শেষ ওভারে ৩ রান দরকার ছিল ভারতের, আর বাংলাদেশের চাই ১ উইকেট। বোলিংয়ে বাংলাদেশের পেসার মারুফা আক্তার। তার করা প্রথম বলেই সিঙ্গেল আদায় করে নিলেন ভারতের শেষ ব্যাটার মেঘনা সিং। স্ট্রাইকে তখন সেট ব্যাটার জেমিমা রদ্রিগেজ। দ্বিতীয় বলেও দৌড়ে ১ রান নিল ভারত। আর মাত্র ১ রান করলেই যখন ভারতের জয় নিশ্চিত, তখনই মারুফার আঘাত। দুর্দান্ত এক বলে মেঘনাকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করলেন তিনি। কোনো পক্ষই জিতল না ম্যাচ। এই ম্যাচ ‘টাই’ হওয়ায় সিরিজও এককভাবে পেল না কোনো দল। প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশ জেতার পর দ্বিতীয় ম্যাচে জয় পায় ভারত। তৃতীয় ম্যাচ ‘টাই’ হওয়ায় সিরিজও ড্র হলো ১-১ ব্যবধানে।
প্রথমে ব্যাট করে ২২৫ রান করে বাংলাদেশ। ২২৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ভারতের শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি। ৩২ রানেই হারায় শেফালি ভার্মা ও যশতিকা ভাটিয়ার উইকেট। শেফালিকে পেসার মারুফা আক্তার ফেরানোর পর যশতিকাকে ফেরান অফ স্পিনার সুলতানা খাতুন। তৃতীয় উইকেটে ঘুরে দাঁড়ায় দলটি। ১০৭ রানের জুটি গড়েন স্মৃতি মান্ধানা এবং হারলিন দেওল।
১৩৯ রানের মাথায় মান্ধানার (৫৯) বিদায়ের পর দলটি চতুর্থ উইকেট হারায় ১৬০ রানে। অধিনায়ক হারমানপ্রিত কৌরকে ফিরিয়ে দেন নাহিদা আকতার। তবে ততক্ষণে জয়ের গন্ধ পেয়ে গেছে ভারত। পঞ্চম উইকেটে জেমিমা রদ্রিগেজকে নিয়ে ৩১ রানের জুটি গড়েন হারলিন। এর মধ্যে ১৭৩ রানের পর বৃষ্টির জন্য কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ ছিল। ১৯১ ও ১৯২ রানের মাথায় পরপর দুই উইকেট হারায় ভারত। দুজনই রান আউটে কাঁটা পড়েন।
শেষ ৪৮ বলে ভারতের দরকার ছিল ৩২ রান। আমানজৌত করকে নিয়ে জয়ের পথেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন জেমিমা রদ্রিগেজ। তবে ৪৭তম ওভারের শেষ বল থেকেই শুরু হয় নাটক। ওই বলে আমানজৌতকে ফিরিয়ে দেন রাবেয়া খাতুন। ১৮ বলে ভারতের প্রয়োজন ১০ রান, বাংলাদেশের প্রয়োজন ৩ উইকেট। ৪৮তম ওভারে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচ বাংলাদেশের পক্ষে নিয়ে আসেন নাহিদা আকতার। আর শেষ ওভারে ৩ রান দরকার হওয়া ম্যাচে ২ রান করতে পারে ভারত। ম্যাচের স্কোর যখন সমান তখনই আঘাত হানেন মারুফা। মেঘনা সিংকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন তিনি। জেমিমা অপরাজিত থাকেন ৩২ রানে।
এর আগে, টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু করে বাংলাদেশ। ফারজানা হক এবং শামীমা সুলতানার ওপেনিং জুটিতেই আসে ৯৩ রান। তবে সেটি ছিল বেশ শ্লথ গতির। ২৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে এই রানের মাথায় বিদায় নেন শামীমা। ৭৮ বলে ৫ চারের সাহায্যে ৫২ রান করে বিদায় নেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতিকে নিয়ে ৭১ রানের জুটি গড়েন ফারজানা। ১৬৪ রানের মাথায় ২৪ রান করে বিদায় নেন জ্যোতি। বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি রিতু মনিও। ১৬৯ রানের মাথায় তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে আবারও বড় জুটি গড়ে বাংলাদেশ। নির্ধারিত ৫০ ওভারের শেষ বলে ফারজানা রান আউট হওয়ার আগে এই জুটি থেকে আসে ৫৬ রান। তাতে বাংলাদেশ ৪ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে ২২৫ রান। এরই মধ্যে ইতিহাস গড়ে ফেলেন ফারজানা। প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে করেন সেঞ্চুরি (১০৭ রান)। শেষদিকে ২২ বলে সোবহানা মোস্তারির ২৩ রানও ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৪০ রানে জয় পেয়েছিল বাংলার বাঘিনীরা। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে ভারত জিতে ১০৮ রানের ব্যবধানে। তৃতীয় ম্যাচটি তাই পরিণত হয়েছিল অঘোষিত ফাইনালে।