতের জামিন নামঞ্জুরের আদেশসহ অন্যান্য কাগজপত্রের প্রত্যয়িত অনুলিপি বা প্রত্যয়িত অনুলিপির ফটোকপি দাখিল করা হয়নি। তারপরও জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাদের জামিন দিয়েছেন।

হাজতবাসের মেয়াদসহ সার্বিক বিবেচনায় আসামিদের জামিন মঞ্জুর করা হয় বলে আদেশে উল্লেখ করেন জেলা জজ। অথচ ৯ আসামি এক মুহূর্তও হাজতে ছিলেন না। এর পর ওই জামিনের বিরুদ্ধে আবেদন করেছিলেন মামলার বাদী রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোদেস্তা বেগম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *