জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির কারণে এক মাস আগেই শেষ হচ্ছে চলতি বছরের শিক্ষাকার্যক্রম। নিয়মমতো প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে শেষ হয় শিক্ষার অ্যাকাডেমিক বছর। কিন্তু এবার এক মাস আগেই অর্থাৎ নভেম্বর মাসেই শেষ হচ্ছে শিক্ষাবর্ষ। ইতোমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আগামী নভেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করে এই ছুটি আগামী ডিসেম্বর মাসে শীতকালীন ছুটির সাথে সমন্বয় করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এই ছুটি বাতিলের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। একই সাথে পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণের জন্যও সময় এগিয়ে আনার টার্গেট নির্ধারণ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষে কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এই নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নির্বাচনের কেন্দ্র হিসেবে আগেভাগেই প্রস্তুত করতে হবে। এ জন্য নির্বাচনের ওই সময়টাতে যাতে শিক্ষাকার্যক্রমের কোনোরূপ ব্যঘাত না ঘটে সেজন্য নভেম্বর মাসের মধ্যেই শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সব কাজ শেষ করতে চায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। আর সেজন্যই শিক্ষাবর্ষের শুরুতে প্রস্তুত করা রুটিনে গ্রীষ্মকালীন ছুটি ২০ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত নির্ধারিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করা হয়েছে। বলা হচ্ছে এই ছুটি ডিসেম্বর মাসে শীতাকালীন ছুটির সাথে সমন্বয় করা হবে।
অন্য দিকে মাউশি থেকে দেয়া এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চলতি বছরে মাধ্যমিক স্কুলগুলো বার্ষিক পরীক্ষা ও নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হবে। নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই ৩০ নভেম্বরের মধ্যে চলতি শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শেষ করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, নির্বাচনী বছর হওয়ার কারণে চলতি বছর আগে ভাগেই শিক্ষাকার্যক্রম শেষ করা হবে। এরই অংশ হিসেবে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর মূল্যায়ন ও অন্যান্য শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হবে। একই সাথে বার্ষিক পরীক্ষা এগিয়ে আসায় শিক্ষার্থীদের গ্রীষ্মের ছুটিও বাতিল করা হয়েছে, যা শীতের ছুটির সাথে সমন্বয় করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলতি বছরের গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল এবং ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পাঠদান ও মূল্যায়ন/পরীক্ষা কার্যক্রম সমাপ্তকরণের নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। ওয়েবসাইটে বিভাগের প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপসচিব সাইফুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
অন্য দিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এনসিটিবি সূত্র বলছে নির্বাচনের সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই পাঠানো সম্ভব হবে না। যেকোনো ঝুঁকি এড়াতে অক্টোবরের মধ্যেই সব স্কুলে বিনামূল্যের পাঠ্যবই পাঠাতে চাইলে এনসিটিবিকে বই ছাপার কাজ শুরু করতে বিলম্বের সুযোগ নেই। তাই নির্বাচনী বছর হওয়ায় এবার দুই মাস আগেই সব শ্রেণীর বই ছাপানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে এনসিটিবি। আগামী শিক্ষাবর্ষের নতুন পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। নির্বাচনের সময় স্কুলগুলো ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া এই সময় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পোস্টার ছাপাতে ছাপাখানাগুলো ব্যস্ত থাকে। তাই আগেভাগেই নতুন বই ছাপানোর কাজ শেষ করতে চায় এনসিটিবি।
এনসিটিবির উৎপাদন নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো: সাইদুর রহমান নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে জানান, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বই ছাপার কাজ শুরুর প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। এখন দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর বই ছাপার জন্য মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি চলতি জুলাই মাসেই সম্পন্ন হবে। তিনি আরো জানান, এ বছর নির্বাচনী বছর। তাই এনসিটিবিও আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে যাতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর এক-দুই মাস আগেই পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ শেষ করা যায়। সেভাবেই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে এনসিটিবি।