বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি থেকে আটকের পর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে মধ্যাহ্নভোজ করিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশিদ। অন্যদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানকে আটকের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে খাবার, ফল ও জুস পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত ভিসানীতি থেকে রক্ষা পেতে এসব করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যারা সমালোচক আছেন, যারা একটু হিউমার করে কথা বলেন- এটা ভিসানীতির একটি পরিণতি। নিজেদের রক্ষা করার জন্য, নিজেদের একটু নিরাপদে রাখার জন্য-এই ধরনের নাটক তারা সাজিয়েছে। এই বিষয়টি থেকে প্রমাণিত হয় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের গণতন্ত্র দল এবং দলীয় রাজনীতি- এটা তার প্রমাণ করার প্রয়োজন রাখে না। তিনি তার সারা রাজনৈতিক জীবনে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে রাজনীতি করেছেন বড় হয়েছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একইভাবে আমানউল্লাহ আমানকে প্রমাণ করতে হবে না তিনি রাজনীতির প্রতি, দলের প্রতি এবং দেশের মানুষের প্রতি তার কমিটমেন্টের প্রতি তার ঘাটতি আছে। কারণ, তিনি ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের নায়ক ছিলেন এবং একজন জনপ্রিয় নেতা; তা তিনি প্রমাণ করেছেন পরপর চারবার এমপি নির্বাচিত হয়ে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছে বিএনপি আবারও ২০১৩ ও ২০১৪ সালের মতো অগ্নি-সন্ত্রাস শুরু করেছে- এর জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা তারা তাদের লোকজন দিয়ে করে। সরকারি লোকেরা, এজেন্সির লোকেরা, এমনকি আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা তারা এই ঘটনাগুলো ঘটিয়ে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে পুলিশের সাহায্যে ভিডিও করে তারা আবার মোটরসাইকেলে করে পুলিশের সামনে দিয়ে চলে যায়, অগ্নিদগ্ধ গাড়ির চালকও বলেছে। যারা প্রত্যক্ষদর্শী তারাও একই কথা বলেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা স্পষ্ট সরকারের পরিকল্পিত প্লট তৈরি করা, নাটক তৈরি করা পুরো বিষয়টি। এগুলো মানুষ এখন নেয়নি (ভালোভাবে)। মানুষ বুঝে গেছে তারা (সরকার) তাদের রক্ষার জন্য নাটক সাজাচ্ছে। এর আগেও অনেক ঘটনা ঘটেছে। এগুলো জনগণ ও আমরা গুরুত্ব দেই না।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় দেখবেন। আল জাজিরায় খুব পরিষ্কার করে তারা বলেছে, বাংলাদেশের জনগণ যখন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করছে, একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের জন্য সংগ্রাম করছে, তখন তাকে দমন ক্ষমতাসীন সরকার তারা আগের চেহারায় ফিরে গেছে। তারা পুলিশ ও ক্যাডার বাহিনী দিয়ে অত্যাচার নির্যাতন করে আন্দোলনকারীদের রুখে দিতে চায়। কিন্তু ইতিহাস বলে সেটা রক্ষা করা সম্ভব নয়।’
এ সময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এর আগেও ডিবি অফিসে নিয়ে গেছে, নির্যাতন করেছে। আমাকে ও মির্জা আব্বাসকে নিয়ে গিয়েছিল বেশি দিন হয়নি। তখন প্রায় ৪৫০ নেতাকর্মীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তখন তো আমাদের সুস্বাদু আম খাওয়ানো হয়নি। এখন খাওয়ানো হচ্ছে ভিসানীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।’
আগামী সোমবার নতুন ঘোষিত কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আজ রাজধানীতে যে নিপীড়ন-নির্যাতন করা হয়েছে, তার প্রতিবাদে আগামী পড়শু ৩১ জুলাই সারাদেশে সব জেলা ও মহানগর সদরে জনসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করছি। আমরা আগামীকাল রোববারই প্রতিবাদে কর্মসূচির কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি সরকারি দল রাজপথে কর্মসূচি দিয়েছে। আমরা তাই তাদের মতো একই দিনে কর্মসূচি না দিয়ে সঙ্কট সৃষ্টি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশাকরি ঘোষিত শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে কোনো বাধা হবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন অহিংস থাকবে- এটা আমরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরিষ্কার করে বলেছি। আমরা সহিংসতার মধ্য দিয়ে আন্দোলন করি না এবং আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করি। আমাদের এক দফা দাবি জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আদায় করব আমরা। এক দফার কর্মসূচি দুই- এক দিনের মধ্যে জানতে পারবেন।’