ভারতীয় ক্রিকেটাররা ভীষণভাবে পরিচিত তাদের ঝকঝকে জীবনযাত্রার জন্য। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড হলো ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। ভারতের ক্রিকেটারদেরই পারিশ্রমিকের অঙ্ক সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও রয়েছে তাদের একাধিক ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্ট। বাড়ি থেকে গাড়ি, সবেতেই তারা এগিয়ে। অনেকেই মনে করেন যে শচিন টেন্ডুলকার এবং এমএস ধোনিই সবচেয়ে দামি বাড়িতে থাকেন। কারণ তাদের বাসস্থান একরের পর একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। ঘটনাচক্রে এই দুই কিংবদন্তির একজনও সবচেয়ে দামি বাড়ির মালিক নন। এমনকি নামটা রোহিত শর্মাও নয়। তাহলে কে? উত্তরটা বিরাট কোহলি। এত দামি বাড়িতে দেশের আর কোনো ক্রিকেটারই থাকেন না।
বিরাট ও অনুষ্কার গুরগ্রামে রয়েছে একটি ১০ হাজার স্কোয়ার ফিটের বাংলো। লোকেশন সি ব্লক, ডিএলএফ ফেজ ওয়ান। একজন মানুষের যা যা সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন, তার সবই রয়েছে এই বাংলোয়। ঝুলন্ত সুইমিং পুল থেকে জিমন্যাশিয়ামও রয়েছে। ঘরের মার্বেল ফ্লোরিং ও গ্লাস ডেকর আলাদা করে নজর কাড়ে। বিরাট-অনুষ্কার বাড়ির বারটিও অসাধারণ। বিশ্বের তাবড় ব্র্যান্ডের লিকার রয়েছে সেখানে। লাক্সারির সেরা সংজ্ঞা বিরাটের এই বাংলো। মুম্বইতে শচিনের বাংলোর দাম ৩৫ কোটি রুপি, ধোনির রাঁচির ফার্মহাউসের দাম ৬ কোটি রুপি। অন্যদিকে যুবরাজ সিংয়ের সমুদ্রমুখী অ্যাপার্টমেন্টের দাম ৬৪ কোটি রুপি। এখন প্রশ্ন, বিরাটের বাড়ির দাম কত? বিরাটের বাড়ির দাম ৮০ কোটি রুপি।
এই মুহূর্তে বিরুষ্কা ছোট্ট ভামিকাকে নিয়ে থাকেন ওরলির ওমকার ১৯৭৩ অ্যাপার্টমেন্টের ৩৬ তলায়। ৭০০০ স্কোয়ারফিটের ফ্ল্যাটে রয়েছে চারটি বেডরুম। টেরেস গার্ডেন ও ব্যক্তিগত জিম ছাড়াও রয়েছে স্টেট-অফ-দ্য আর্ট অ্যামেনিটিস। লকডাউনের ১০ মাস সময় বিরুষ্কা এখানেই সময় কাটিয়েছেন। তবে এবার আর কোটি কোটি টাকা দিয়ে ভাড়ার ফ্ল্যাটে থাকবেন না তারা। থাকবেন স্বপ্নের বাড়িতে। ওরলি থেকে সড়ক পথে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা দূরে আলিবাগ। মহারাষ্ট্রের এই উপকূলবর্তী শহরেই তৈরি হচ্ছে বিরাটের লাক্সারি ভিলা। গত জানুয়ারিতেই বিরাট সে ব্য়াপারে জানিয়ে ছিলেন। লাক্সারি ওয়েলনেস লাইফস্টাইল কোম্পানি আভাস ওয়েলনেস। তাদের কাঁধেই গুরুদায়িত্ব পড়েছে বিরাটের স্বপ্নের বাড়ি বানানোর। রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিটি তৈরি হচ্ছে সেখানে জোর কদমে।
শচিনের পর ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ব্যাটিং সুপারস্টারে বিরাট। তিনি নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন গগনচুম্বী উচ্চতায়। সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। জনপ্রিয়তার নিরিখে বিশ্বের প্রথমসারির অ্যাথলিটদের মধ্যে বাইশ গজের ‘কিং’। সোশ্যাল মিডিয়ায় ২৫২ মিলিয়ন মানুষ ফলো করেন কোহলিকে। স্টক গ্রো সম্প্রতি কোহলির মোট সম্পত্তির পরিমাণের রিপোর্ট নিয়ে এসেছে সামনে। যা দেখে বোঝা যাচ্ছে টাকার সিংহাসনেই অধিষ্ঠিত ‘রাজা’! তাঁর সম্পত্তির অঙ্ক মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতোই।
কোহলি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের ‘এ প্লাস’ ক্যাটেগরির ক্রিকেটার। রোহিত শর্মা, জসপ্রীত বুমরা ও রবীন্দ্র জাদেজার সাথেই কোহলি বার্ষিক ৭ কোটি রুপি উপার্জন করেন বিসিসিআই থেকে। টেস্টপিছু কোহলি ম্যাচ-ফি পান ১৫ লাখ রুপি। পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে সেই অঙ্কটা ছয় লাখ রুটি ও দেশের জার্সিতে টি-২০ ম্যাচ খেলে তিনি পান তিন লাখ রুপি। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের আইকন তিনি। আইপিএলের ১৪ ম্যাচের জন্য তার আরসিবি-র সঙ্গে চুক্তি ১৫ কোটি রুপির। ব্ল্যু ট্রাইব, ইউনিভার্সাল স্পোর্টসবিজ, এমপিএল ও স্পোর্টস কনভোর মতো সাতটি স্টার্ট-আপ ব্র্যান্ডকে এনডোর্স করেন কোহলি। তার মোট ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্টের সংখ্যা ১৮টি। প্রতিটি বিজ্ঞাপন শ্যুট করার জন্য বার্ষিক সাড়ে সাত থেকে দশ কোটি টাকা নিয়ে থাকেন তিনি। বলিউড ও স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রি মিলিয়ে এত টাকা আর কোনো সেলেব চার্জ করেন না। ব্র্যান্ড এনডোর্স করেই কোহলির পকেটে ঢোকে ১৭৫ কোটি রুপি।
এবার আসা যাক সোশ্যাল মিডিয়ায়। ইনস্টাগ্রামে কোহলি বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত পোস্ট করার জন্য ৮.৯০ কোটি রুপি নিয়ে থাকেন। ট্যুইটারের ক্ষেত্রে ২,৫ কোটি টাকা। কোহলির মুম্বই (৩৪ কোটি রুপি) ও গুরুগ্রামে (৮০ কোটি রুপি) দু’টি প্রাসাদোপম বাড়ি রয়েছে। ৩১ কোটি রুপির গাড়িই আছে তার। এসব বাদ দিলেও কোহলি আরো কিছু গল্প রয়েছে। তিনি এফসি গোয়া ফুটবল ক্লাবের অন্যতম মালিক। টেনিস টিম ও প্রো-রেস্টলিং টিমও আছে কোহলির। কোহলি রেস্তোরাঁ ব্যাবসাও চালিয়ে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে কোহলির মোট সম্পত্তির পরিমাণ এক হাজার ৫০ কোটি রুপি। কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার এত টাকা উপার্জন করেন না।
সূত্র : জি নিউজ