দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার অন্তত ১৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক এবং উপজেলার সংযোগ সড়কগুলো তলিয়ে যাওয়ায় আটকে পড়া মানুষের কাছে খাবার পৌঁছানো যাচ্ছে না। স্থানীয়দের দাবি, গত একশ বছরেও এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেননি তারা। এবারের বন্যার জন্য তারা ১৮ হাজার কোটি টাকার দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন মেগা প্রকল্পকে দায়ী করছেন। তারা মনে করেন পর্যাপ্ত ব্রিজ, কালভার্ট না করায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পে নির্ধারিত সংখ্যার চেয়েও বেশি কালভার্ট করা হয়েছে।
গত তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের তিন উপজেলার বাসিন্দারা। লোহাগাড়ায় পানি নেমে গেলেও চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার অধিকাংশ এলাকা এখনো জলমগ্ন। ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। জনপ্রতিধিরা ত্রাণ নিয়ে গেলেও নৌকার অভাবে মানুষের কাছে খাবার পৌঁছাতে পারছেন না।
স্থানীয়রা বলছেন, গত শতাব্দীতে তারা বন্যার এমন ভয়াবহ রূপ দেখেননি। দোকানপাট থেকে শুরু করে একতলা বাড়ি পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। এমন বন্যার জন্য নতুন নির্মাণ হওয়া দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
সূত্র জানায়, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটারের প্রকল্পটি দুটি ধাপে বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রথম ধাপে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারে আইকনিক ভবনসহ ৯টি স্টেশন ভবন নির্মাণ (দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু, কক্সবাজার), ৩৯টি মেজর ব্রিজ, ২৮৭টি মাইনর ব্রিজ-কালভার্ট, বিভিন্ন শ্রেণির ৯৬টি লেবেল ক্রসিং ও একটি আন্ডারপাস, হাতি চলাচলের জন্য ওভারপাস ও থারমাল ইমেজিং ক্যামেরা প্রযুক্তি চালু করা হয়েছে। আগামী মাসে প্রকল্পটি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। দোহাজারী-কেরানীহাট
অংশের নতুন রেললাইনের পূর্ব পাশে বন্যায় ব্যাপক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ডুবে গেছে বলে জানান সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা পরিবেশ জোট গ্রিন অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন চৌধুরী। তিনি বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানি রেললাইনের কারণে যেতে পারছে না। ফলে পূর্বপাশে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে রেল মন্ত্রণালয় পরামর্শ করেছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত সংখ্যক ব্রিজ-বক্স কালভার্ট দেওয়া হলে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়তো হতো না। তবে আগামীতে যাতে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে না হয় সেই ব্যবস্থা রেলওয়েকে নিতে হবে।
প্রকল্পটির পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘অনেকেই আমাদের দায়ী করছে। কিন্তু রেললাইনের পূর্বপাশে পানি জমে থাকলে আমরা ধরে নিতাম রেললাইনের কারণে সমস্যা হয়েছে। কিন্তু উভয়পাশে পানি উচ্চতা সমান ছিল। মূলত পাহাড়ি ঢল, নদী ভেঙে যাওয়া ও টানা বৃষ্টির কারণে বিপর্যয় হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শে ওই এলাকার বন্যা ও পানি প্রবাহের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই ব্রিজ-কালভার্টের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
এদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়ক দিয়ে গতকাল বুধবারও যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। পানি কমতে শুরু করলেও চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার বিভিন্ন এলাকার সড়কে হাঁটু থেকে কোমর পানিতে ডুবে ছিল। পানিতে হেঁটে কিংবা নৌকা-ভ্যানগাড়িতে লোকজনকে সড়ক পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।