হাত বদলালেই লাফিয়ে বাড়ে দাম

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

ডিমের বাজারে কারসাজি ও সিন্ডিকেট চক্রের বিষয়টি বারবার আলোচনায় আসলেও এ থেকে পরিত্রাণ মিলছে না। কিছু সময় স্থিতিশীল থাকার পর ডিমের বাজার আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়ে অতীতের রেকর্ড ভেঙে রাজধানীর বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের ডিমের দাম ১৬৫ টাকায় ঠেকেছে। হঠাৎ এমন মূল্যবৃদ্ধিতে গরিবের প্রোটিনখ্যাত ডিম এখন আর সহজলভ্য পর্যায়ে নেই। হিমশিম খাচ্ছেন মধ্যবিত্তরাও। এদিকে বিক্রেতারাও দুটির নিচে ডিম বিক্রি করছেন না।

ডিম বিক্রেতারা জানান, দুই সপ্তাহ ধরেই দাম বাড়ছে। দুই সপ্তাহ আগেও পাইকারি বিক্রেতারা ১০০ পিস বাদামি ফার্মের ডিম বিক্রি করেন ১ হাজার ১৬০ টাকায়। এরপর তা এক লাফে বেড়ে ১ হাজার ২০০ টাকা হয়। এরপর আরও ২০ টাকা বাড়ে এবং পরবর্তী সময়ে ১ হাজার ২৫০ টাকা হয়। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৬০ টাকা পর্যন্ত। কদমতলী এলাকার খুচরা বিক্রেতা মো. মিলন হোসেন প্রতিটি ডিমের ক্রয়মূল্য ১২ টাকা ৬০ পয়সা।

এর সঙ্গে অন্যান্য খরচ যোগ করে ১৬৫ টাকা ডজন বিক্রি করছি। দাম বেশি বাড়ায় এখন আর দুটির নিচে ডিম বিক্রি করা যাচ্ছে না, জোড়া ৩০ টাকা। মিলনের মতো আরও কয়েকটি দোকানেও দেখা গেছে, একটি করে ডিম বিক্রিতে অনীহা অনেক বিক্রেতার। অনেকেই প্রতি পিস ১৪ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করছেন।

ডিম উৎপাদনকারীদের কেন্দ্রীয় সংগঠন এগ প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী আমাদের সময়কে তিনি বলেন, ডিমের উৎপাদন খরচ ৯ টাকা ৫০ পয়সা। খামারিরা বিক্রি করছেন ১০ টাকা ৭৫ পয়সা পর্যন্ত। এ ডিম খুচরায় ১২ টাকার বেশি দামে বিক্রি হওয়ার কথা নয়। অথচ হাতবদল আর সিন্ডিকেট হয়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪-১৫ টাকায়।

এর আগে গত বছর সেপ্টেম্বরেও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে রেকর্ড ডজন ১৫৫ টাকা ছাড়ায় ডিমের দাম। সে সময় ডিমের বাজারে সরকারি সংস্থার বিশেষ অভিযান ও অনুসন্ধানে উঠে আসে কারসাজির তথ্য।

অপরদিকে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানায়, ওই সময় একটি চক্র মাত্র ১৫ দিনে ডিমে ১১২ কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা করেছে। তখন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে বেরিয়ে আসে অনিয়মের নানা তথ্য। সংস্থাটি দেখতে পায়, ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে নয়, ডিমের বিক্রয়মূল্য ব্যবসায়ী সমিতির নেতারাই ঠিক করে দেন। বাজার অভিযানের পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিম আমদানির হুশিয়ারিতে রাতারাতি ডিমের দাম কমে যায়। এরপর অনেকটা সময় ডিমের দাম স্থিতিশীল থাকলেও বদলায়নি বাজার পরিস্থিতি।

এ বিষয়ে তাহের আহমেদ বলেন, ডিমের বাজারের কিছুই বদলায়নি। আগের ‘সিস্টেমেই’ চলছে। দাম বাড়লেও খামারির লাভ বাড়ছে না। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীরা ঠিকই অল্প সময়ে বিপুল মুনাফা করে নিচ্ছে।

১৪ দিনে দাম লাফিয়ে বাড়লেও এর কারণ জানেন না পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। তেজগাঁও এলাকার ডিমের পাইকারি বাজার ঘুরে একাধিক ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাওয়ার পরও যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। বরাবরের মতো ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ কম। কেউ বলছেন বৃষ্টিপাতের কারণে, কেউ বলছেন প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বেশির ভাগ ব্যবসায়ী জানান, ঠিক কী কারণে দাম বেড়েছে তা তারা জানেন না। ব্যবসায়ী সমিতি থেকে যে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয় সে দামেই বিক্রি করেন। অপরদিকে খুচরা বিক্রেতারাও কারণ জানেন না। তারা বলছেন, আড়ত থেকে যে দামে ডিম দেয়, সে অনুযায়ী তারা বিক্রি করেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, মুরগি ও ডিমের বাজারের চিত্র আগের মতোই রয়ে গেছে। কিছুই পরিবর্তন হয়নি। করপোরেট কোম্পানিগুলো এখনও বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। বারবার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসলেও পরিত্রাণ মিলছে না। ভোক্তা অধিদপ্তরের অনুসন্ধানেও তথ্য উঠে এলেও কোনো পরিবর্তন নেই। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কোম্পানিগুলো একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

বাংলাদেশ কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন আমাদের সময়কে বলেন, যেখানে যে পণ্যের বেশি উৎপাদন হয়; স্বাভাবিকভাবে সেখানে দাম তুলনামূলক কম হওয়ার কথা। কিন্তু ডিমের দাম দেশের সব জায়গায় একই। জানা গেছে, মোবাইল ফোনে ‘গায়েবি’ এসএমএসের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সে দামেই সারাদেশে বিক্রি হয়। অর্থাৎ বাজারে এখনো সিন্ডিকেট চক্র সক্রিয় রয়েছে।

দোষীদের শাস্তি না হওয়ায় এমনটা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এর আগে ভোক্তা অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে কারসাজির পেছনে বড় প্রতিষ্ঠানের নাম আসলেও শাস্তি হতে দেখিনি। কেন এমনটা হচ্ছে তা বোধগম্য নয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *