ঢাকাই সিনোমর জনপ্রিয় পরিচালক, প্রযোজক ও নায়ক সোহেল রানা। এক সময়ের দাপুটে অভিনেতাদের একজন তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য ব্যবসা সফল সিনেমা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি। পেয়েছেন মানুষের ভালোবাসাও। সম্প্রতি এই অভিনেতা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তার ক্ষোভের কথা।
কিংবদন্তি এই অভিনেতার কথায়, ‘আমি দেশের জনগণের প্রিয় এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নায়কদের একজন, বিমানবন্দরে গেলে আমাকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বাইরে থাকলে অনেক সাধারণ মানুষই আছে, যারা দেখার মধ্যে ভদ্রতাটুকু বজায় রাখতে পারে না, গায়ের ওপরে এসে পড়ে। আমাদেরকে সেটাই সহ্য করতে হয়। আমরা ভিআইপি না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, বহুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা, এমনকি আজীবন সম্মাননাও পেয়েছি। তবুও আমি ভিআইপি না।’
সোহেল রানা আরও বলেন, ‘আমাকে তো মূল্যায়ন করা হয়নি! তারা মূল্যায়ন করে শুধু একদিন। তারপর আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। সেই পুরস্কার কি আমি কাঁধে নিয়ে বেড়াব? সেটা নিয়ে তো মিনিস্টারের সঙ্গেও দেখা করতে পারব না। সেখানে যেতে হলে অনেক অনুমতি নিয়ে তারপর যেতে হবে। তাহলে সেই পুরস্কারের মূল্যায়নটা কি রইল?’
বর্তমানে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে যারা কাজ করছে তাদের বেশির ভাগই অকাজ করছে জানিয়ে বরেণ্য এই অভিনেতা বলেন, ‘এখন যারা কাজ করছে, তারা কাজের চেয়ে অকাজই বেশি করছে। আমার দেখা মতে তো ভালো কিছু দেখছি না। দু’চারটা ছেলে যারা কাজ করছে তারা বাবার টাকায় কাজ করছে।’
কাজের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যাদেরকে সরকার থেকে টাকা দেওয়া হচ্ছে, আপনারা সেই তালিকাটা বের করে দেখেন; তারা ক’জন চলচ্চিত্র জগতের লোক। তারা সিনেমা সম্পর্কে কি জানে। তাদেরকে বাংলাদেশের টাকা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু কেন? চলচ্চিত্র জগতের কোন কমিটি দিচ্ছে? তারা কি আমাদেরকে চোখে দেখে না, আমাদেরকে কাজ দিতে পারে না?’
কিংবদন্তি এই অভিনেতা আরও বলেন, ‘আমি যদি বলি যে টাকা তাদেরকে দেওয়া হয়, সেই টাকা আমি তাদেরকে দেব, তারা সিনেমাটি বানিয়ে দেখাক। যে ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়, এই টাকায় কি সিনেমা হয়? বাকি টাকা তাদের নিজেদের পকেট থেকে ভরতে হয়। তাকে যখন ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়, তখন সে ওই ধরনের একটা গান সেট করে বা চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। তা না হলে তো টাকাও উঠবে না, মানুষও দেখবে না। আর এরকম ছিটিয়ে ছিটিয়ে কাক ডাকিয়ে লাভ কি?’
বর্তমানে অভিনয় না করার বিষয়ে সোহেল রানা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ সমিতির প্রযোজক সমিতিতে ছিলাম পাঁচ বছর। আমরা কয়েকজন মিলে বাংলাদেশ শিল্পী সমিতি তৈরি করেছি। বাংলাদেশ পরিচালক সমিতি তৈরি করার সময়ও ছিলাম দুই বছর। এই কথাগুলো শুধু এখন না, তখনও বলেছি। চিৎকার করতে করতে আমার গলা ভেঙে গেছে, তবুও কেউ শোনেনি। না শোনার কারণে আমাদের মতো যে শিল্পীরা আছেন বা আমাকে যদি শিল্পী ভাবেন আপনারা, তাহলে আমি আজকে ছয়-সাত বছর ধরে অভিনয়ে যাচ্ছি না কেন? এর উত্তর পেয়ে যাবেন।’