বিএনপি ও সমমনা ৩৭ দলের পর এবার কেয়ারটেকার সরকারের দাবিসহ দলীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে রাজপথের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির এক সময়ের জোটসঙ্গী জামায়াত আজ সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন করে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে।
দলের পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ২৮ জুলাই সকল মহানগরীতে এবং ৩০ জুলাই সকল জেলা সদরে শান্তিপূর্ণ মিছিল এবং ১ আগস্ট ঢাকা মহানগরীতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ।
দেশের চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণের নির্বাচিত সরকার ব্যতীত সমস্যার সমাধান হতে পারে না। তাই সর্বাগ্রে সংসদ ভেঙে দিয়ে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। অবিলম্বে জামায়াতের আমিরসহ গ্রেপ্তারকৃত সকল নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি দিতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। জামায়াতে ইসলামীকে তার সাংবিধানিক অধিকার মিছিল ও সভা-সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করার সুযোগ দিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমল ও তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির। এ সময় গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এই উপনির্বাচনে সরকারের আচরণ প্রমাণ করেছে- এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে পারে না। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য জাতিকে হতাশ করেছে। জামায়াতে ইসলামী বারবার বলে আসছে কেয়ারটেকার সরকার ব্যতীত জনগণ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিজেদের পছন্দমতো প্রার্থী নির্বাচিত করতে পারবে না।
আমির মুজিবুর রহমান আরও বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রী ও এমপিগণ সংবিধানের দোহাই দিয়ে মূলত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে একটি প্রহসনের নির্বাচনের কথাই বারবার ঘোষণা করছেন। তারা আরও বলছেন যে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলেই হবে, অংশগ্রহণমূলক না হলেও চলবে। এ সব কথার দ্বারা তারা এক তরফা নির্বাচনের ষড়যন্ত্রের কথাই ব্যক্ত করছেন। জনগণ সরকারের এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হতে দেবে না।’
রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে উল্লেখ করে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির বলেন, সিলেট মহানগরীতে জামায়াতের সমাবেশ ঠেকানোর জন্য ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাড়িতে বাড়িতে হানা, ১৭ জুলাই গুলশানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ওপর হামলা, ২২ জুলাই কুয়াকাটা থেকে জামায়াতের ১১ জন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
একই সঙ্গে ১৮ ও ১৯ জুলাই বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা, বাধা দান ও মামলা দায়ের এবং জামায়াতকে সমাবেশ করতে না দেওয়া পুলিশি ঘোষণায় স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে যে, রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রজাতন্ত্রের সেবক হিসেবে ভূমিকা রাখার পরিবর্তে আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ব্যস্ত বলে মনে করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তিনি বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনো দলের হয়ে কাজ না করে তাদেরকে নিরপেক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আ.রহমান মুসা, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড.মুহাম্মদ রেজাউল করিম, ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলাম।