কাফনের কাপড়ে আজ থেকে মাঠে নামছেন শিক্ষকরা

Slider শিক্ষা

জাতীয়করণের দাবিতে আজ মঙ্গলবার থেকে মাথায় কাফনের কাপড় পড়ে মাঠে নামছেন শিক্ষকরা। গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত শিক্ষকদের দাবি আদায়ে সুস্পষ্ট কোনো ঘোষণা না আসায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। উল্লেখ্য গত সোমবার ২১তম দিনের অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) ব্যানারে এ আন্দোলন চলছে।

গতকাল রাতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ নয়া দিগন্তকে জানান, আমাদের দাবি আদায় কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কোনো ঘোষণা না আসায় মঙ্গলবার থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে মাথায় কাফনের কাপড় পড়ে শিক্ষকরা রাজপথে থাকবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা শিক্ষকরা মাঠে থাকব। এর আগে গত ১১ জুলাই থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন শিক্ষকরা। আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি দফায় দফায় ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানালেও শিক্ষকরা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

গতকাল সোমবারের অবস্থান কর্মসূচিতে রাখা বক্তব্যে বিটিএর সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের সুস্পষ্ট ঘোষণা বা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ ছাড়া আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ না পাবো ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তিনি আরো বলেন, জাতীয়করণের বিষয়টি যাচাই বাছাইয়ে দু’টি কমিটি গঠনের কথা থাকলেও এখনো তা গঠন করা হয়নি। শিক্ষা প্রশাসন শুধু সিদ্ধান্তের কথা জানাচ্ছে। গ্রীষ্মের ছুটি শীতে নিয়ে ও কমিটি গঠনের কথা বলে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরাতে চাচ্ছেন। শিক্ষামন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি ছুটি বাতিল করে আপনারা শুধু শিক্ষকদের ক্ষতিগ্রস্ত করেননি, আপনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জিম্মি করেছেন।
এ দিকে শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবি আদায়ে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন ও আদর্শ শিক্ষক পরিষদের নেতৃবৃন্দ। তারা জানিয়েছেন, দেশজুুড়ে শিক্ষকদের আন্দোলনে যুক্ত করতে এবং আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রচারপত্র বিলি, ব্যানার ফেস্টুন ও সভা সেমিনারের আয়োজন অব্যাহত রাখবেন। একই সাথে জেলা মহানগর ও রাজধানীতেও পৃথক পৃথকভাবে সাংবাদিক সম্মেলনে করে সরকারের নিকট শিক্ষকদের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবি তুলে ধরার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রী মন্তব্য করেছেন শিক্ষকদের আন্দোলনে বাইরের উসকানি আছে। আমরা ব্যর্থহীন ভাষায় বলছি শিক্ষামন্ত্রী বাইরের কোনো উসকানিতে নয় বরং আপনার উসকানিতেই শিক্ষকরা আরো বেশি বিক্ষুব্ধ, আরো বেশি আহত।

আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। একই কারিকুলামে একই সিলেবাসে পাঠদান করিয়েও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধানদের থেকে এক ধাপ নিচে বেতন দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। তা ছাড়া বিগত কয়েক বছর ধরে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত চার শতাংশ কেটে নেয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করা হলেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষকরা আরো জানান, বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট করতে প্রয়োজন স্মার্ট শিক্ষক। তাই স্মার্ট শিক্ষক পেতে শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের বিকল্প নেই। শিক্ষকরা আরো বলছেন, একবারে না হলেও তারা ধাপে ধাপে জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরকারিকরণ চাচ্ছেন। তারা সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা চান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় সরকারি কোষাগারে নিয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণে খুব বেশি অর্থ ব্যয় হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *